বান্দরবানের পাহাড়ে চাষ হচ্ছে পেয়াঁজ

NewsDetails_01

প্রতি বছর সারাদেশেই উৎপাদনের তুলনায় চাহিদা বেশি হওয়ার ফলে বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানী করতে হয় প্রচুর পেয়াঁজ। আর তাই এবার প্রথমবারের মত পেয়াঁজের চাহিদা মেটানো এবং দেশের কৃষিখাতে গুরত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখতে বান্দরবানে শুরু হয়েছে পেয়াঁজের চাষ। কম খরচে চাষ আর পরির্চযায় তেমন জটিলতা না থাকার কারণে এবার কৃষকরা ঝুঁকছে এই পেয়াঁজ চাষে।

এক মৌসুমের মসলা জাতীয় ফসল পেঁয়াজ,তাই মৌসুমের শেষ দিকে এই কৃষিপণ্যটির ঘাটতি দেখা দেয় সারাদেশেই, এমন প্রেক্ষাপটে বান্দরবানে এইবার প্রথমবারের মত শুরু হয়েছে পেঁয়াজ চাষ। জেলা সদরসহ ৭টি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে হয়েছে পেঁয়াজের আবাদ।

বান্দরবান সদরের লেমুঝিড়ি এলাকার চাষী মো.নুরুল ইসলাম বলেন, অল্প পরিশ্রম ও অল্প পুজিঁ দিয়ে বেশি ফল পাওয়া যায় দেখে আমি এবার ১ একর জমিতে পেয়াঁজের আবাদ করেছি,ইতোমধ্যে ভালো ফলন ও পেয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আমার জমি থেকে আমি আশা করছি প্রায় ১২-১৩ টন ফলন পাবো,আমার পেয়াঁজের এমন ফলন দেখে অনেকে আগামীতে পেয়াঁজ চাষ করার আগ্রহ প্রকাশ করছে।

ভরাখালী এলাকার চাষী মো.মাহাবুব আলম বলেন, আমি এই প্রথম লাল তীর কোম্পানীর থেকে হাইব্রিড বীজ নিয়ে ২একর জমিতে চাষ করেছি। কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পরামর্শ ও বীজ দিয়ে আমাকে সহযোগিতা করেছে, আমি একটু আগে চাষ শুরু করায় পেয়াজেঁর যেমন ভালো ফলন ও পেয়েছি, তেমনি বিক্রি করে ভালো লাভবান হয়েছি।

পেয়াঁজ চাষী নবী আহম্মদ বলেন, আমার জমিতে এবছর যে পেয়াঁজ ফলন হয়েছে তার বেশির ভাগেরই ওজন ৮০ গ্রাম ১১০ গ্রাম পর্যন্ত।

NewsDetails_03

বান্দরবানে কৃষি বিভাগের পাশাপাশি একটি বেসরকারী বীজ ও কীটনাশক বিক্রেতা প্রতিষ্টান কৃষকদের বিনামুল্যে বীজ এবং বিভিন্ন সহায়তা প্রদান করে পাহাড়ের বিভিন্ন স্থানে আবাদ শুরু করেছে হাইব্রীড জাতের পেঁয়াজের। দেশী জাতের পাশাপাশি কৃষকরা এখন লালতীর হাইব্রিড জাতের পেঁয়াজের আবাদ করে লাভবান হবে এমনটাই আশাবাদ ব্যক্ত করেছে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

একটি বেসরকারী বীজ পরিবেশক এর বান্দরবান শাখার ম্যানেজার মো:রবিউল হোসেন বলেন, কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আমরা লাল তীরের প্রথম উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাতের পেয়াঁজটি কৃষকের মাঝে বিতরণ করেছি। মূলত বান্দরবানের মাটি ও জলবায়ু পেয়াঁজ চাষের জন্য উপযোগী হওয়ার কারনে প্রথমবারে ভালো ফলন হয়েছে।

বান্দরবানের মাটি ও আবহাওয়া পেয়াঁজ চাষের জন্য উপযোগী,আর এই পেয়াঁজ চাষে কম খরচে অধিক লাভবান হওয়ার কৃষকরা আগামীতে আরো অধিক জমিতে পেঁয়াজের আবাদ করবে বলে আশা করছে কৃষি বিভাগ।

বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি বিভাগের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দীপংকর দাশ বলেন,আমরা সব সময় কৃষকদের বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে থাকি বিশেষ করে কখন সার দিতে হবে,কখন সেচ দিতে হবে। এছাড়াও বিভিন্ন পরামর্শ প্রদান করে থাকি। মূলত পেয়াঁজ চাষে তেমন খরচ আর অতিরিক্ত পরিশ্রম না থাকা এবং বেশি লাভবান হওয়ার ফলে পেয়াঁজের আবাদ বাড়বে।

বান্দরবান সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.ওমর ফারুক বলেন, বান্দরবানের ৭টি উপজেলার মধ্যে পেয়াঁজের আবাদ বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি, যেখানে পারিবারিক পুষ্টিবাগান আছে সেখানে আমরা একটি করে পেয়াঁজের আবাদ করাচ্ছি।

তিনি আরো বলেন, যার ফলে আগে যেখানে বান্দরবানে কোন পেয়াঁজের আবাদ হত না সেখানে এখন আমরা পেয়াঁজের আবাদ বৃদ্ধি করতে কৃষকদের উদ্ভুদ্ধ করতে সক্ষম হয়েছি। মূলত বান্দরবানে তাহেরপুরী পেয়াঁজ আর লাল তীর হাইব্রিড জাতের পেয়াঁজের চাষ এবং ফলন ভালো হয়।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে বান্দরবানে এবার ৪৩হেক্টর জমিতে পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে আর যার বিপরীতে উৎপাদন হয়েছে ৪০৮.৬ মেট্রিক ট্রন, পর্যায়ক্রমে কৃষকদের আরো সহযোগিতা করা গেলে বান্দরবানে পেঁয়াজের আবাদ আরো বাড়বে।

আরও পড়ুন