আলীকদমে অনুমতি ছাড়াই সরকারি স্কুল স্থানান্তর করলেন শিক্ষকরা

আজব শিক্ষক, আজব স্কুল

NewsDetails_01

বছরে প্রথম দিন বই বিতরণ করেই যেন শিক্ষকতার সরকারি চাকরি করার দায়িত্ব শেষ। বছরের পর বছর ধরে স্কুলে না গিয়ে বর্গা শিক্ষক নিয়োগ করে বেতন নিচ্ছেন শিক্ষকরা, নিজেদের সুবিধার্থে স্কুল অন্যত্র স্থানান্তরিত করে স্কুলের ত্রিসীমানায় প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছে শিক্ষকরা। আর এমন এক আজব স্কুলের সন্ধান মিলেছে বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায়। আর এনিয়ে ৩ পর্বের সরজমিন প্রতিবেদন তৈরি করেছেন পাহাড়বার্তা’র প্রতিবেদক সুহৃদয় তংচঙ্গ্যা। আজ ২য় পর্ব।

আলীকদম সদর থেকে দুর্গম এলাকার শিশুদের পড়াশোনার জন্য ২০১১ সালে ইউএনডিপি’র অর্থায়নে ২০ টি স্কুল নির্মাণ করা হয়। ২০১৭ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী থেকে বিদ্যালয়গুলো সরকারি করণের ফলে ২০২২ সালের ১৩ এপ্রিল শিক্ষকদের নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু সরকারি হওয়ার পরও সারা বছরের মধ্যে দু-একবার স্কুলে গিয়ে বেতন নিচ্ছেন শিক্ষকরা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষা অফিসের কোন নির্দেশনা ছাড়াই আলীকদমের ৪ নং কুরুকপাতা ইউনিয়নের ৪ নং ওয়ার্ডের পারাও পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি পারাও পাড়া থেকে স্থানান্তরিত করে নিয়ে গিয়ে যাওয়া হয়েছে মেনরত পাড়া নামক গড়ে উঠা নতুন একটি পাড়াতে।

এই বিষয়ে ৪ নং ওয়ার্ডে মেম্বার কাইনপ্রে ম্রো বলেন, স্কুলের শিক্ষকরা নিয়মিত ক্লাস করেন না, উপস্থিতও থাকেন না, স্কুলটি স্থানান্তরিত করে নিয়ে গেছে শুনেছি।

পারাও পাড়াতে এক সময়ে ২৫ টি পরিবার থাকলেও এখন পরিবার সংখ্যা আছে ৮ টি। পারাও পাড়ার পার্শ্ববর্তী আরও তিনটি পাড়া রাঅং পাড়া (২০ পরিবার), ক্রালাই ম্রো (৯ পরিবার), তংপং পাড়া (১১ পরিবার) নিয়ে স্কুলটি নির্মাণ করা হয়। স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থী শতাধিক থাকলেও স্থানান্তরিত স্কুলে ৫-১০ জন ছাত্রছাত্রী আসলেও তাদের পাঠদান করেন ভাড়াটে শিক্ষক। স্কুলটিতে সাংবাদিকসহ যে কেউ পরিদর্শনে গেলে স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুরেন্দ্র ত্রিপুরার নির্দেশে বাঁধা প্রধান করে স্থানীয়রা।

স্কুলের ভাড়াটে শিক্ষক মেনরিং ম্রো বলেন, স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুরেন্দ্র ত্রিপুরা ও চাহ্লাথোয়াই মার্মা নির্দেশ দিয়েছেন স্কুলের বাইরের কাউকে ঢুকতে না দেওয়ার।

প্রশাসনিক অনুমতি ছাড়াই শিক্ষক কর্তৃক মেনরত পাড়ায় স্থানান্তরিত নতুন পারাও পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ছবি-পাহাড়বার্তা

উপজেলা শিক্ষা অফিসের সূত্রে জানা যায়, প্রতিষ্ঠা লগ্ন থেকে পারাও পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চারজন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়, এরমধ্যে এডিসন ত্রিপুরা, সুরেন্দ্র ত্রিপুরা, মোতাহারা বেগম, চাহ্লাথোয়াই মার্মা। চারজন শিক্ষকের মধ্যে সাটিফিকেট না থাকায় এডিসন ত্রিপুরা নামে এক শিক্ষককে বাদ দেওয়া হয়। ২০২৩ সালে জেলা পরিষদের মাধ্যমে নিয়োগ পাওয়া দুইজন শিক্ষক জেসিলিং মার্মা ও জেকি মার্মা গত ৩ ডিসেম্বর জয়েন করেন। এরমধ্যে স্কুল শিক্ষিকা মোতাহারা বেগমকে একবারও স্কুলে দেখেন নি বলে অভিযোগ করেন পাড়াবাসী।

NewsDetails_03

পারাও পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টিতে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে, স্কুল থাকলেও শিক্ষকরা না যাওয়াতে স্কুলে আশ্রয় নিয়েছে দুটি পরিবার। তাদের একজন রেংঅং ম্রো পাহাড়বার্তা’কে বলেন, আমি দুই সপ্তাহ আগে পাড়াতে আসছি। স্কুলে শিক্ষকরা না থাকায় এখানে আশ্রয় নিয়েছি।

এই বিষয়ে পারাও পাড়ার গ্রাম প্রধান কদম ম্রো বলেন, পারাও পাড়াতে আগে স্কুল ছিলো। দুই বছর ধরে এখানে কোনো শিক্ষক আসে না। কিছুদিন আগে জেনেছি এই স্কুলটি এখন মেনরত পাড়াতে (নতুন পাড়া) স্থানান্তর করা হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, স্কুল শিক্ষকরা স্কুলটি নিয়ে গেছে, অথচ আমরা জানিও না, বছরে একদিন বই বিতরণ করেই শিক্ষকদের দেখা মেলেনা।

স্কুল স্থানান্তরিত বিষয়ে স্কুল শিক্ষক চাহ্লাথোয়াই মার্মা পাহাড়বার্তা’কে বলেন, পারাও পাড়া স্কুলে তেমন ছাত্রছাত্রী নেই। স্কুল স্থানান্তরিত বিষয়টি বদলি হওয়া শিক্ষা কর্মকর্তা আশীষ কুমার মহাজন বিষয়টি অবগত। তবে এই বিষয়ে কোন সরকারি আদেশ নেই।

এই বিষয়ে আলীকদম উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোশাররফ হোসেন খান বলেন, স্কুল স্থানান্তরিত বিষয়টি আমি জানি না, অফিসিয়াল কোনো নির্দেশনাও পায়নি।

এই বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আতাউল গনি ওসমানী পাহাড়বার্তা’কে বলেন, স্কুলগুলো যে বেহাল দশা এটি শুনেছি, দুর্গম এলাকায় স্কুলগুলো হওয়াতে তেমন একটা জানা হয় না, কিভাবে স্কুলগুলো চলছে।

আরও পড়ুন