বিধবা মেরী ত্রিপুরা’র জীবন সংগ্রাম

NewsDetails_01

তিন সন্তানে মা। মেরী ত্রিপুরা (২৪)। সাপের কামড়ে মারা যায় স্বামী। আয়ের একমাত্র সম্বল ছিল চা দোকানটি। তিন-চার মাসের মাথায় বন্যায় চায়ের দোকানটি পানিতে তলিয়ে ভেঙ্গে দেয়। এতে বাসস্থান ও দৈনন্দিন খাবার যোগার কঠিন হয়ে পড়ে মেরী ত্রিপুরার। তারপরও জীবন বাঁচার সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। বান্দরবানের রুমা সদর ইউনিয়নের ১নং ঘাটে দোকানে চা বিক্রি করেন এখন মেরী ত্রিপুরা। এ প্রতিবেদক আজ শুক্রবার বিকালে তাঁর দোকানে গিয়ে কথা বলেন।

মেরী ত্রিপুরা বলেন, দোকানে সামনে অংশে চা বিক্রি করেন। আরেকটি অংশে রান্না করা হয়, পাশে মাচাং। ওখানে আমার স্বামী, ছেলে, মেয়ে ও আমি এক সাথে ঘুমাই।

মেরী ত্রিপুরা বলেন, গত জুন মাসে তৃতীয় সপ্তাহ একদিন রাতে ঘুমান্ত অবস্থায় আমার স্বামী বাম হাতের বাহুতে অজ্ঞাত এক সাপ কামড় দেয়। তাৎক্ষণিক প্রচন্ড ব্যথায় হাতটি ফুলে যায়। প্রয়োজনমত টাকা-পয়সা না থাকায় স্থানীয় ফার্মেসীতে চিকিৎসা নিয়ে চিকিৎসা করে ভাল না হলে বিভিন্ন জনের সহযোগিতায় পরে চট্টগ্রামে নিয়ে যাওয়া হয় স্বামী বিরেন্ট ত্রিপুরাকে। কিন্তু দুর্ভাগ্য,পথেই তিনি মারা যায়।

মেরী ত্রিপুরা বলেন, আমার স্বামী মরে যাওয়ার পর দোকানও বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম। স্বামীর অনুপস্থিতিতে ঘরে কী খাব, কী না করব, তা কোনো কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না। এ অবস্থায় আগস্ট মাসে প্রথম দিকে প্রবল বৃষ্টিপাতের বন্যা শুরু হয়। বাড়তে থাকে পানি। নিরাপদ আশ্রয়ের জন্য রাস্তার ওপারে ত্রিপুরা কল্যাণ সংসদ ভবনে দু’তলায় আশ্রয় নেন বিধবা মেরী ত্রিপুরা পরিবারের সদস্যরা। দুইদিন থাকার পর ওই ভবনে দু’তলায় পৌঁছে যায়-পানি। ততক্ষণে মেরী ত্রিপুরা দোকান বাড়ি সম্পূর্ণ ডুবে গিয়েছিল।

NewsDetails_03

এদিকে ভবনের বারান্দায় সব লোহার গ্রিল। বের হয়ে যাওয়া কোনো সুযোগ নেই। অন্যদিকে দু’তলায় ফ্লোরেও বন্যার পানি ওঠে শুরু করে। মেরী ত্রিপুরা দুশ্চিন্তায় অস্থির হয়ে মা ও ছেলে মেয়েরা চিৎকারে কান্নাকাটি করতে থাকে। পরে রুমা সাঙ্গু সরকারি কলেজে ডমং মার্মাসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী সাঁতার কেটে গিয়ে ওই ভবনের বারান্দার গ্রিল কেটে বের করে নেয়। নৌকায় করে নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয়া হয়।

মেরী ত্রিপুরা বলেন, বন্যার পানি কমে যাওয়ার পর এমনিতে দোকানতো গেছে। আগের ভবনে আশ্রয় নিতে শুরু করি। তখনই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল, কী খাব, কি কাজ করে বাচ্চাদের লালন পালন করব। ওই সময় বিজিবি ও সেনাবাহিনীরা চাল, ডাল ও তেল দিয়েছিল। ওইসব খাবার খেয়ে সকাল- বিকাল দোকানে কাদা মাটি সরিয়ে ছিলাম।

ঠিক তখন আমাদের মেম্বার অংচিনি (অংসিংনু মারমা) জেলা পরিষদ থেকে তাকে ৫ হাজার টাকা দেয়ার কথা জানায়। কিন্তু ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলেন না মেরী ত্রিপুরা।

তিনি বলেন, জেলা পরিষদ থেকে অনুদান ৫হাজার টাকা দিয়ে দোকানটা কোনো রকম দাঁড় করিয়েছি। তারপর ভেবে পাচ্ছিলাম না, দোকানের মালামাল এর জন্য কোথায় টাকা পাব। ঠিক ওইসময় কারিতাস ও হিউম্যানিটারিয়ন সংস্থা আমার নাম তালিকায় নিয়ে নগদ ৫ হাজার পাঁচশত টাকা ও ত্রাণ সামগ্রি দিলেন। এই টাকা কোথাও খরচ না করে সব দোকানের মালামাল কিনে নিয়েছি।

এখন প্রতিদিন চা-বিস্কুট ও পান বিক্রি হয়। এক থেকে দেড় হাজার টাকা। খরচ বাদ দিলে দিন শেষে হাতে থাকে তিন-চারশ টাকা। এটার বাইরে সব টাকা কোম্পানি নিয়ে যায়, আর কিস্তি দিয়ে ফেলি।
এভাবে চলছে-তিন সন্তানের মা বিধবা মেরী ত্রিপুরার জীবন সংগ্রাম।

আরও পড়ুন