বান্দরবান পাহাড় ধসে আহত ৬, খোলা হয়েছে ১৯৩টি আশ্রয় কেন্দ্র

NewsDetails_01

বান্দরবান পার্বত্য জেলায় টানা চারদিনের অবিরাম বর্ষণে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসে সড়ক, ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসময় জেলা শহরের বীর বাহাদুর নগর ও ইস্টেডিয়াম এলাকায় পাহাড় ধসে দুইজন আহত হয়।

আহতরা হলেন, মোঃ রিদোয়ান (১৯), রুমি আক্তার (২৮)। অন্যদিকে নাইক্ষ্যংছড়ির করিমার ঝিরি জসিম উদ্দিনের মাটির বাড়িতে দুপুর ১২ টার সময় পাহাড় ধসে পড়ে ঘরে থাকা তার স্ত্রী রোকসানা (২৪), তার মেয়ে আনিকা (৮), জেসমিন (৬), শাহাজালাল (দেড় বছর) আহত হয়েছে। এর মধ্যে রোকসানা বেগমের অবস্থা আশংকা জনক হওয়ায় উন্নত চিকিৎসার জন্য কক্সবাজার মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানেো হয়েছে।

বান্দরবান সদর হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আরএমও ইফতিয়াক জানান, রোববার সকালে শহরের বীর বাহাদুর নগর ও ইস্টেডিয়াম এলাকায় পৃথক ঘটনায় বসতবাড়ির উপর পাহাড় ধসে পড়ে, এসময় মোঃ রিদোয়ান ও রুমি আক্তার আহত হলে স্থানীয়রা তাদের উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে ভর্তি করেন।

আরো জানা যায়, বান্দরবানের সাঙ্গু নদীতে পানি বাড়ার কারনে শহরের বিভিন্ন এলাকার নিন্মঞ্চল বন্যায় প্লাবিত হওয়ায় এবং পাহাড় ধসের ঝুঁকি থাকায় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে দেড় শতাধিকের মত লোকজন। প্রাণহানির আশঙ্কায় পাহাড় ধস এবং নদীর তীরবর্তী এলাকার লোকজনদের ঝুঁকিপূর্ণ বস্তিগুলো ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে মাইকিং করা হচ্ছে।

রোববার সকাল ৯টা পর্যন্ত গত চব্বিশ ঘন্টায় ১৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা এবছরে সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত এ জেলায় জানিয়েছেন বান্দরবান মৃত্তিকা পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মাহাবুবুল ইসলাম।

NewsDetails_03

এদিকে টানা বৃষ্টিতে পাহাড় ধসে পড়েছে বান্দরবান-কেরাণীহাট-চট্টগ্রাম মহাসড়ক, বান্দরবান-রাঙ্গামাটি সড়ক, লামা-সুয়ালক সড়ক, রোয়াংছড়ি-রুমা অভ্যন্তরীণ সড়কের বিভিন্ন স্থানে। এছাড়াও জেলা সদরের লেমুঝিরি এলাকা, বালাঘাটা, কালাঘাটা, বনরুপা পাড়া,কানা পাড়া, ইসলামপুর, হাফেজঘোনা এলাকায় বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। ভারী বর্ষণে বান্দরবানে সাঙ্গু নদীর পানিও বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে শহরের আর্মিপাড়া, ইসলামপুর, লাঙ্গী পাড়াসহ নদীর তীরবর্তী এলাকা প্লাবিত হয়েছে।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার থেকে বান্দরবান জেলার ৭টি উপজেলায় অবিরাম বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। ইতোমধ্যে জেলার সাতটি উপজেলায় ১৯৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে। দূর্গত মানুষদের জন্য ২০ মেঃ টন খাদ্য শস্য ও নগদ ১ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গঠন করা হয়েছে ৪৩ টি মেডিকেল টীম। দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস সদস্যদের।

সরকারি তথ্য মতে, বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসে ২০১৭ সালে ১৬৮ জনের প্রাণহানি ঘটে আর আহত হয় ২২৭ জন। পাহাড় ধসে ১৭সালে ৩ হাজার ৭৫টি বাড়ি সম্পূর্ণ ও ৩৬ হাজার ৬৩৭টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

জেলা তথ্য অফিস সুত্রে জানা য়ায়, গত ৫ বছরে বান্দরবানে পাহাড় ধসে ২১ জন নিহত হন। তৎমধ্যে ২০১৭ সালের ১৩ জুন সদরের কালাঘাটায় ৭, রুমা সড়কে ২৩ জুলাই ৫, ২০১৮ সালের ৩ জুলাই কালাঘাটায় ১ ও লামায় ৩, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই লামাতে ১, ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর আলীকদমের মিরিঞ্জা এলাকায় ১ ও ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর ছাইঙ্গ্যা ঝিরিতে একই পরিবারের ৩ জন।

এই ব্যাপারে জেলা প্রশাসক শাহ মোজাহিদ উদ্দিন বলেন, টানা বৃষ্টিতে প্রাকৃতিক দুর্যোগের শঙ্কা বাড়ার কারনে আশ্রয় কেন্দ্রে আশ্রয় নিচ্ছে লোকজন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে প্রশাসনের।

আরও পড়ুন