কাপ্তাইয়ের সীতা মন্দিরে মহাবারুণী স্থানে পূর্ণার্থীদের ভীড়

NewsDetails_01

মধুকৃষ্ণা ত্রয়োদশী তিথিতে প্রাগৈতিহাসিক তীর্থস্থান রাঙামাটির কাপ্তাই সীতাঘাট শ্রীশ্রী মাতা সীতা মন্দিরে মহা বারুণী স্নান উপলক্ষে আজ বুধবার (৩০ মার্চ) হাজার হাজার ভক্তের সমাগম ঘটেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা হতে আগত সনাতনি সম্প্রদায়ের ভক্তরা ঐতিহাসিক কর্ণফুলি নদীতে স্নান, সীতা মন্দির, শম্ভুনাথ মন্দির, কালি মন্দিরে পুজা দেওয়া এবং মহাপ্রসাদ গ্রহনের মাধ্যমে মা সীতা দেবীর কাছে তাদের মনের বাসনা ব্যক্ত করেছেন। এই উপলক্ষে অষ্টপ্রহরব্যাপী তারকব্রহ্ম মহানামযজ্ঞ ও সীতা মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে একটি মিলন মেলায় পরিণত হয়েছে সীতা মন্দির। ঐতিহাসিক এই মন্দিরে বিভিন্ন নির্দশন ঘুরে ফিরে দেখছেন ভক্তরা।

মহাবারুণী স্নানে রাঙামাটির ভেদভেদি হতে আসা ভক্ত চন্দন ঘোষ, রাঙ্গুনিয়ার সৈয়দবাড়ী হতে আসা শ্রীনাথ বনিকসহ অনেক ভক্ত জানান, ঐতিহাসিক এই পবিত্র তীর্থ স্থানে আসতে পেরে নিজেদেরকে পূর্নবান মনে হচ্ছে। আমরা মা সীতা দেবীর বিভিন্ন নির্দশন ঘুরে ফিরে দেখছি এবং মহাবারুণী স্নানে স্নাত হয়ে পবিত্র হচ্ছি।

সীতাঘাট মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি রতন দাশ জানান, ঐতিহাসিক এই সীতা মন্দিরে শত শত বছর ধরে ভক্তরা আসছেন। সীতা মন্দির, শম্ভুনাথ মন্দির, কালি মন্দির সহ মা সীতার বিভিন্ন ঐতিহাসিক নির্দশন দেখছেন ভক্তরা। গত সোমবার হতে শুরু হয়ে আগামী বুধবার সকাল পর্যন্ত এই উৎসব চলবে।

মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দাশ জানান, এই মন্দিরে মা সীতার অনেক নির্দশন আছে। মা সীতা যে ঘাটে স্নান করেছেন আজ সে ঘাটে ভক্তরা স্নান করেছেন। এই স্থানে অনুষ্ঠান করতে গিয়ে আমাদের অনেক প্রতিকূলতা সৃষ্টি হয়। এরপরও এমপি দীপংকর তালুকদার, স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, জেলা পরিষদ, উন্নয়ন বোর্ড সহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার সহায়তায় আমরা এই অনুষ্ঠান করতে পারছি।

NewsDetails_03

শ্রীশ্রী মাতা সীতাদেবী মন্দির এর অধ্যক্ষ শ্রীমৎ জ্যোতির্ময়ানন্দ পুরী মহারাজ জানান, এটি একটি প্রাগৈতিহাসিক তীর্থ স্থান। আমি বিশ্বের সকল ভক্তের কাছে অনুরোধ জানাই, সকলে মিলে এই তীর্থ স্থানকে জাগিয়ে তুলোন।

এদিকে মহাবারুণী স্নান উপলক্ষে মঙ্গলবার ব্রাক্ষমুহুর্তে অষ্টপ্রহরব্যাপী মহানামযজ্ঞের শুভারম্ভ করা হয়েছে। এতে শ্রী ভগবান সম্প্রদায়, জয়গুরু সম্প্রদায়, ভৈরব ঠাকুর সম্প্রদায় এবং শ্রী জয় লোকনাথ সম্প্রদায় নাম সুধা বিতরণ করেছেন। এদিন বেলা ১২ টায় মন্দির প্রাঙ্গনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন।

এইসময় তিনি প্রধান অতিথির বক্তব্যে বলেন, ধর্ম যার যার উৎসব সবার। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার সনাতন সম্প্রদায় সহ সকল ধর্মের মঠ মন্দিরের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছেন।

সীতা মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি রতন দাশ এর সভাপতিত্বে কাপ্তাই প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক ঝুলন দত্তের সঞ্চালনায় এইসময় বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইছাইন চৌধুরী, সদস্য দীপ্তিময় তালুকদার, কাপ্তাই উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান উমেচিং মারমা, কর্ণফুলি পেপা মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী সুদীপ মজুমদার, কেপিএম এর প্রধান প্রকৌশলী স্বপন কুমার সরকার, কাপ্তাই উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি দীপক কুমার ভট্টাচার্য, সাধারণ সম্পাদক প্রিয়তোষ ধর পিন্টু, রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক মোঃ হানিফ, কাপ্তাই উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের উপদেষ্টা বাবুল কান্তি দে, কাপ্তাই জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুর্বণ ভট্টাচার্য, কেপিএম কয়লার ডিপু হরি মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক তপন কুমার মল্লিক, রাইখালী ত্রিপুরা সুন্দরী কালি মন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি বিপ্লব সেন লাতু, সীতা মন্দিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রতন কান্তি বিশ্বাস।

স্বাগত বক্তব্য দেন মন্দির পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক আশীষ কুমার দাশ এবং সীতা মন্দিরের অধ্যক্ষ শ্রীমৎ জ্যোতির্ময়ানন্দ পুরী মহারাজ।

এর আগে মহাবারুণী স্নান উপলক্ষে গত সোমবার (২৯ মার্চ) সন্ধ্যা ৭ টায় মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্জ্বলন এবং রাত ৮ টায় মহানামযজ্ঞের শুভ অধিবাস অনুষ্ঠিত হয়।

আরও পড়ুন