আলীকদমে বেতন ও বিল পাসের নামে শিক্ষক সিন্ডিকেটের ঘুষ ৬০ লক্ষ টাকা !

ইউএনডিপি’র সরকারিকরনকৃত বিদ্যালয়

NewsDetails_01

বান্দরবানে ৮০টি ইউএনডিপির প্রাথমিক বিদ্যালয় ২০১৭ সালে সরকারিকরণ করা হয়। তার মধ্যে আলিকদমে রয়েছে ২০টি। অধিদপ্তর থেকে সরকারীকরণ হওয়া বিদ্যালয়গুলোর শিক্ষকদের বকেয়া বেতন বিল পাসের ঘুষের নামে একটি শিক্ষক সিন্ডিকেট উপজেলার ৭৫ জন শিক্ষকের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে। টাকার নেওয়ার বিষয়টি ধামাচাপা দিতে জোরপূর্বক প্রত্যায়নপত্র ও স্টাম্পে স্বাক্ষর নেওয়ার, শোকস করার হুমকি প্রদানের অভিযোগ উঠেছে সিন্ডিকেট ও উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রতিজন শিক্ষক থেকে ৮০ হাজার টাকা করে ৭৫ জনের মোট ৬০ লক্ষ টাকা দিতে হবে সিন্ডিকেটের কাছে। তার মধ্যে ১০ হাজার নগদ, আর ৭০ হাজার চেকে। চেকের টাকাগুলো বকেয়া বেতন আসার সাথে সাথে প্রত্যেক একাউন্ট থেকে উত্তোলন করে নিবে সিন্ডিকেট সদস্যরা। শিক্ষকরা প্রাথমিক ভাবে সবাই একটু গড়িমসি করলেও কোন উপায় না পেয়ে ইতোমধ্যে টাকা আরনচেক জমাও করে দিয়েছে সিন্ডিকেটের নির্ধারিত সদস্যের কাছে।

বর্তমানে শিক্ষকদের কাছ থেকে নেওয়া ১০ হাজার টাকা ও ৭০ হাজার টাকা করে চেকগুলো সিন্ডিকেটের সদস্য মারাং রাইতং পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থোয়াইক্যনু মার্মার কাছে জমা দিয়েছেন বলে জানায় ভুক্তভোগি শিক্ষকরা।

ভুক্তভোগি শিক্ষকরা জানায়, এই ৬০ লক্ষ টাকা আলিকদম উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে শুরু করে শিক্ষা অধিদপ্তর পর্যন্ত এবং সিন্ডিকেটের সবার মধ্যে ভাগভাগি করা হবে। এই টাকা না দিলে বকেয়া বেতন তো হবেই না বরং চাকরি খেয়ে দেওয়ার হুমকী দেওয়ার অভিযোগও উঠেছে সিন্ডিকেটের প্রধান জিয়াবুল হক প্রকাশ জিয়াবুল মাষ্টারের বিরুদ্ধে। তাদের মধ্যে কয়েকজন টাকা ও চেক দিতে বেশি গড়িমসি করায় প্রধান শিক্ষককে দিয়ে হাজিরা খাতায় সরিয়ে রাখেন। যাতে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করতে না পারেন। এরমধ্যে টাকা দিতে অনিহা প্রকাশ করায় দুই শিক্ষককে নানা অজুহাতে শোকজ করেছেন উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা। সিন্ডিকেটের কেউ স্কুলে না গেলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নেওয়ার অভিযোগ খোদ শিক্ষা কর্মকর্তা বিরুদ্ধে।

সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অনেক শিক্ষক থেকে ৮০ হাজার টাকা নগদ আর চেকে নেওয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন অজুহাতে আরো টাকা দাবি করার অভিযোগও পাওয়া যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিন সহকারী ও দুইজন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক বলেন, চেক ও টাকা নেওয়ার বিষয়ে অনিহা প্রকাশ করলে উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসারের সামনে হুমকি দেন সিন্ডিকেট প্রধান। এসময় নিরবতা পালন করেন খোদ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা। এমনকি টাকা নেওয়ার বিষয়ে কারও সামনে স্বীকার না করতে বলেন তারা। করলে চাকরী নিয়ে টানাটানি হবে বলে হুমকি দেন সিন্ডিকেট।

NewsDetails_03

টাকা নেওয়ার সিন্ডিকেটের যারা আছে :

আলিকদম উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তাদের মধ্যে সব চেয়ে আলোচ্য নাম ও সিন্ডিকেট প্রধান হিসেবে পরিচিত জিয়াবুল হক মাস্টার। তিনি চম্পট পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। কমচঙ ইয়াংছা মাওরুম পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিক্সন পাল। মারাং রাইতং পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক থোয়াইক্যনু মার্মা (টাকা ও চেক কালেক্টর), মেনকেউ মেনক সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রাজিব ম্রো,রাইতুমনি পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মংচাথুই মারমা, লাওলিং ন্যাদয় কাম্পুক পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মংহ্লাথুই মারমা (চেক ও টাকা কালেক্টর), লাংড়িং পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মাইকেল মারমা। সিন্ডিকেটের অনেকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা বিষয়টি স্বীকার করেন এবং একে অন্যের উপর দোষ চাপিয়ে সাধু সাজার চেষ্টা করছে। তবে ভুক্তভোগি শিক্ষকদের সাথে এই টাকার নেওয়ার ব্যাপারের বিভিন্ন সময়ে কথা বলা এবং মিটিং করা নিয়ে সিন্ডিকেট সদস্যদের অডিও-ভিডিও রেকর্ডসহ বিভিন্ন তথ্য প্রতিবেদকের কাছে সংরক্ষিত রয়েছে ।

সিন্ডিকেটের এক সদস্য বলেন, টাকা নেওয়া হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের দেওয়ার জন্য। যাতে বকেয়া বেতন গুলো দ্রুত দেয়। এত টাকা মন্ত্রণালয়ের কাকে দেওয়া হচ্ছে এমন করলে কোন উত্তর না দিয়ে এবিষয়ে পরে বসবেন বলেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার আশিষ কুমার ধর বলেন, কোন শিক্ষক স্বীকার করছেন না টাকা নেওয়ার বিষয়টি।

আপনি জরুরী সভা ডেকে সিন্ডিকেট কোন টাকা নেয়নি মর্মে লিখিত প্রত্যায়নপত্র দিতে নির্দেশ দিয়েছেন এবং তদন্ত বা কাউকে বললে শোকস করার হুমকি দিয়েছেন কেন জানতে চাইলে তিনি উত্তরে জানান, আমি কাউকে কিছু বলিনি। মিটিংয়ে সবার কাছ থেকে মোবাইল নিয়ে নেওয়ার কারণ ও সিন্ডিকেটের সাথে আপনার বসার সম্পর্কে কারণ জানতে এরও কোন উত্তর দেননি উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার।

এবিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ শফিউল আলম বলেন, একটি তদন্ত টিম করা হয়েছে, তদন্তে এর সত্যতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার জরুরি সভায় সবার মোবাইল নিয়ে ফেলেছেন। একজন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা এভাবে কি মোবাইল নিতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, এটা করা ঠিক হয়নি।

আরও পড়ুন