এক বক্করেই আলীকদমে সড়কের সর্বনাশ !

NewsDetails_01

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলায় ৩ নং নয়াপাড়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডে মেরিনচর এলাকায় “আলীকদম পৌঁয়ামুহুরী মেইন রোড থেকে মেরিনচর সোনে স্কুল পর্যন্ত রাস্তা এইচবিবি করণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের আওতায় প্রায় ৯৪ লক্ষ টাকা ব্যয়ে করা কাজটি করছেন মো: রিটন নামে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। কিন্তু ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রিটন নামে থাকলেও কাজ করছে স্থানীয় ঠিকাদার আবু বক্কর। কাজের সিডিউল থাকলেও কোন রকম সিডিউল মানা হচ্ছে না।

এলাকাবাসীরা অভিযোগ করে জানান, মাতামুহুরি রিজার্ভ এলাকা থেকে বালি তুলে সড়কের কাজে ব্যবহার করছে ঠিকাদার আবু বক্কর নিজে। বাঁধা দিলেও বন্ধ হচ্ছে না বালি উত্তোলন। গত সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারী) বালির উত্তোলনের জায়গাতে খেলতে গিয়ে স্থানীয় স্কুল ছাত্র ইয়াংরাও নামে এক শিশু বালির নিচে চাপা পড়ে, পরে স্থানীয়রা উদ্ধার শিশুটিকে। বালির উত্তোলনের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকাবাসী।

স্থানীয় বাসিন্দা মংএখ্যাই মার্মা বলেন, ৩৩ বছর ধরে এখানে বসবাস করছি, এখন পর্যন্ত কোনো সড়ক হয় নি। এত বছর পর রাস্তা হচ্ছে তাও কাজের মান অসন্তোষজনক। ব্রিকসলিংয়ের কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে দুই নাম্বার ভাঙা ইট। বাঁধা দিতে চাইলে ঠিকাদার আবু বক্কর আমাকে দেওয়া টাকা দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দেন।

তিনি আরও অভিযোগ করে বলেন, স্থানীয় ঠিকাদারদের মধ্যে আবু বক্কর ঠিকাদার সবচেয়ে নিম্ন মানের কাজ করে থাকেন। পুরো আলীকদমে যতগুলো কাজ করেছেন সবগুলোই অনিয়মে ভরা।

মেরিনচর মার্মা পাড়ার কারবারি মংসাসিং মার্মা বলেন, রাত বারোটার দিকে আমরা সবাই ঘুমিয়ে গেলে বালু উত্তোলনকারীরা এসে বালি তুলে নিয়ে যায়। বাঁধা দিয়েও না মানাতে আমরা বনবিভাগকে অবগত করেছি। বনবিভাগ একবার আসার পর তিনদিন পর্যন্ত কেউ বালি তুলে নি, আবারও গতকাল থেকে বালি তোলা শুরু হয়েছে।

NewsDetails_03

তিনি আরও জানান, কয়েকদিন আগে রাস্তা দেখতে কয়েকজন অফিসার এসেছিলেন, রাস্তার কাজে ব্যবহার হওয়া নিন্মমানের ইট দেওয়া হয়েছে এটি প্রমাণিতও হয়েছে। অফিসাররা ইটগুলো তুলে ফেলতে বললেও এখনো কোনো ইট তুলে ফেলা হয়নি। ইট তুলে ফেলা হবে কিনা তাও জানি না বলে জানান তিনি।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাস্তার কাজে ব্যবহার করা হয়েছে মাতামুহুরী নদী থেকে তোলা বালি, রাস্তার ৬ ইঞ্চি বালি ধরা থাকলেও বালি দেওয়া হয়েছে ১ ইঞ্চি। ব্রিকসলিংয়ে ব্যবহার করা হয়েছে নিন্মমানের ভাঙা ইট। বক্স কাটিং থাকলেও কোনো কোনো জায়গাতে করা হয় নি। সিডিউল অনুযায়ী গাইড ওয়াল, এল ড্রেন ও ড্রাম সিড থাকলে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে ড্রামসিড দিয়ে।

সংলিষ্ট প্রকল্প কাজের সিডিউল অনুযায়ী মাটি ভরাট, বেড প্রস্তুতকরণ, বক্স কাটিং, ক্যাম্বারিং, বালু ভরাটকরণ, Edging, ব্রিক ফ্লাট সংলিং (Brick Flat Soling), হেরিং বোন বন্ড (SHBB), Post Cast (প্যালাসাইডিং), Bitumen drum sheet (প্যালাসাইডিং), RCC Name Stand with Marble Stone, ইত্যাদি থাকার কথা থাকলেও মানা হচ্ছে না। অন্যদিকে ৩ নং অনুচ্ছেদ উল্লেখিত শর্তানুযায়ী প্রকল্পের কাজে ব্যবহৃত নির্মাণ সামগ্রী (ইট) পলিটেকনিক / ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ/প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়/প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় হতে গুনগতমান পরীক্ষা করে রাস্তার কাজে ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। প্রকল্প এলাকায় মজুদকৃত ইট হতে ঠিকাদারের উপস্থিতিতে নমুনা সংগ্রহ করবেন। নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট নথিতে সংরক্ষণ করার কথা থাকলেও তা করা হয় নি। কাজের ব্যবহৃত ইটগুলো অত্যন্ত নিম্নমানের।

এই বিষয়ে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের মালিক মো রিটন বলেন, আমি কাজটি আবু বক্করকে বিক্রি করেছি। কাজটি বক্কর করছে এই বিষয়ে আপনি উনার সাথে কথা বলেন।

মুঠোফোনে অভিযুক্ত ঠিকাদার আবু বক্করের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি বান্দরবানে যাচ্ছি। এসে কথা বলবো বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

এই বিষয়ে আলীকদম উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জনাব সৌভ্রাত দাশ, এলাকাবাসীর অভিযোগের কারণে আমরা সরজমিনে গিয়ে দেখেছি। রাস্তার কাজ নিম্নমানের হওয়াতে কাজটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে।

আরও পড়ুন