মাটিরাঙ্গায় যত্রতত্র বর্জ্য; ব্যবস্থাপনায় নেই কোন উদ্যগে

NewsDetails_01

খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গার পুরো পৌর এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকে আবর্জনা। পর্যাপ্ত ডাস্টবিন বা নির্দিষ্ট স্থান না থাকার দরুন বসতবাড়ি ও ব্যবসায়ীসহ যত্রতত্র ময়লা ফেলে সবাই। প্রতিদিন ময়লা-আবর্জনা ও দুর্গন্ধকে পাশ কাটিয়ে চলছে জনসাধারণ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা। পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা সম্পূর্ণভাবে এসব বর্জ্য পরিষ্কার না করার কারণে পৌর এলাকায় বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য দেখা যায় ফলে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি সহ বাড়ছে জনভোগান্তি। তাছাড়া মাটিরাঙ্গয়া বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন থাকলেও নিজ উদ্যেগে পরিষ্কারের দায়িত্ব নেয়নি কেহ।

সচেতন মহলের মতে, এভাবে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলায় পরিবেশ দূষনের পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে পৌরসভার সৌন্দর্য। বিষয় টিকে উদাসীনতা হিসেবে দেখছেন অনেকে। পৌর এলাকা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার উদ্যোগ না নেওয়া কর্তৃপক্ষের দায় এড়াতে পারেন না বলে মন্তব্য করেন তারা। তাদের মতে, মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকায় সংগৃহীত বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ ও জৈব সার উৎপাদন করা সম্ভব। আহরিত বর্জ্য যথাযথ পরিকল্পনার মাধ্যমে পরিণত হতে পারে মূল্যবান সম্পদে।

সরেজমিনে দেখা যায়, মাটিরাঙ্গায় পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে ময়লা আবর্জনার স্তুপ। মাটিরাঙ্গায় স্থাপিত জেলা পরিষদের বিশ্রামাগারে অভ্যন্তরের আশপাশের হোটেলের বর্জ্য সহ বিভিন্ন স্থানের ময়লা ফেলা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে এসব ময়লা ফেলানোর ফলে বর্জ্যের একটি বিশাল স্তুপ হয়ে দূর্গন্ধ ছড়াচ্ছে ফলে পরিবেশের দারুন ক্ষতি হচ্ছে। ফলে চরম ভোগান্তিতে জনসাধারণ। তাছাড়া মাটিরাঙ্গা থানার নিছের মোড়ে পড়ে আছে ময়লার বিশাল স্তুপ কত বছর থেকে এ স্থানে ময়লা ফেলানো হচ্ছে সেটা ঠিক করে কেউ বলতে পারছেন না। এদিকে চৌধুরী পাড়ায় যাবার মোড়ে, ঈদগাঁর সামনের রাস্তায়, হাসপাতাল পাড়ার মোড়ে, তরকারি বাজারের প্রবেশদ্বারে প্লাস্টিকের বোতল, পলিথিন, চিপসের প্যাকেট, নষ্ট তরকারি, নষ্ট ফল, কাগজের প্যাকেট, কেক-মিষ্টির বক্স, ওয়ানটাইম কাপ, বাদামের খোসাসহ নানা ধরনের উচ্ছিষ্ট। তাছাড়া মাটিরাঙ্গা পৌরখাল তো ময়লাময় হয়ে আছে বেশ কয়েক যুগ আগ থেকেই।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, এক বছর আগে পৌরসভার মাসিক সমন্বয় সভায় পৌরসভা এলাকায় পয়ঃনিষ্কাশনের জন্য ৬০ টি ডাস্টবিনের চাহিদা দেয়া হলেও ফান্ড স্বল্পতার কারণে তা বাস্তবায়ন সম্ভব হয় নি। তাছাড়া গত ডিসেম্বর মাসে মাসিক সমন্বয় সভায় খড়পধষ এড়াবৎহসবহঃ ঈঙঠওউ-১৯ জবংঢ়ড়হংব ্ জবপড়াবৎু চৎড়লবপঃ( খএঈজজচ) প্রকল্পের অর্থায়নে মাটিরাঙ্গা পৌরসভা বাস্তবায়নে ৩টি স্থানে স্থায়ী ডাস্টবিন স্থাপনের কর্ম পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। ১টি মাটিরাঙ্গা বালিক উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন, অন্যটি ৫নং ওয়ার্ডের ফরিদ সেক্রেটারির বাড়ির পাশে, বাকি ডাস্টবিন টি মাটিরাঙ্গা উপজেলা পোষ্ট অফিসের পাশে বাবুপাড়া রাস্তা মাথায় স্থাপন করা হলেও এসব ডাস্টবিন প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল।

