বান্দরবানে খুন, অপহরণ, চাঁদাবাজির পর এবার সংরক্ষিত বনাঞ্চলের কাঠ পাচারের অভিযোগ উঠেছে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(জেএসএস) বিরুদ্ধে। থানচির সরকারি সংরক্ষিত বনাঞ্চল ‘সাংগু রিজার্ভ ফরেষ্ট’ এলাকায় অবৈধভাবে গর্জনসহ মূল্যবান বিভিন্ন প্রজাতির গাছ নিধন করছে গত একমাস ধরে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালের ৪ এপ্রিল সাংগু রিজার্ভ ফরেষ্ট এলাকার ২ হাজার ৩৩১ হেক্টর বনাঞ্চল জুঁড়ে গড়ে তোলা হয়েছে বন্য প্রাণিদের অভয়ারণ্য। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই রিজার্ভের গাছ কেটে কাঠ পাচারের ফলে নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক পরিবেশ তথা বন্য প্রানীদের অভায়ারণ্য, অন্যদিকে বৃক্ষ নিধনের ফলে শুকিয়ে যাচ্ছে পাহাড়ের ঝিড়ি-ঝর্ণা। ফলে আদিবাসী পল্লীগুলোতে ক্ষোধ বর্ষা মৌসুমে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া দুস্কর হয়ে দাড়িয়েছে।
গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত শ্রমীক (রোহিঙ্গা) শামসুল আলম বলেন, জেএসএস নেতারা চকরিয়া থেকে আমাদের এনেছে গাছ কাটার জন্য, আমরা জানিনা ফরেষ্টের গাছ কাটা নিষেধ কিনা।
আরো জানা গেছে, থানচির ম্রংগং মারমা পাড়ার নিচে,রিজার্ভের ইয়াংরে ঝিড়ির উপরে, লগনা ঝিড়ি এলাকার নদীর পাশে পাচারের জন্য প্রায় ৬ হাজার ঘনফুট অবৈধ কাঠ মজুদ করে রাখা হয়েছে। এসব কাঠ কৌশলে নদী পথে থানচি সদরে নিয়ে আসার প্রক্রিয়া হয়েছে। কাঠ কাটার শ্রমিক হিসাবে নিয়োজিত আছে মায়ানমারের রোহিঙ্গারা, সল্প বেতনে শত শত রোহিঙ্গাকে কাঠ কাটার জন্য নিয়োগ দেয় পাচারকারীরা। স্বাধীনতার পর থানচির বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ কেটে পাচার করলেও এই প্রথম দূর্গম এলাকায় অবস্থিত রিজার্ভ ফরেষ্ট থেকে গাছ কেটে পাচারের জন্য মাঠে নেমেছে সংঘবদ্ধ পাচারকারীরা।
এই ব্যাপারে অভিযুক্ত জনসংহতি সমিতির থানচি উপজেলা সভাপতি চসাথোয়াই মারমার সাথে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
গোয়েন্দা প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, জনসংহতি সমিতির থানচি উপজেলা সভাপতি, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান চসাথোয়াই মারমা এবং বড়মদক এলাকার নেতা চসিং মং মার্মা, জিনিয়ং মার্মা, উচানু মার্মা, শৈক্যাচিং মার্মাসহ অনেকের নেতৃত্বেই সরকারি বনাঞ্চলের গাছ কর্তন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শত শত বছরের বয়স্ক চম্পা ফুল, গর্জন, কড়ই, চাপালিশ,জারুলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মূল্যবান গাছ অবৈধ কর্তনের ফলে এসব এলাকায় দ্রুত পরিবেশের বিপর্যয়ের আশংকা রয়েছে, ফলে হুমকির মুখে পড়েছে বন্যপ্রাণির অভয়ারণ্য।
থানচি সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মানছার ম্রো বলেন, থানচি জেএসএস সভাপতি চসাথোয়াই মার্মার নেতৃত্বে থানচিতে অবৈধ ভাবে বৃক্ষ নিধন ও পাচার হচ্ছে। উক্ত এলাকায় হাজার হাজার ঘনফুট অবৈধ কাঠ থাকলেও গত ১৬ আগষ্ট সাংগুনদীর পাশের লগ্ন ঝিড়ি এলাকা থেকে ৪২৩ ঘনফুট গর্জন কাঠ আটক করে বন বিভাগ। তবে এই অভিযানকে আইওয়াশ মনে করে থানচি পুলিশ ও বিজিবি ১৭আগষ্ট এলাকাটিতে অভিযান চালিয়ে আড়াই হাজার ঘনফুট গর্জন কাঠ জব্দ করে। এদিকে ক্ষোধ বনবিভাগের এক শ্রেণীর কর্মকর্তারা কাঠ পাচারে জড়িত থাকার কারনে থানচিতে রিজার্ভ ফরেষ্ট শূন্য হচ্ছে বলে মনে করছে স্থানীয়রা।
জেলার সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার শম্পা রানী সাহা জানান, পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেছেন এবং অবৈধ কাঠ জব্দ অভিযান চলছে।
দেশের জীববৈচিত্র রক্ষায় গাছ কাটার ওপর আরোপিত বিধি-নিষেধের মেয়াদ ২০১৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর শেষ হলে, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সংরক্ষিত ও প্রাকৃতিক বনাঞ্চলের গাছ কাটার ওপর আরোপিত বিধি-নিষেধ ২০২৫ সাল পর্যন্ত বহাল রাখার প্রস্তাব করলে সরকার তা ২০২২ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। সরকার সংরক্ষিত বনাঞ্চল রক্ষায় ব্যাপক উদ্দ্যেগ গ্রহন করলেও বান্দরবানে কিছু অসাধু বন কর্মকর্তাদের বন ভক্ষকের ভূমিকার কারনে সংরক্ষিত বন উজার হচ্ছে এমন মত স্থানীয় পরিবেশবীদদের।
বান্দরবান বন বিভাগের অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগীয় বন কর্মকর্তা বিপুল কৃঞ্চ দাশ জানান, অভিযোগ পেয়ে তিনি থানচির বন রেঞ্জ কর্মকর্তাকে ঘটনার তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।