বেলুন মেকার দিয়েই চলছে দীঘিনালা আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার

৮ বছর ধরে জনবল সংকট

NewsDetails_01

দীর্ঘ ৮ বছর ধরে জনবল সংকট ও কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় ধুঁকছে খাগড়াছড়ির দীঘিনালার পোমাংপাড়ায় অবস্থিত প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটি। শুরু থেকেই প্রয়োজনের চার ভাগের এক ভাগ জনবল দিয়ে চলছে অফিসের কার্যক্রম। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে কর্মরত ২ জন। একজন বেলুন মেকার সুগতি চাকমা নিয়মিত ডিউটি করলেও অভিযোগ রয়েছে উচ্চ পর্যবেক্ষক মোঃ মনিরুজ্জামান নিয়মিত ডিউটি কবেননা। এতে একদিকে যেমন আবহাওয়ার পূর্বাভাসসহ অফিসিয়াল কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অন্যদিকে তাদের অপরিচ্ছন্নতা, অব্যবস্থাপনা ও আশেপাশে সেগুনবাগান থাকায় আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটিতে ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।

জানা যায়, ২০১৪ সালে উপজেলার পোমাংপাড়া এলাকায় প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যায়ে প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারটি নির্মাণ করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। এখানে রয়েছে বাতাসের গতিবেগ, বৃষ্টিপাত, বায়ুচাপ ও তাপমাত্রা এবং বাতাসের দিক নির্ণয়ের আধুনিক যন্ত্রপাতি। তবে সেগুন বাগান অফিসের চারপাশেই। আর এ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার থেকে ঢাকার প্রধান আবহাওয়া কেন্দ্রে তথ্য পাঠানোর কথা। সে অনুযায়ী সারাদেশের চাষের সুবিধার্থে অনুকুল আবহাওয়া এবং বৈরি আবহাওয়ার বার্তা জানানোর কথা কৃষকের মাঝে; যা কৃষিতে সুফল আনার কথা ছিল। তার কিছুই হয়নি।।

তবে কর্তৃপক্ষের অপরিচ্ছন্নতা, অব্যবস্থাপনা ও বেখেয়ালে যন্ত্রপাতি অকেজো হওয়ার পাশাপাশি এখানে যেনো এক ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের৷

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ অফিস সূত্রে জানা যায়,‘বিশ্ব আবহাওয়া নীতিমালা অনুযায়ী আবহাওয়ার পূর্বাভাস সংক্রান্ত যন্ত্রপাতি থেকে ৩৩০ গজ দূরত্বে বাগান বা বৃক্ষ থাকলে সংকেত গ্রহণ ও প্রেরণে জটিলতা তৈরি হয়। কিন্তু এ আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পাশেই সেগুন বাগান থাকায় কাজ করা যাচ্ছে না।’ সূত্র জানায়, ‘এই নিয়ে সেগুন বাগান মালিকের সঙ্গে কার্যকরী আলাপ না হওয়ায় তা ঝুলে রয়েছে।’

NewsDetails_03

গত বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে মেইন গেইট তালাবদ্ধ। চারদিকে সুনসান নীরবতা। পরে দ্বায়িত্বরত বেলুন মেকার সুগতি চাকমার সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারে ছুটে আসেন। তখন প্রায় বেলা ১২ টা। তিনি জানান, এ অফিসে তিনিসহ মাত্র দুইজন কর্মরত রয়েছেন। আরেকজন উচ্চ পর্যবেক্ষক মোঃ মনিরুজ্জামান গত ৪ অক্টোবর থেকে ছুটিতে গেছেন। তবে হাজিরা খাতা দেখা যায়, তিনি গত ৩০ সেপ্টেম্বর থেকে অনুপস্থিত।

এ সময় উচ্চ পর্যবেক্ষক মোঃ মনিরুজ্জামানের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “স্ত্রী’র অসুস্থতার কারনে তড়িঘড়ি করে ছুটিতে চলে আসায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করা হয়নি। এ সময় তিনি নিজের ভুলের কথা স্বীকার করেন।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার ঘুরে দেখা যায়, চারদিকে জঙ্গলে ঘিরে রেখেছে মেইন গেইটের চেকপোস্ট সহ ভবনের চারপাশ। ভবনগুলোর বিভিন্ন কক্ষে ময়লা জমে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সবমিলিয়ে যেনো এক ভুতুড়ে পরিবেশ বিরাজ করছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের উপ পরিচালক সৈয়দ আবুল হাসানাৎ বলেন, নির্মাণের পর থেকেই এই আবহাওয়া পর্যবেক্ষণারে জনবল সংকট চরমে। যেখানে একজন আবহাওয়াবিদ, ১জন আবহাওয়া সহকারী, ১জন ওয়ারলেস সুপারভাইজার, ১জন উচ্চ পর্যবেক্ষক, ১জন পর্যবেক্ষক, ১জন বেলুন মেকার, ১জন নিরাপত্তা প্রহরী ও ১জন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর চাহিদা রয়েছে সেখানে মাত্র ১জন উচ্চ পর্যবেক্ষক ও ১ জন বেলুন মেকার দিয়ে অফিসের কার্যক্রম চালাতে হচ্ছে। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জনবলের চাহিদাপত্র প্রেরণ করলেও কোন প্রতিত্তোর পাচ্ছিনা। তবে যারাই সেখানে কর্মরত রয়েছে তারা যাতে ঠিকভাবে ডিউটি করে সে বিষয়টি আমরা দেখবো।

আরও পড়ুন