লামায় পাহাড়িদের জমি জবরদখল ও ঝিরিতে বিষ প্রয়োগের প্রতিবাদ

খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ

purabi burmese market

বান্দরবানের লামায় রাবার কোম্পানি কর্তৃক ম্রো ও ত্রিপুরাদের জমি জবরদখলসহ পানির উৎস ঝিরিতে বিষ প্রয়োগের প্রতিবাদে খাগড়াছড়ি শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে শিক্ষার্থীরা।

আজ বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২) সকালে খাগড়াছড়ি সদরস্থ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র/ছাত্রীবৃন্দ’ ব্যানারে এ বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হয়। মিছিলটি সকাল ১০টায় খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজ গেইট থেকে শুরু হয়ে প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে মুক্তমঞ্চে গিয়ে প্রতিবাদ সমাবেশে মিলিত হয়।

এসময় বিক্ষোভকারীরা বিভিন্ন দাবি ও ভূমি বেদখল বিরোধী শ্লোগান লেখা প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। বিক্ষোভে খাগড়াছড়ি সদরের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন।

বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশে অনুমং মারমার সভাপতিত্বে ও উথোইচিং মারমার সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্ট কাউন্সিলের খাগড়াছড়ি জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক সীমা মারমা, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজে শিক্ষার্থী বাহাদুর ত্রিপুরা, সোহাগী চাকমা, স্নাজাইন মারমা, খাগড়াছড়ি সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী শিউলী খীসা প্রমুখ।

সমাবেশ বক্তারা বলেন, গত মঙ্গলবার (৬ সেপ্টেম্বর) লামায় সরইয়ে ম্রো জাতিসত্তাদের মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের লোকজন ম্রোদের খাবার পানির উৎস ঝিরির পানিতে বিষ প্রয়োগ করে। লামা সরইয়ে তিনটি পাহাড়ি পাড়া লাংকম ম্রো পাড়া, রেংয়েন ম্রো পাড়া ও জয়চন্দ্র ত্রিপুরা পাড়ায় ৩৯টি পাহাড়ি পরিবার দীর্ঘদিন যাবৎ বসবাস করে আসছে, সেখানে বাস করার অধিকার তাদের রয়েছে। কিন্তু সেখান থেকে তাদেরকে উচ্ছেদ করতে এত ষড়যন্ত্র কেন?

dhaka tribune ad2

ভূমিদস্যু লামা রাবার ইন্ড্রাস্ট্রিজের লেলিয়ে দেওয়া দুর্বৃত্তরা সেখানকার পাহাড়িদের ওপর এত অন্যায়-অত্যাচার করছে অথচ এসব ঘটনায় জড়িতদের এখনো পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার ও বিচার করা হয়নি। প্রশাসন ভূমিদস্যুদের পক্ষালম্বন করে নিরব ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এজন্য প্রশাসনের লজ্জা পাওয়া উচিত বলেও মন্তব্য করেন বক্তারা।

বক্তারা আরো বলেন, ভূমিদস্যুরা ভূমি রক্ষার আন্দোলন দমন করার জন্য আন্দোলন কারীদের নামে দুইটি মিথ্যা মামলা দায়ের করলে তা প্রশাসন গ্রহণ করেছে। অথচ ভূমি রক্ষা আন্দোলনের সংগঠক রংধজন ত্রিপুরার ওপর হামলা, ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর জুমভূমি জবরদখলের পাঁয়তারা, ম্রোদের ক্ষেত থেকে মিষ্টি কুমড়া লুট, পানির উৎস ঝিরিতে বিষ প্রয়োগ- এসব অমানবিক ঘটনায় জড়িত অপরাধীদের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ভূমিদস্যু লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজের এহেন জঘন্যতম কর্মকাণ্ড এবং ভূমিদস্যুদের পক্ষে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষপাতিত্বের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান তারা।

পার্বত্য চট্টগ্রামের নামে বেনামে পাহাড়িদের ভূমি বেদখল, নারী নির্যাতন, পাহাড়ে রাষ্ট্রীয় নিপীড়ন, নির্যাতনসহ সকল ধরনের অন্যায় অত্যাচারের বিরুদ্ধে খাগড়াছড়ি ছাত্র সমাজ রাজপথে বিক্ষোভ, প্রতিবাদ, প্রতিরোধে সম্পৃক্ত থাকবে। নিজেদের ভূমি, অস্তিত্ব রক্ষার ছাত্র সমাজ তাদের দায়িত্ব পালন করে যাবে বলেও জানান তারা।

অবিলম্বে লামা রাবার ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড কর্তৃক ম্রো ও ত্রিপুরাদের ৪০০ একর ভূমি বেদখলের চেষ্টা বন্ধ করা, ভূমি রক্ষার আন্দোলনকারীদের নামে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, পাহাড়িদের ক্ষেত থেকে মিষ্টি কুমড়া লুটের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ এবং ভূমিদস্যু মোয়াজ্জেম হোসেন, কামাল উদ্দিন গংসহ পানিতে বিষ প্রয়োগকারী দুর্বৃত্তদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির প্রদানের জন্য সরকার ও প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা।

আরও পড়ুন
আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।