মাটিরাঙ্গায় তামাকের জমিতে কুল চাষে সফলতা

NewsDetails_01

পাহাড়ের মাটিতে তামাক চাষ চেড়ে কুল চাষ করে চমক সৃষ্টি করেছেন কৃষক মাহবুব মেম্বার। তার নামেই ওই এলাকার নামকরণ করা হয় মাহবুব মেম্বার পাড়া। তিনি গোমতী ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের সাবেক মেম্বার ছিলেন। জন প্রতিনিধিত্ব ছেড়ে কৃষি কে জীবিকা হিসেবে বেছে নেন তিনি।

সমতল হবার দরুন পানি জমে থাকার সম্ভাবনা থাকে না বিধায় এসব জমিতে কুল চাষে ভাল ফসল পাওয়া যায়। এ জমিতে বিগত বছরগুলোতে তিনি তামাক চাষ করতেন।

বিষবৃক্ষ তামাক চাষের ক্ষতি এড়াতে তামাক চাষ কে নিরুৎসাহিত করতে উদ্যোগী হয়ে এবার তামাকের জমিতে কুল চাষ করে ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। ছোট ছোট খোপের সাদা জাল বেষ্টিত দৃষ্টিনন্দন কুল বাগান দেখতে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। বাগানের ভেতরে ডুকতে না পারলেও বাহির থেকে দেখে তৃপ্তি মিটছে অনেকের। স্বাদ ও পুষ্টিতে মৌসুমি ফল কুল একটি উৎকৃষ্ট মানের ফল। মানব দেহের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন খনিজ দ্রব্য ও ভিটামিনের উৎস হচ্ছে কুল।

সরেজমিনে বাগানে গুরে দেখা যায়, খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার গোমতী ইউনিয়নের মাহবুব মেম্বার পাড়ায় নিজস্ব আড়াই একর জমিতে শীতের হালকা বাতাসে সোনালী হলুদ আভার বল সুন্দরী কুল দুলছে বাগানে। প্রতিটি গাছে গাছে দুলছে কাশ্মীরীকুল। বাগান থেকে কুল সংগ্রহের কাজে ব্যস্ত কেফায়েত সহ আরও কয়েকজন শ্রমিক। বাদুড়, কাঠবিড়ালী ও বিভিন্ন পোকামাকড়ের উপদ্রব থেকে রক্ষা পেতে বাগানের উপরিভাগ থেকে চারদিকে নেট ও চারপাশ তারকাঁটা দিয়ে ঘেরাও দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বাগানের অভ্যন্তরে উৎসুক জনতার দেখা মিলছে, তারা বাগান থেকে সতেজ কুল ক্রয় করতে এসেছে। তাদের হৈ হুল্লোড়ে আর আনন্দ চিৎকারে পুরো বাগান যেন মুখরিত।

চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে গাছ লাগানো শুরু করেন কৃষি উদ্যেক্তা মাহমুদ মেম্বার। বলসুন্দরী, বাউকুল, আপেলকুল, কাশ্মীরীকুল মিলে ৮৫০ টির চার প্রজাতির কুল গাছ রয়েছে এ বাগানে। প্রতিদিন ১০/১২জন শ্রমিক এ বাগানে কাজ করে তাদের সংসার চালায়। মাহবুব তার ছেলে ও নাতিসহ তিন প্রজন্ম মিলে গড়ছেন বাগান টি। মাহবুব মেম্বারের ছেলে খাগড়াছড়ি তে চাকরি করেন একই সাথে তার নাতি কেফায়েত কুমিল্লা দেবিদ্বার সুজাত আলী কলেজে অনার্স পড়ুয়া। কৃষিকে ভালবেসে কেফায়েত পড়াশোনার পাশাপাশি এ বাগান পরিচর্যা করেন।

NewsDetails_03

মাহবুব মেম্বার বলেন, এ জমিটি আমার নিজের, আগে আমি এ জমিটি তামাক চাষের জন্য লিজ দিতাম তামাকের ক্ষতিকর দিক লক্ষ্য করে উপজেলা কৃষি অফিসের পরামর্শে আমি নিজ উদ্যেগে এ জমিতে কুল বাগান করি। আমার বাগানে পর্যাপ্ত পরিমাণে কুল এসেছে তাতেই আমি সফল। আগামী তে ফলন আরো ভালো হবে বলে আশা করছি। গাছ প্রতি ১২/১৩ কেজি কুল এসেছে। প্রতি কেজি কুল জাতভেদে ১২০ থেকে টাকা থেকে ১শত টাকা করে পাইকারি বিক্রি করা হচ্ছে। দ্বিতীয় বছর থেকে কুলের পরিমাণ দ্বিগুণ হতে পারে। আর এভাবে টানা ৫-৭ বছর পর্যন্ত ফল বিক্রি করা যাবে। পুরো বাগানে খরছ লেগেছে ৪লাখ। সে হিসেবে এ বছর আমরা প্রায় ১০ লাখ টাকার কুল বিক্রি করতে পারবো বলে আশা করছি।

অনার্স পড়ুয়া কেফায়েত বলেন, ছোট বেলা থেকেই কৃষির প্রতি আমার আলাদা ভালো লাগা ছিল। লেখাপড়ার পাশাপাশি চাকরির পিছনে দৌড়ে অলস সময় নষ্ট না করে কৃষিতে সময় দিলে বেকারত্ব ঘুচবে একই সাথে কৃষি নির্ভর দেশ কৃষিতে সমৃদ্ধ হবে।

কুল ক্রয় করতে আসা জসিম উদ্দিন বলেন, সরাসরি বাগান থেকে কুল ক্রয় করতে এসেছি। প্রাকৃতিক এবং ভেজালমুক্ত বিধায় বেশি করে কুল ক্রয়পূর্বক আত্মীয়ের বাড়ি পাঠাবো।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. জয়নাল আবেদিন বলেন, অত্র উপজেলার বিভিন্ন স্থানে যদি তামাকের জমিতে এভাবে কুল সহ অন্যান্য লাভজনক কৃষিজ পণ্যের আবাদ করা যায় তাহলে পরিবেশের ক্ষতি এড়িয়ে কৃষক লাভবান হবার পাশাপাশি অত্র উপজেলায় কৃষি বিল্পব ঘটবে বলে আমি মনে করি।

মাটিরাঙ্গার মাটি ও জলবায়ু কুল চাষে জন্য উপযোগী তাই এই ফল চাষে সাফল্যের সম্ভাবনা রয়েছে জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সবুজ আলী বলেন, রৌদ্রুজ্জ্বল, উচুঁ জমিতে কুল বাগান ভালো হয়। যে বাগানে যত বেশি রোদের আলো লাগবে সেই জমির কুল বেশি মিষ্টি হবে। নতুনভাবে কেউ যদি কুলের বাগান করতে পরামর্শ চান তাকে অবশ্যই সার্বিক সহযোগিতার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়া হবে।

আরও পড়ুন