পুলিশের মামলায় ১৫৭ জন আসামী, হরতাল-অবরোধের হুমকি ওয়াদুদ ভূঁইয়ার

খাগড়াছড়িতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ

NewsDetails_01

খাগড়াছড়ি শহরে গত মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিএনপি-আওয়ামী লীগের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা প্রদানের অভিযোগে ১’শ ৫৭ জনকে আসামী করে একটি মামলা হয়েছে। মামলার বাদী এস আই মিনহাজুল আবেদীন নিজেই ঘটনার দিন আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

মামলায় উল্লেখ্যযোগ্য আসামীরা হলেন, জেলা বিএনপির সহ সভাপতি প্রবীন চন্দ্র চাকমা, সাধারণ সম্পাদক এমএন আবছার, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট আব্দুল মালেক মিন্টু, পৌর বিএনপির সভাপতি আব্দুর রব রাজা অন্যতম। এই মামলায় এরইমধ্যে ১৫ জনকে আটক করে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, সদর থানার ওসি মো. আরিফুর রহমান।

তবে সরেজমিনে সদর থানায় গিয়ে আটককৃতদের উপস্থিত স্বজনদের মুখে শোনা গেছে ভিন্ন কথা। তাঁদের অভিযোগ, পুলিশ নিরীহ ছাত্র-যুবকদের আটক করে মঙ্গলবারের ঘটনার ব্যর্থতা আড়াল করার চেষ্টা করছে। আর জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক এমপি ওয়াদুদ ভূঁইয়া জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের অত্যাচার বন্ধ না হলে হরতাল-অবরোধের মতো কমৃসূচি দিতে বাধ্য হবেন। গত মঙ্গলবারের ঘটনায় বিএনপি এবং আওয়ামী লীগ’র পক্ষ থেকে আরো কয়েকটি মামলা করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

নেতাকর্মীদের ওপর বর্বরোচিত হামলা ও শহরজুড়ে নৈরাজ্যের বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবী জানিয়েছে জেলা আওয়ামী লীগ। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী বিএনপি এমন তান্ডব চালিয়েছে বলে দাবী আওয়ামী লীগের। গত মঙ্গলবার বিকালে (৬টা) জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই দাবী করেন জেলা আওয়ামী লীগ নেতারা।

এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরাও এমপি বক্তব্য রাখেন।

NewsDetails_03

সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা এমপি বলেন, দুই ঘন্টারও বেশি সময় ধরে বিএনপি‘র নৈরাজ্য এবং পৌরসভার মতো রাষ্ট্রীয় একটি প্রতিষ্ঠান ভাংচুরের ঘটনায় পুলিশের নিস্ক্রীয় ভূমিকা থাকলে তারাও পার পাবেনা। তিনি বিএনপি‘র উস্কানীমূলক হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান। দায়ী ব্যক্তিদের চিহিৃত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করেন।

এদিকে দুপুর নাগাদ খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপি‘র ডাকা এক সংবাদ সম্মেলনে জেলার বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের বাড়ি-ঘরে হামলা ও ভাংচুরের অভিযোগ করেছেন সাবেক এমপি ও জেলা বিএনপি’র সভাপতি ওয়াদুদ ভূঁইয়া। এমন পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে জেলায় হরতাল-অবরোধ কর্মসূচির মতো কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেয়া হয়।

পৌরসভা ভাংচুরের সাথে বিএনপি’র সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে উল্টো ওয়াদুদ ভূঁইয়া দাবি করেন, মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী নিজেকে হাইলাইটস করতে এবং বিএনপিকে মামলা দিয়ে ফাঁসানোর জন্য নিজেরা ভাংচুর করে বিএনপিকে দোষারোপ করছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পৌর মেয়র নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, দিনে-দুপুরে দেশীয় অস্ত্র- পেট্রোল বোমা-হকিস্টিক নিয়ে জনগণের প্রতিষ্ঠান এবং সরকারি সম্পত্তি পৌর কার্যালয়ে ভাংচুর চালিয়েছে। অফিস তছনছ করেছে। এটা তো পৌরসভা কার্যালয়ের এবং শাপলা চত্বরের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজেই প্রমাণিত। তিনি জানান, আজ-কালের মধ্যেই সিসিটিভি ফুটেজসহ আইনী পদক্ষেপ নেয়া হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, খাগড়াছড়ি জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমএন আবছার, যুগ্ম-সা. সম্পাদক মোশাররফ হোসেন ও অনিমেষ চাকমা রিংকু, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রব রাজা, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি নজরুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুলাহ আল নোমান সাগর এবং কৃষক দলের সভাপতি নীলপদ চাকমাসহ বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

উল্লেখ্য,গত মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) সকাল সোয়া ১০টার দিকে খাগড়াছড়িতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ব্যাপক হয়। সংঘর্ষ নিয়ন্ত্রণে পুলিশ রাবার বুলেট ও কাঁদানে গ্যাস ছড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। সংঘর্ষে সাংবাদিক ও পুলিশসহ উভয়দলের কমপক্ষে অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী আহত হয়। যার অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী। দুপুর ১২টা পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষে গুরুতর আহত হয়েছে পুলিশের এসআই মামুন। সংঘর্ষ চলাকালে খাগড়াছড়ি পৌরসভায় হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুর এবং অফিস তছনছ করে দেয় দুর্বৃত্তরা। এসময় ১টি মোটরবাইকে আগুন দেয়ার পাশাপাশি ১০টি মোটরসাইকেল ভাংচুর করা হয়।

আরও পড়ুন