মাটিরাঙ্গা পৌর এলাকায় নারী পুরুষ সহ পরিচ্ছন্নতা কর্মী ১০ জন। সাপ্তাহে ৬ দিন কাজ করেন তারা। তার মধ্যে ৪ দিন পৌর সদর বা বাজার এলাকায় বাকি ২ দিন হাসপাতাল, থানা ও সেনা জোন এলাকায় বর্জ্য অপসারণের কাজ করেন।

NewsDetails_03

মাটিরাঙ্গা পৌরসভার পরিছন্ন পরিদর্শক মামুনুর রশিদ জানান, গত ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে ভ্রাম্যমান ডাস্টবিন ছিল ১২০ টি, ময়লা-আবর্জনা পরিবহনের জন্য দুটি পিকআপ ও দুটি ভ্যান রয়েছে। বর্তমানে ৪০ টির মতো ডাস্টবিন থাকলেও বাকি ডাস্টবিন গুলো চুরি বা নষ্ট হয়ে গেছে বলে তিনি জানান। তবে সে সময়ের পর থেকে অদ্যবধি বর্জ্য অপসারণের আর কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ চোখে পড়েনি।

মাটিরাঙ্গা বাজারের তরকারি ব্যবসায়ী লিটন বলেন, আগে অনেকগুলো ডাস্টবিন ছিল যেখানে আমরা নিয়মিত তরকারির বর্জ্য ফেলতাম এখন ডাস্টবিন গুলো পুরাতন হবার দরুন সেগুলো ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে। আর নষ্ট হয়ে যাওয়া ডাস্টবিনগুলো রাতের আধারে কই গেছে সেটার কোনো হদিস নেই। তাই আমাদের ময়লা ফেলতে সমস্যা হয়।
মাটিরাঙ্গা ভাতঘরের ম্যানাজার মো. হাসান বলেন, এখানে ময়লা ফেলানোর জন্য কোন ডাস্টবিন না থাকায় আমরা ময়লাগুলো রাস্তার ওই পার্শে (জেলা পরিষদের বিশ্রামাগার) ফেলে দেই। তাছাড়া শুধু আমি নই অনেকেইতো এখানে ময়লা ফেলে। এখানে ডাস্টবিন থাকলে আমরা ডাস্টবিনেই ময়লা রাখতাম। বাহিরে ফেলতাম না।

বিডি ক্লিনের মাটিরাঙ্গা উপজেলা সমন্বয়ক এম এ সিদ্দিক বলেন, বিডি ক্লিনের মাটিরাঙ্গা উপজেলা টিম অগোছালো টিম গুছিয়ে মাটিরাঙ্গায় স্কুল ক্যাম্পেইন থেকে শুরু করে পৌর এলাকা পরিষ্কার রাখা সহ জনসচেতনতা তৈরিতে কাজ করে শুরু করবো।

মাটিরাঙ্গা বাজার ব্যবস্থাপনা কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি বাবুল চন্দ্র বণিক বলেন, অনেক আগে বর্জ্যব্যস্থাপনায় ইউএনডিপি কর্তৃক পৌরসভা একটি সেমিনারে সকল বর্জ্য একস্থানে রেখে জৈব সার হিসেবে ব্যবহারের বিষয়ে দীর্ঘস্থায়ী পরিকল্পনা গ্রহণকল্পে আলোচনা হলেও পরে তা বাস্তবায়িত হয়নি।

জনভোগান্তি নিরসনে ও রুটিন পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রমে পৌরকর্তৃপক্ষ সব সময় সজাগ মন্তব্য করে মাটিরাঙ্গা পৌরসভার পেনেল মেয়র-১ মোহাম্মদ আলী বলেন, প্রতি গলির মোড়ে মোড়ে ডাস্টবিন দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের। জনসচেতনতার অভাবে জনদূর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে জনগণ কে। পৌরবাসী সচেতন নয় তারা ময়লা নির্দিষ্ট স্থানে রাখেন না। তাদের বার বার সতর্ক করে দেয়া হলেও নিয়ম মানছেন না তারা।

মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ডেজী চক্রবর্তী বলেন, মাটিরাঙ্গায় বর্জ্য অব্যবস্থাপনার দায় পৌর কর্তৃপক্ষের। এখানে উপজেলা প্রশাসনে কিছু করার নেই। তবে যথাস্থানে বর্জ্য অপসারণে পৌর মেয়র কে অনুরোধ করতে পারেন বলে তিনি জানান।

আরও পড়ুন