মাটিরাঙ্গায় ফেলনা কাঠ দিয়ে তৈরি হচ্ছে ফ্লাইউড
অর্থনীতিতে রাখতে পারে অবদান
খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গায় ফেলনা বা অপ্রয়োজনীয় কাঠকে শিল্পে ব্যবহারযোগ্য কাঁচামালে রুপান্তর করা হচ্ছে। এতে করে পাহাড়ে রপ্তানিমুখী শিল্প মোড়কের কাঁচামাল তৈরির একটি নতুন সম্ভাবনা তৈরি করেছে।
তুলা, উদাল, কদম, ডুমুর গাছের মতো অপ্রচলিত ও সাধারণ ভাবে ব্যবহৃত না হওয়া গাছ থেকে ফার্নিচার শিল্পের জন্য ভিনিয়ার বা ফ্লাই উড তৈরি হচ্ছে। এই প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত গাছগুলোতে প্রচুর পরিমাণে কাঠ পাওয়া যায়, যেগুলো সাধারণত আসবাবপত্র তৈরিতে ব্যবহৃত হয় না যা অনেক ক্ষেত্রে ফেলনা হিসেবেই থেকে যায়। সেসব কাঠ জালানি হিসেবেও ব্যবহারের অযোগ্য। তবে সেগুলোকে ব্যবহার করে এখন রপ্তানি মানের পণ্য উৎপাদন করা হচ্ছে, যা পাহাড়ে এবং দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।
পার্বত্য চট্টগ্রাম নাগরিক পরিষদ এর মাটিরাঙ্গা পৌরসভার সভাপতি মো. জালাল আহাম্মদ মাটিরাঙ্গার ৪নং ওয়ার্ড লাতু লিডার পাড়া এলাকায় নিজ জমিতে গড়ে তুলেছেন মেসার্স জালাল ফ্লাই উড প্রসেসিং কারখানা। কাঠ চিরাই করা একটি বড় মেশিন ও একটি কাটার দিয়ে চলছে ফ্লাই উড চিরাই ও প্রসেসিং। চিরাই করা কাঠ সারাদিন রোদে শুকাতে হয়। শুকনো কাঠ বিক্রির জন্য প্রক্রিয়াজাত করতে সারি সারি করে সাজিয়ে রাখা হয়।
অব্যবহ্রত কাঠের ছোট ছোট টুকরো গুলো রোদে শুকিয়ে জালানি হিসেবে বিক্রি করা অর্থ একটি মসজিদের দান বাক্সে রেখে দেন জালাল আহাম্মদ বাক্স পুরো হয়ে গেলে দুটি মসজিদে ভাগ করে দিয়ে দেন তিনি। সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকেই এটা করে থাকেন বলে তিনি জানান।
এদিকে এই কাজে যুক্ত হয়ে ফেলনা কাঠকে মূল্যবান পণ্য হিসেবে পরিণত করা হচ্ছে। যা পরিবেশ বান্ধব তাছাড়া এ উদ্যোগ শুধু স্থানীয় বনজ সম্পদকে কাজে লাগাচ্ছে না, বরং কর্মসংস্থানও সৃষ্টি করছে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। ২০১৮ সালে কারখানাটি প্রথম চালু হলেও নানা কারনে সেটি বন্ধ ছিল। জালাল আহাম্মদ তা পুনরায় চালু করেন। এছাড়া এ কারখানায় প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে নারী শ্রমিকসহ অত্র এলাকার শতাধিক লেকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। অত্র জেলায় পানছড়ি, দীঘিনালায় অপর দুটি ফ্লাই বোর্ডের কারখানা রয়েছে।

জালাল আহাম্মদ বলেন, যে গাছগুলো দ্রুত পঁচনশীল আমরা সেগুলো দিয়ে ফ্লাই বোর্ড তৈরি করি। অটোবি, আরএফএল, ঢাকা বেঙ্গল, পারটেক্স এসব কোম্পানি তাদের ফার্নিচার শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে এসব কিনে নিয়ে যায়। প্রতি সিএফটি ফ্লাই বোর্ড মান ভেদে ৪টাকা বিক্রি করা হয়। খরচ হয়৩.৮০ টাকা। মাসে গড়ে ২০ হাজার সিএফটি ফ্লাই বোর্ড প্রসেসিং করা হয়। ১ ইঞ্চি ফ্লাই বোর্ড ১১ পাতা হয়। মাসে আয় হয় ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা। শীঘ্রই নিজস্ব কারখানায় এসব অব্যবহ্রত কাঠ দিয়ে বিভিন্ন জিনিসপত্র বানানোর কাজ শুরু করবেন বলে তিনি জানান।
ফ্লাই উডের শ্রমিক সোহাগ জানান, বহুদিন ধরে আমি এই ফেক্টরীতে কাজ করে আসছি। দৈনিক সাড়ে ৫শত টাকা মজুরি পাই তা দিয়ে চলে যায় সংসার। অন্য স্থানে প্রতিদিন কাজ থাকে না বিধায় কষ্টে দিন যাপন করতে হয়। ফ্লাই উড কারখানায় দৈনিক কাজ থাকে বিধায় এখানেই পড়ে আছি।
তমল ত্রিপুরা বলেন, আমি ফ্লাই উড তৈরিতে মুল ভুমিকা পালন করি বিধায় আমার দৈনিক মজুরি ৮শত টাকা। আমিও দীর্ঘদিন এখানে কাজ করে যাচ্ছি। কাজ করেই খাই তাই কাজকে ছোট করি না। পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ ভাল আছি।
ফেলনা কাঠ দিয়ে ফ্লাইউড তৈরি করার বিষয়টি পরিবেশ সংরক্ষণ ও কাঠের কার্যকর ব্যবহারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ জানিয়ে মাটিরাঙ্গা রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান লস্কর বলেন, এই প্রক্রিয়ায় কাঠের অপচয় রোধ করা সম্ভব এবং একই সঙ্গে বনাঞ্চলের উপর চাপ কমানো যায়। আমরা চাই, কাঠের প্রতিটি অংশ যেন কাজে লাগে এবং কোনোটাই ফেলনা না যায়। এছাড়া, এই উদ্যোগ স্থানীয় শিল্প ও কর্মসংস্থানের সুযোগও বৃদ্ধি করবে। পরিবেশের ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য এটি একটি টেকসই সমাধান।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মনজুর আলম বলেন, শ্রমিকরা ফ্লাই উড তৈরির জন্য ভারী কাজ করে, যা কাঠ কাটা, প্রক্রিয়াজাত করা, স্তর তৈরি করা এবং পণ্য তৈরি পর্যন্ত বিস্তৃত হতে পারে। তবে কর্মপরিবেশ, শ্রমিকের সুরক্ষার বিষয় টি মালিক পক্ষ কে মনে রাখতে হবে।