বান্দরবানে শান্তি ফেরাতে ক্য শৈ হ্লা’র নতুন মিশন

কেএনএফ প্রসঙ্গ

NewsDetails_01

বান্দরবান পার্বত্য জেলায় শান্তি ফেরাতে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সশস্ত্র শাখা কুকি চিন ন্যাশনাল আর্মি (কেএনএ) সদস্যদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে আলোচনার পাশাপাশি পরিস্থিতি উত্তোরণে বিভিন্ন উদ্দ্যেগ গ্রহন করা হয়েছে। আর এই উদ্দ্যেগের নেপথ্যে প্রধান ভূমিকা রাখেন, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গত ২৯ মে পার্বত্য জেলা পরিষদ এর উদ্যোগে শহরের অরুণ সারকি টাউন হলে বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নেতৃবৃন্দের অংশগ্রহণে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত নেতারা সংঘাতময় পরিস্থিতির ইতিবাচক উত্তোরণ কামনা করেন। গত ৯ জুন বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর নেতাদের উপস্থিতিতে পাহাড়ে শান্তিপূনঃ প্রতিষ্ঠা করার জন্য পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ক্য শৈ হ্লা এর নেতৃত্বে ১৮ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন হয় এবং কমিটির লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসহ কর্ম পরিকল্পনা তৈরি করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শান্তি কমিটির লক্ষ্য:
দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি অগাধ বিশ্বাস ও আনুগত্য রেখে বান্দরবানে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে বিদ্যমান পরিস্থিতির নিরসন এবং কেএনএ সদস্যদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা। কমিটির কোন সদস্যের শান্তি প্রতিষ্ঠা ব্যতিত ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক কিংবা অর্থনৈতিক কোন স্বার্থ নাই এবং সংঘাতে জড়িত কোনপক্ষের স্বার্থের জন্য কাজ করবেনা বলে অভিমত প্রকাশ করা হয়।

দ্রুত শুরু হবে সংলাপ:
কেএনএ’র সকল সদস্যকে স্বাভাবিক জীবনের ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে সরকার এবং কেএনএ এর সাথে সংলাপের উদ্যোগ গ্রহণ করার অংশ হিসাবে বম এসোসিয়েশনের সভাপতি লাল জার বম কেএনএফ এর প্রধান নাথান বম এর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন। এই বিষয়ে কেএনএফ থেকেও আশানুরুপ সাড়া পাওয়া গেছে। সংঘাতময় পরিস্থিতির কারনে জেলার যে সব এলাকায় খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে, সেসব এলাকায় খাদ্য সহায়তা নিশ্চিত করাসহ পূর্নবাসন প্রক্রিয়ারও উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

NewsDetails_03

শান্তি ফেরাতে যে পরিকল্পনা:
এই কমিটি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য সেনাবাহিনী, জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীসহ সরকারের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে সমন্বয় সাধন এবং কেএনএ এর সাথে জড়িত সদস্যদেরকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার জন্য অংশ হিসাবে পত্র প্রেরণ করা। মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি বন্ধের জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও ক্ষয়-ক্ষতির হিসাব তৈরি করা। নিজ বাড়িঘর ছেড়ে বিভিন্ন এলাকায় আশ্রয় নেওয়াদের নিজগৃহ ও ক্ষেত খামারে ফিরে আসার জন্য অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে উদ্যোগ গ্রহণ করা।

যা বলছেন নেতারা:
এই ব্যাপারে বান্দরবানের হোটেল মোটেল মালিক সমিতির অর্থ সম্পাদক রাজীব বড়ুয়া বলেন, পরিস্থিতির কারনে পর্যটন খাত ধংসের শেষ প্রান্তে। যত দ্রুত বান্দরবানে শান্তি ফিরবে, তত দ্রুত পর্যটন ব্যবসায়িসহ সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে।

এই বিষয়ে শান্তি কমিটির মূখপত্র পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য কাঞ্চন জয় তঞ্চঙ্গ্যাঁ বলেন, কুকি চিন দ্বারা নানা তৎপরতার কারনে জেলার কয়েকটি অঞ্চল ঝুঁকিপূর্ন হয়ে পড়েছে, জনজীবনে বিপর্যয় ও পর্যটন শিল্প ধংসের পথে, নিহত ও আহতের ঘটনা ঘটেছে। আমরা সবাই এই অবস্থার পরিবর্তন চাই বলে শান্তির উদ্দ্যেগ গ্রহন করা হয়েছে।

এই ব্যাপারে শান্তি প্রতিষ্ঠা কমিঠির আহবায়ক, বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ক্যাশৈহ্লা বলেন, কিছু বম ছেলে মেয়ে অস্ত্র ধরেছে, বিপথগামী হয়েছে, তাদের শান্তির পথে ফিরিয়ে আনতে সেই বিষয়ে সবাই একত্রে হয়ে কাজ করবো।

প্রসঙ্গত, সংঘাতময় পরিস্থিতির কারনে গত বছরের অক্টোবর থেকে জেলার ৩ উপজেলায় পর্যটক যাতায়তে নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। চলতি বছরে ৫ শতাধিক বম জাতিগোষ্ঠির মানুষ ভারতের মিজোরামে আশ্রয় গ্রহন করে। নিজ বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়ে অন্যত্র আশ্রয় গ্রহন করে অন্য জাতিগোষ্ঠীর মানুষও । এই ঘটনায় ৫ সেনা সদস্য নিহত ও কেএনএফ সদস্যসহ নিহত হয় আরো ১৬ জন, অপহরণের শিকার হয় অন্তত ২০ জন।

আরও পড়ুন