কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ নির্বাচন : চেয়ারম্যান পদে ১২ প্রার্থীর দৌঁড়ঝাপ

NewsDetails_01

২০১৯ সালের ১৮ মার্চ কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের সর্বশেষ নির্বাচন হয়েছিল। উপজেলা পরিষদের প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয় সেই বছরের ৫ মে। সেই সময় নৌকা প্রতীক নিয়ে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির যুগ্ম সম্পাদক মফিজুল হক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলেও, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রার্থীর মধ্যে তুমুল প্রতিদ্বন্ধিতা হয়। কাপ্তাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নাছির উদ্দীন সেই সময় ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হন। অপরদিকে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৩ জন প্রতিদ্বন্ধিকে ফেলে মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন উমেচিং মারমা।

তবে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্য নির্বাহী সংসদের বৈঠকে দলীয় প্রতিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন না করার ঘোষণায় নড়ে চড়ে উঠে কাপ্তাই উপজেলার আওয়ামী লীগ এবং এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের অনেক নেতা। ইতিমধ্যে ৬ষ্ট উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে এলাকায় বইছে নির্বাচনের হাওয়া। চায়ের আড্ডা কিংবা নানা সামাজিক ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীরা চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান পদে নিজেদের প্রতিদ্বন্ধিতার কথা জানান দিচ্ছেন ভোটারদের। লেক, পাহাড় এবং কর্ণফুলী নদী বেষ্টিত রুপসী কন্যা কাপ্তাইয়ের এখন অলিতে গলিতে বইছে নির্বাচনী হাওয়া। রাঙামাটি সংসদীয় আসন হতে বিপুল ভোটে নির্বাচিত দীপংকর তালুকদার এমপি এর আনুকূল্য পেতে ইতিমধ্যে অনেকে দৌঁড়ঝাপ শুরু করেছেন।

কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ১২ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নিবেন বলে শুনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ সভাপতি সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য প্রকৌশলী থোয়াইচিং মং মারমা, ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি প্রকৌশলী আবদুল লতিফ, উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল, উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক নুর উল্ল্যা ভুঁইয়া, বর্তমান উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান উপজেলা যুবলীগের সভাপতি নাছির উদ্দীন, উপজেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সুব্রত বিকাশ তনচংগ্যা, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক জাতীয় দলের সাবেক খেলোয়াড় বিপ্লব মারমা, ওয়াগ্গা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অংলাচিং মারমা, বর্তমান মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উমেচিং মারমা, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কামরুল হাসান এবং রাইখালী ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান এনামুল হক।

যোগাযোগ করা হলে বর্তমান উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মফিজুল হক জানান, তিনি এইবার নির্বাচন করবেন না।

এদিকে ভাইস চেয়ারম্যান পদে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তাঁরা হলেন কাপ্তাই উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি সেলিম চৌধুরী এবং ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এম নুর উদ্দিন সুমন।

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে যাদের নাম শুনা যাচ্ছে তাঁরা হলেন কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ এর সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান নুর নাহার বেগম এবং উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক ফারহানা আহমেদ পপি।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কথা হলে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী বলেন, আমি তৃনমুল পর্যায় হতে রাজনীতি করে আসছি। এছাড়া সফলতার সাথে আমি চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছি। আমি নির্বাচিত হলে কাপ্তাই উপজেলাতে বেকারত্ব দূর করার জন্য পর্যটন খাতের বিকাশে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে কাজ করবো।

NewsDetails_03

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান কমিটির এক নেতা বলেন, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান হিসাবে পাহাড়ি বাঙালি সবার কাছে গ্রহনযোগ্য প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম খলীল। তিনি ১৯৯৫ সালে একবার এবং ২০০৩ সালে কাপ্তাই উপজেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছিলেন। ২০১২ সালে তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এবং ২০১৯ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হিসাবে দায়িত্ব পালন করে আসছেন।

সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী প্রকৌশলী থোয়াইচিং মং মারমা বলেন, তৃনমুল পর্যায় হতে আমি রাজনীতি করে আসছি। সবসময় জনগণের পাশে ছিলাম। জেলা পরিষদ সদস্য এবং চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করার সময় মানুষের উপকার করেছি। আশা করি জনগণ হতাশ করবে না।

চেয়ারম্যান প্রার্থীর নুর উল্ল্যা ভুঁইয়া এবং সুব্রত বিকাশ তনচংগ্যা বলেন, সবসময় জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি, তাই সিদ্ধান্ত নিলাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান পদে লড়ে বিজয়ী হয়ে মানুষের কল্যানে কাজ করবো।

বর্তমান উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান নাছির উদ্দীন বলেন, সীমাবদ্ধতার কারনে ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করার সময় জনগণের অনেক চাহিদা পূরণ করতে পারি নাই। তবে জনগণের পাশে ছিলাম। ভবিষ্যতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে আমি আরোও বেশী জনগণকে সেবা দিতে পারবো।

জানতে চাইলে সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থী বিপ্লব মারমা বলেন, চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব পালন করার সময় আমি এলাকার প্রচুর উন্নয়ন করেছি। আগামীতে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে কাপ্তাই উপজেলাকে একটি মডেল উপজেলা হিসাবে গড়ে তুলবো।

উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে সম্ভাব্য মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী ফারহানা আহমেদ পপি বলেন, আমি আওয়ামী যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। সবসময় মাঠে ছিলাম। আমার বাবা একজন সাংবাদিক ছিলেন। তাঁর ইমেজকে কাজে লাগিয়ে আমি অবশ্যই জয়ী হবো।

কাপ্তাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি লোকমান আহমেদ এবং রাঙামাটি জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ এর সাবেক চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন জানান, কেন্দ্রীয় বিএনপি সাংগঠনিকভাবে যেই সিদ্ধান্ত নেন, আমরা সেই মোতাবেক পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নিব।

কাপ্তাই উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা তানিয়া আক্তার জানান, কাপ্তাই উপজেলার ৫ টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ৪৮ হাজার ৮শ ৭৫ জন। তৎমধ্যে পুরুষ ভোটার ২৫ হাজার ৬ শত ৯৪ জন এবং মহিলা ভোটার ২৩ হাজার ১ শত ৮১ জন।

আরও পড়ুন