এক সড়কেই সুদিন ফিরছে বিলাইছড়িবাসীর

NewsDetails_01

নৌপথের যাতায়াতে কেটে গেছে ৪৭ বছর। রাঙামাটি সদর হতে প্রায় ২৫ কিলোমিটারের দুরত্বের সেই নৌপথে খরা মৌসুমে পোহাতে হয় অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। যোগাযোগ দুর্গমতার কারনে উৎপাদিত পাহাড়ী পণ্য পরিবহণ ও বাজারজাত সংকটে বিরাট লোকসান গুনতে হত প্রতিবছর। এমনকি যোগাযোগ সংকটের কারণে স্থানীয়দের বড় দুঃচিন্তার কারণ ঠিক সময়ে স্বাস্থ্যসেবা না পাওয়া। ফলে, অকালে ঝড়েছে অনেক প্রাণ।

১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত রাঙামাটির দুর্গম ও নানাভাবে সুবিধাবঞ্চিত বিলাইছড়ি উপজেলা অবশেষে যুক্ত হচ্ছে সড়ক যোগাযোগের আওতায়। রাঙামাটির এলজিইডির তত্ত্বাবধানে প্রায় ৩৩৮ কোটি টাকা ব্যয়ে কাপ্তাই উপজেলার সাথে বিলাইছড়ির সড়ক সংযুক্তের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সড়কটি বাস্তবায়ন হলে সুদিন ফিরবে বিলাইছড়িবাসীর। গতি ফিরবে অর্থনীতিতে। সরকারের এমন সুদুরপ্রসারী পরিকল্পনার বাস্তবায়নের উদ্যোগে খুশির জোয়ার বইছে কাপ্তাইয়ের রাইখালী ইউনিয়নের কারিগর পাড়া থেকে বিলাইছড়ি উপজেলার প্রতিটি গ্রামের পরতে পরতে।

বিলাইছড়ি উপজেলায় প্রায় ৩২ হাজার লোকের বসবাস, অতি গুরুত্বপুর্ণ কৃষিজাত পণ্য, নানা প্রজাতির কাঠ ও স্থানীয় জীবনমানকে সহজতর করতে বর্তমান সরকার ৩৩৮ কোটি টাকার একটি মেগাপ্রকল্প হাতে নেয়। ২০২১ সালের ৪ মে একনেকে প্রকল্পটি পাস হয়। কাপ্তাই উপজেলার রাইখালীর কারিগর পাড়া থেকে বিলাইছড়ি পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন ব্রিজ/কালভার্ট নির্মাণ প্রকল্পের আওতায় নির্মিত হচ্ছে ৪০ কিলোমিটার সড়ক ও ১২টি সেতু। ২০২২ সাল থেকে প্রকল্পটির টেন্ডার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পের সবগুলো প্যাকেজের দরপত্র আহবান করা হয়েছে। কিছু প্যাকেজে ঠিকাদার নিয়োগ হয়েছে এবং এরমধ্যে কাজও শুরু হয়েছে বলে জানা গেছে। কাপ্তাইয়ের রাইখালী ইউনিয়নের ভাল্লুক্যা এলাকা থেকে সড়কটির প্রায় ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত নির্মাণ কাজ চলছে। এ সড়কটির কাজ ২০২৫ সালের ডিসেম্বর মাসে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

NewsDetails_03

স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সড়কটি নির্মিত হলে এই এলাকার শিক্ষা, চিকিৎসা ও পর্যটনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হবে, পাশাপাশি এখানকার উৎপাদিত কৃষিপণ্য খুব সহজে বাজারজাত করা যাবে। অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। সবচেয়ে বড় কথা অল্প সময়ে কাপ্তাই হয়ে দেশের যেকোন স্থানে যাওয়া যাবে।

বিলাইছড়ি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি দেওয়ান ও ফারুয়া ইউপি চেয়ারম্যান বিদ্যালাল তঞ্চঙ্গ্যা বলেন, এলজিইডির সড়ক নির্মাণ বিলাইছড়িবাসীর জন্য বড় সুখবর। উপজেলার সাধারণ মানুষের শিক্ষা, চিকিৎসা ও যাতায়াতের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে এই সড়ক।

সড়কটি বাস্তবায়নে সরাসরি তত্ত্ববধানে থাকা বিলাইছড়ি এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন এবং কাপ্তাই এলজিইডির উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, সড়ক বাস্তবায়নের কাজ চলমান, সড়কটির নির্মাণ হলে বিলাইছড়ির দুর্গম এলাকার মানুষের যাতায়াত ব্যবস্থা সহজ হয়ে যাবে।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) রাঙামাটির নির্বাহী প্রকৌশলী আহামদ শফি বলেন, দীর্ঘ ৪৭ বছরের নৌপথে যাতায়াতের লাঘব হবে সড়কটি নির্মান হলে। সড়ক নির্মানের জায়গা অনেক দুর্গম, উচু-নিচু পাহাড় রয়েছে। চ্যালেঞ্জ বটে, রোমাঞ্চকরও। উন্নয়নের মহাসড়কে বিলাইছড়ি উপজেলাকে যুক্ত করা বর্তমান সরকারের আরো একটি সফলতা বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন