মাটিরাঙ্গায় মৌসুমী ফলের সমাহার

NewsDetails_01

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা বাজারে এখন মৌসুমি ফলের সমাহার। মধুমাস জ্যৈষ্ঠের শুরুতেই মৌসুমি ফলে সয়লাব স্থানীয় বাজার। স্থানীয়দের চাহিদা মিটিয়ে বাজারজাত হয়ে যাচ্ছে জেলার বাইরেও। এরমধ্যে বাজারে এসেছে টসটসে রসালো মিষ্টি আনারস ও কাঁঠাল। আসতে শুরু করেছে লিচু। আসছে পাকা আম। তাছাড়া মৌসুমজুড়ে রয়েছে কলা।

মাটিরাঙ্গা বাজারের প্রধান সড়ক এখন মৌসুমি ফলের দখলে। প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে পড়ন্ত বিকেল পর্যন্ত ক্রেতা-বিক্রেতার পদচারণায় বাজার থাকে মুখর।

তবে এখানে মৌসুমে লিচুর চাহিদা ই বেশি। বাজার এখন লিচুর দখলে, দেশি লিচুর চেয়ে চায়না টু এবং চায়না থ্রি লিচুর চাহিদা বেশি। ফলন বেশি হওয়ায় প্রতিটি লিচুর আকার ভেদে এবার কম দামে বিক্রি হচ্ছে। দেশি লিচু প্রতি’শ লিচু ৬০ টাকা থেকে শুরু করে ১শত টাকা। চায়না টু বিক্র হচ্ছে ১শত থেকে ১শত ২০ টাকায়। তাছাড়া চায়না থ্রি বিক্রি হচ্ছে ১শত ৫০ টাকা থেকে ২শত ৫০ টাকায়। বাদুড়, আর বানরের আক্রমনের কারণে লিচু পরিপক্ব হবার আগেই অপরিপক্ব লিচু বিক্রি করছেন বাগান মালিকরা।

মাটিরাঙ্গা শহরটি ঢাকা-চট্রগ্রাম-খাগড়াছড়ি আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে হবার দরুন প্রতিদিন মাটিরাঙ্গা পেরিয়ে হাজারো পর্যটক জেলা শহরের বিভিন্ন পর্যটন এলাকসমূহতে যাতায়াত করার সময় গাড়ি থেকে নেমে তারা মৌসুমী ফল ক্রয় করে থাকেন। এ অঞ্চলের আম, লিচু, কাঁঠাল ফরমালিনমুক্ত বিধায় শহরে এসব ফলের কদর খুব বেশি। পর্যটকরা তাদের নিজেদের গাড়ি ভর্তি করে এসব ফল ক্রয় করে থাকেন। আবার অনেকে নিজের আত্মীয় স্বজনদের মৌসুমী ফল উপহার দিতেও কিনে নেন এসব ফল। ফলে ব্যাস্ত সড়কের পাশেই বিভিন্ন ফলের পসরা সাজিয়ে বসে থাকেন ব্যাবসায়ী ও স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাহাড়ে উৎপাদিত প্রচুর মৌসুমি ফল নিজেদের সুবিধামতো পরিবহন করে আনা হচ্ছে মাটিরাঙ্গায়, পৌর এলাকায় কলা বাজার নামে খ্যাত ওই এলাকায় প্রায় আধা কিলোমিটার জায়গাজুড়ে রয়েছে লিচু, আম, কলা কাঁঠলের হাট। প্রতিদিন উপজেলার তাইন্দং, তবলছড়ি, বড়নাল, আমতলী, বেলছড়ি, ১০ নম্বর, বাইল্যাছড়ি এলাকা থেকে এসব কলা, কাঁঠাল বাজারে নিয়ে আসছেন ক্রেতারা।

NewsDetails_03

ফল ব্যাবসায়ী কাইউম জানান, আমি ১০ নম্বর এলাকায় প্রায় ১০ একরের একটি মিশ্র ফলের বাগান ক্রয় করেছি। এ বছর শুধুমাত্র কাঁঠালের দাম বেশি কিন্তুু লিচু আম বা অন্যান্য ফলের দাম কম তবে দাম কম হলেও ফলন ভাল হয়েছে তাই বেশ লাভবান হবো আশা করছি।

কাঁঠাল বিক্রেতা আরিফ হোসেন জানান, তবলছড়ির বিভিন্ন স্থান থেকে আগাম কাঁঠাল বাগান ক্রয় করে থাকি। তবলছড়ি থেকে এক পিকআপ যোগে কাঁঠাল নিয়ে এসেছি। এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। তাছাড়া দাম ভালো হওয়ায় লাভও বেশি হচ্ছে।

চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী জামাল জানান, শহরে পাহাড়ের মৌসুমী সকল ফলেন বেশ চাহিদা থাকায় শখের বসে অনেকে অগ্রিম অর্ডার দিয়ে রাখেন। মাটিরাঙ্গার কাঁঠাল, লিচু বেশ সুস্বাদু এবং বিষমুক্ত। তাই এর চাহিদাও বেশি।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার অফিস সূত্রে জানা যায়, মাটিরাঙ্গা উপজেলায় এবার প্রায় ৫০০ হেক্টর জমিতে কাঁঠালের আবাদ করা হয়। ৩৫ মেট্রিকটন পার হেক্টর জমিতে কাঁঠালের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারন করা হয়েছে। এছাড়া মাটিরাঙ্গায় ৫শত ৫০ হেক্টর জমিতে আমের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। তবে হেক্টর প্রতি ফলন ১০ মেট্রিক টন। আমের মোট উৎপাদন ৫ হাজার ৫শত মেট্রিক টন। এদিকে ৮০ হেক্টর জমিতে লিচুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, প্রতি হেক্টরে ফলন ১১.৫ মেট্রিক টন।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আমির হোসেন বলেন, পাহাড়ে উপযোগী আবহাওয়া ও মাটির উর্বরাশক্তির পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তির চাষাবাদ হওয়ায় বর্তমানে আনারস, কাঁঠাল, আম, লিচুসহ মৌসুমি ফলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে। চাষাবাদে প্রশিক্ষণসহ কৃষকদের বিভিন্ন সহায়তা দেয়া হচ্ছে।

কৃষি বিভাগের সহায়তায় উন্নত প্রযুক্তির চাষাবাদে আশাব্যঞ্জক ফলন পাওয়া যাচ্ছে জানিয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মা‌টিরাঙ্গার মা‌টি ও আবহাওয়া অনুকূল হওয়ায় এখা‌নে প্রায় সব ফলের ভাল ফলন হয়। তবে লাভের আশায় দেশ আম, লিচু, কাঁঠাল অপরিপক্ব ই বিক্রি করা হচ্ছে। তবে এবার সকল ফলের ভাল ফলন হওয়ায় কৃষক ও ব্যবসায়ী উভয়ে লাভবান হবেন বলে জানান তিনি।

আরও পড়ুন