বান্দরবানে করোনায় কেমন আছে সাংস্কৃতিক কর্মীরা ?

NewsDetails_01

করোনা পরিস্থিতিতে স্থবির হয়ে আছে বান্দরবানের পুরো সাংস্কৃতিক অঙ্গন। মঞ্চগুলোতে আলো জ্বলছে না। আয়োজন নেই কোন সঙ্গীত অনুষ্ঠানের, নেই ক্লাব কমিউনিটি হলের জমকালো কোন অনুষ্ঠান।

সঙ্গীত শিল্পী, অভিনয় শিল্পী, নৃত্য শিল্পী, মঞ্চ শিল্পীসহ সাংস্কৃতিক অঙ্গনের সবস্তরের কর্মীরা এখন পুরোপুরি কর্মহীন অবস্থায় ঘরবন্দি হয়ে আছেন। দীর্ঘদিন গৃহবন্দি এবং শো-বিহীন, আয়বিহীন অবস্থায় থাকা শিল্পী সংস্কৃতি কর্মীদের সহযোগিতা করেছেন পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর এমপি, আর্থিক ভাবে সহযোগিতা করেছেন বান্দরবান জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা।

পাহাড় বার্তা’র পক্ষ থেকে বান্দরবানের জনপ্রিয় সব শিল্পী, সংগঠক ও সংস্কৃতিকর্মীদের সাথে যোগাযোগ করে জানতে চাওয়া হয়েছিলো তারা কেমন আছেন। শিল্পীরা জানিয়েছেন তাদের বর্তমান অবস্থা।

জাহাঙ্গীর আলম,সাংস্কৃতিক কর্মী
বান্দরবানে সবার পরিচিত মুখ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সবাই ঘরে বসে আছে তিন মাস যাবৎ। আমি করোনা সচেতনতা নিয়ে ২৪টি গান করি, তা ফেসবুক পোষ্ট দেয়। আর সামান্য চর্চা যা হচ্ছে তাও মোবাইল লাইভে খুবই সীমিত আকারে। সংগীত নির্ভর যাদের আয়, তারা সম্পূর্ণ বেকার, কিছু খাদ্য সহযোগিতা পেয়েছে।

শহীদ ধ্রুব, সঙ্গীত তারকা
বান্দরবান ছেলে শহীদ ধ্রুব বলেন, বান্দরবানে সাংস্কৃতিক কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত, একটা গ্রুপ পেশাদার, আরেক টা গ্রুপ অপেশাদার। পেশাদার সংস্কৃতিক কর্মীর কোন কাজ নেই, অনুষ্ঠান নেই, আয় রোজগার সবই বন্ধ। পেশাদাররা আসলেই ভালো নেই, এরা প্রচন্ড খারাপ অবস্থায় আছে।

যারা অপেশাদার সংস্কৃতিক কর্মীরা সরকারী/বেসরকারী চাকরীর পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অঙ্গন বা সাংস্কৃতিক কর্মীদের সাথে রয়েছে তাদের তেমন কষ্ট নেই।

NewsDetails_03

তিনি আরো বলেন, শিল্পী সংস্কৃতি কর্মীর পাশাপাশি যন্ত্রশিল্পী, মঞ্চের সাথে সংশ্লিষ্ট লাইট, সাউন্ড সিস্টেমের কর্মী কারো কোন কাজ নেই। তারা তিন বেলা আহার যোগাতে পারছেন না। তারা কষ্টে দিন পার করছেন।

সূরিত বড়ুয়া অপূর্ব, ভোকাল, নির্বাক ব্যান্ড
বান্দরবানের তরুণ গায়ক ও সাংস্কৃতিক কর্মী সূরিত বড়ুয়া অপূর্ব বলেন, মহামারী করোনা ভাইরাসের কারনে খুবই কষ্টকর অবস্থায় আছেন সাংস্কৃতিক কর্মীরা। মার্চের ২৬ তারিখ থেকে টানা বন্ধের কারনে নেই কোন অনুষ্ঠান কিংবা কনসার্ট। শিল্পী কিংবা যন্ত্রীশিল্পীদের আয়ের একমাত্র উৎস হলো সরকারি প্রোগ্রাম, বিভিন্ন কনসার্ট, সামাজিক অনুষ্ঠান। এসব অনুষ্ঠানে একটা সম্মানী পায়, যা দিয়ে অনেক সাংস্কৃতিক কর্মীর পরিবার চলে। বর্তমানে প্রোগ্রাম বন্ধ থাকায় প্রায় সাংস্কৃতিক কর্মীর সংসার চলতে হিমসিম খেতে হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমাদের বান্দরবানের অভিভাবক পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী জনাব বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি মহোদয় সাংস্কৃতিক কর্মীদের জন্য ত্রাণ সামগ্রী দিয়েছেন। করোনা কালে সাংস্কৃতিক কর্মীদের অবস্থা বর্তমানে খুবই খারাপ।এই অবস্থা চলতে থাকলে হয়ত অনেক সাংস্কৃতিক কর্মী সংস্কৃতি জায়গাটা ছেড়ে অন্য কোন পেশায় জীবিকার তাগিদে চলে যাবেন।

হিল্লোল দত্ত বাপ্পা, সাংস্কৃতিক কর্মী
বান্দরবান এ আমরা এমন বেশকজন সাংস্কৃতিক কর্মী বিশেষ করে মিউজিশিয়ান আছি যাদের আয়ের উৎস ছিল মঞ্চ অনুষ্ঠান যা মার্চ থেকে বন্ধ। কেউ কেউ হয়ত পারিবারিক সাপোর্টে চলছে, আবার অনেকেই বিকল্প কিছু করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এ পরিস্থিতিতে বিকল্প উপায়ে আয়ের উৎস খুজে পাওয়া ও কষ্টসাধ্য। আর যেহেতু আমরা সাংস্কৃতিক কর্মী আমরা মঞ্চটাকে মিস করছি খুবিই। আর করনো পরবর্তী সময়েও অনেক সময় লেগে যাবে মঞ্চ অনুষ্ঠান গুলো আগের মত করে হতে। মোট কথায় সাংস্কৃতিক কর্মীরা ভাল নেই এটা আমার মত। ধন্যবাদ, সবাই ঘরে থাকুন নিরাপদ থাকুন।

পিংকি দাশ, নৃত্যশিল্পী
বান্দরবানের মেয়ে পিংকি দাশ। বান্দরবানে অনেক জনপ্রিয় এই নৃত্যশিল্পী। এই নৃত্যশিল্পীও এখন ঘরবন্দি। ভালো না থাকলেও ভালো থাকার চেষ্টা করছি, পাহাড় বার্তা পরিবারকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে শিল্পী মনে করার জন্য। বান্দরবানের প্রতিটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েও শিল্পীদের কোনো সুযোগ সুবিধা পাইনি, মন্ত্রী মহোদয়ের দেয়া উপহারটাও পাইনি। আরও অবাক হলাম, সরকার থেকে অসচ্ছল শিল্পীদের জন্য কিছু টাকা দেয়ার জন্য একটা তালিকা করা হয়েছে, তালিকাটাতে যারা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান গুলোর জন্য পরিশ্রম করে তাদের কারো নাম দেখতে পেলামনা।

নাছির উদ্দীন জুয়েল, সাংস্কৃতিক কর্মী
বান্দরবানে জনপ্রিয় মিউজিশিয়ান নাছির উদ্দীন জুয়েল বলেন, ইনশা আল্লাহ এখনো পর্যন্ত সবাই ভাল আছি।

আরও পড়ুন