লামায় বন্যায় গৃহবন্দি ১৫ হাজার মানুষ

NewsDetails_01

গত দুই দিনের ভারী বর্ষণের ফলে উজান থেকে নেমে আসা সৃষ্ট পাহাড়ি ঢলের পানি বান্দরবানের লামা পৌর এলাকাসহ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের নিঁচু এলাকায় ঢুকে পড়েছে বন্যার পানি। এতে কয়েকশ ঘরবাড়ি, দোকান পাঠ, সরকারী বেসরকারী কার্যালয় ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্লাবিত হয়েছে। ফলে কার্যত গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে উপজেলার অন্তত ১৫ হাজার মানুষ।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার মাতামুহুরী নদী, লামা খাল, বমু খাল, ইয়াংছা খাল, বগাইছড়ি খাল, ইয়াংছা খাল ও পোপা খাল সহ বিভিন্ন স্থানের পাহাড়ি ঝিরিগু লোতে অস্বাভাবিক ভাবে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় গৃহবন্দি হয়ে পড়েছে বিভিন্ন পেশাজীবির প্রায় ১৫ হাজার মানুষ। কর্মহীন হয়ে বেকায়দায় পড়েছে ওইসব এলাকার শ্রমজীবি মানুষগুলো। আজ বুধবার সকাল থেকে শহরের দোকান ও ঘরবাড়ির মালামালসহ গৃহ পালিত পশু নিরাপদে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন বন্যা আক্রান্তরা।

এদিকে প্রবল বর্ষণে পাহাড় ধসে প্রাণহানির আশঙ্কায় মঙ্গলবার সকাল থেকে পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদেরকে নিরাপদে আশ্রয় নিতে বিভিন্ন মাধ্যমে মাইকিং শুরু করেছে উপজেলা প্রশাসন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলো। পাশাপাশি দূর্যোগ কবলিতরা আশ্রয় নিতে বিদ্যালয়গুলোকে আশ্রয়ন কেন্দ্র হিসেবে খুলে দেয় প্রশাসন। বুধবার বিকাল নাগাদ মাতামহুরী নদীর পানি বিপদসীমা অতিক্রম করে প্রবাহিত হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এ টানা ভারী বর্ষণ অব্যাহত থাকলে ভয়াবহ বন্যাসহ পাহাড় ধসে মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম’সহ যুব রেড ক্রিসেন্ট সদস্যরা পৌরসভা এলাকার প্লাবিত এলাকাগুলো সরেজমিন পরিদর্শন করে আক্রান্তদের নিরাপদে সরে যেতে তাগাদা দেন।

স্থানীয় সূত্র জানায়, গত সোমবার থেকে টানা বর্ষণের ফলে উপজেলায় অবস্থিত নদী, খাল ও ঝিরির পানি ফুঁসে উঠে পৌরসভা এলাকার নয়াপাড়া, বাসস্টেন্ড, টিএন্ডটি পাড়া, বাজারপাড়া, গজালিয়া জিপ স্টেশন, লামা বাজারের একাংশ, চেয়ারম্যান পাড়ার একাংশ, ছোট নুনারবিলপাড়া, বড় নুনারবিলপাড়া, উপজেলা পরিষদের আবাসিক কোয়ার্টার সমূহ, থানা এলাকা, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের ইয়াংছা বাজাররসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের কিছু নিচু এলাকা প্লাবিত হয়। আবার অতি বৃষ্টির কারনে বিভিন্ন স্থানে পাহাড় ধ্বস দেখা দিয়েছে। এতে ওইসব এলাকার হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগে পড়েন। একই সময় উপজেলার বিভিন্ন স্থানের গ্রামীণ সড়কগুলো কোথাও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে আবার কোথাও ধসে পড়েছে বলেও জানান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা।

NewsDetails_03

অন্যদিকে লামা-আলীকদম সড়কের কেয়ারারঝিরি, শীলেরতুয়া ও লাইনঝিরি এলাকা পানিতে ডুবে যান চলাচল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। অপর দিকে অতি বর্ষণ ও পাহাড়ী ঢলের কারণে পৌর এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে চলতি মৌসুমের বীজতলা এবং বিভিন্ন ফসলাদি পানির নিচে তলিয়ে গেছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন।

উপজেলা শহরের ব্যবসায়ী জাকির হোসেন, সোহেলসহ আরো অনেকে বলেন, প্রতিবারের মত এবারও টানা বৃষ্টির কারণে প্রথম বারের মত প্লাবিত হয়েছে লামা বাজারের একাশংসহ আশপাশের নিচু এলাকা সমূহ। বাজার ব্যবসায়ীরা মঙ্গলবার বিকাল থেকে দোকানের মালামাল নিরাপদে সরিয়ে নিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।

এ বিষযে লামা পৌরসভা মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, পৌরসভার কাউন্সিলরদের সমন্বয়ে বন্যা পরিস্থিতি সার্বক্ষনিক তদারকি করার জন্য কমিটি গঠন করার পাশাপাশি প্লাবিত লোকজনকে নিরাপদে কিংবা আশ্রয় কেন্দ্রে সরিয়ে নিতে নৌকার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

লামা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রেজা রশীদ বলেন, দুর্যোগকালীন সময়ে উপজেলার বিভিন্ন স্থানের বিদ্যালয়কে আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে খোলা রাখা হয়েছে। দূর্যোগকালীন সময় জরুরী প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে একটি কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে।

আরও পড়ুন