পার্বত্য মন্ত্রীর অবদানে মাতামুহুরী কলেজে ব্যাপক উন্নয়ন

এবার অনার্স কোর্স চালুর দাবি

বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার একমাত্র উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লামা সরকারি মাতামুহুরী কলেজ। সাম্প্রতিক সময়ে নানা উন্নয়ন মুলক কর্মকান্ডে দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছে কলেজটি। বর্তমানে ২ কোটি টাকা ব্যায়ে ৭টি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষ। পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র একান্ত প্রচেষ্টায় কলেজের ব্যাপক উন্নয়ন কাজ বাস্তবায়নের ফলে কলেজটি দৃষ্টি নন্দন হয়ে ওঠা সম্ভব হয়েছে বলে জানান, কলেজ অধ্যক্ষ মো.রফিকুল ইসলাম।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯৮৬ সালের ১৫ নভেম্বর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আলী মিয়া পিছিয়ে পড়া জনপদ লামা ও আলীকদম উপজেলার অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর মাঝে শিক্ষা বিস্তারের লক্ষ্যে হাজী মো. আলী মিয়া নামের একটি কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে আলীকদম সেনাবাহিনীর তৎকালীন জোন কমান্ডার লে. কর্নেল মো. শাহজান মিয়ার সার্বিক সহযোগিতায় স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের উপস্থিতিতে এক সভায় আলহাজ্ব মো. আলী মিয়ার প্রস্তাবে ৬৯ পদাতিক ব্রিগ্রেডের তৎসময়কার ব্রিগ্রেড কমান্ডার সুবেদ আলী ভূঁঞা মাতামুহুরী নদীর নামানুসারে মাতামুহুরী কলেজ নামে নামকরণ করেন।

পরের বছর কলেজটি পৌরসভার টি.টি.এন্ড ডি.সি থেকে মনোরম প্রাকৃতিক পরিবেশে বর্তমান স্থান লাইনঝিরিতে স্থানান্তরিত করা হয়। কলেজের প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ এম. আশরাফুল ইসলাম চৌধুরীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এবং আলীকদম জোন ও স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতায় ১৯৮৭ সালের ১ জুলাই কলেজটি মানবিক ও বাণিজ্য শাখায় ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির অনুমতি লাভ করে। পরবর্তীতে বিশেষ বিবেচনায় কলেজটি এমপিও ভূক্ত হয়। একই বছর একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান শাখায় ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির অনুমতি পায়। ২০০৬-০৭ শিক্ষা বর্ষে তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ মো. মুজিবুর রহমান মানিকের প্রচেষ্টায় আলীকদম সেনা জোন, জেলা পরিষদ ও কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সার্বিক সহযোগিতায় কলেজ ডিগ্রি কোর্স প্রথম অধিভূক্তি লাভ করে।

এদিকে লামা, আলীকদম এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা সমুহের ঝরে পড়া ও কর্মজীবী শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করার লক্ষ্যে বর্তমান অধ্যক্ষ মোহাম্মদ রফিকুল ইসলামের প্রচেষ্টায় ২০১১ সালে বাংলাদেশ উম্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধীনে এইচ.এচ.সি প্রোগ্রাম এবং ২০১৫ সালে বিএ/বিএসএস প্রোগ্রাম চালু হয়। শেষে গত বছরের ৮ আগস্ট কলেজটি জাতীয়করণ করে বর্তমান সরকার। বর্তমানে কলেজে প্রায় তিন হাজারের বেশি ছাত্র-ছাত্রী অধ্যয়ন করছে।

কলেজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর ৩ বার দায়িত্ব পালন করেন। প্রথমবার ১৯৯২ সালে, দ্বিতীয়বার ২০১০ সালে এবং সব শেষে ২০১৪ সালের ২ এপ্রিল সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হয়ে বর্তমানেও দায়িত্ব পালন করছেন। মূলত বীর বাহাদুর সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পরই গতিশীল হয়ে উঠে কলেজের সার্বিক পরিবর্তন শুরু হয়। ইতিমধ্যে ৫তলা বিশিষ্ট কলেজের নতুন একাডেমিক ভবন, ছাত্রাবাস, ছাত্রাবাসের প্রাচীর, কলেজ জামে মসজিদ ও পরবর্তীতে অধুনিকায়নকরণ, ছাত্রাবাসের দ্বিতল নির্মাণ, ছাত্রী নিবাস এবং শিক্ষক কোয়ার্টারসহ নানা উন্নয়ন কর্মকান্ড সম্পাদন হয়েছে।

NewsDetails_03

বর্তমানে পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের অর্থায়নে প্রায় ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ছাত্রী নিবাস নির্মাণ, ১৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে শহীদ মিনার নির্মাণ, ৫০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে কনফারেন্স হল নির্মাণ, ১৮ লক্ষ টাকা ব্যয়ে গেইটসহ বাউন্ডারী ওয়াল নির্মাণ, ২২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে মাঠ উন্নয়ণ এবং ৪০ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ছাত্রাবাস ও অভ্যন্তরীন রাস্তার কাজ এবং ড্রেণ নির্মাণসহ বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। তবে কলেজটি অনার্স কোর্স চালু না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে। বাহিরে গিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করা এতদ্বঞ্চলের মানুষের পক্ষে সম্ভব নয় বিধায় শিক্ষক অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালুর দাবি জানান।

আরো জানা গেছে, সদ্য জাতীয়করণকৃত কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালু করা এখন ৩ হাজারেরও বেশি শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক ও দুই উপজেলাবাসীর প্রাণের দাবি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বিন মো. ইয়াসির আরাফাত বলেন, কিছু দিনের মধ্যেই মধ্যেই সরকারি মাতামুহুরী কলেজের চলমান উন্নয়ন কাজগুলো সমাপ্ত হবে। এতে দৃষ্টি নন্দন হয়ে ওঠবে কলেজ ক্যাম্পাসটি।

এদিকে লামা পৌরসভার মেয়র মো. জহিরুল ইসলাম জানান,কলেজটি জাতীয়করণের পেছনেও সম্পূর্ণ অবদান পার্বত্য মন্ত্রী মহোদয়ের। এ অবস্থায় কলেজের শিক্ষক, শিক্ষিকাবৃন্দ ও লামাবাসী পার্বত্য মন্ত্রীসহ প্রধানমন্ত্রীর নিকট চির কৃতজ্ঞ।

এ বিষয়ে কলেজ অধ্যক্ষ মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকারের পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি’র প্রচেষ্টায়ই সম্ভব হয়েছে, এজন্য আমরা চির কৃতজ্ঞ। তিনি আরো বলেন,কলেজটিতে অনার্স কোর্স চালু হলে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর আগামি প্রজন্মের উচ্চ শিক্ষা লাভের পথ আরো সুগম হবে।

আরও পড়ুন