পাহাড়ে সংঘাত, অশান্তি থাকুক কেউ চাই না : কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা
সাক্ষাৎকার
আওয়ামী লীগের নব গঠিত সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব গ্রহন করছেন, খাগড়াছড়ি ২৯৮ নং আসন থেকে টানা তিনবার নির্বাচিত সংসদ সদস্য, প্রবীণ রাজনীতিবিদ কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা। দায়িত্ব গ্রহনের প্রক্কালে পার্বত্য শান্তি চুক্তির পূর্নাঙ্গ বাস্তবায়ন, পাহাড়ের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসন, উন্নয়ন ও সরকারের সুফল পাহাড়ের মানুষের দোড়গোড়ায় পৌঁছাতে কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরার চিন্তাভাবনা কথা জানতে তাঁর সঙ্গে টেলিফোনে কথোপকথন হয়েছে পাহাড়বার্তা’র। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন- পাহাড়বার্তা’র নির্বাহী সম্পাদক এস বাসু দাশ।
পাহাড়বার্তা: কেমন আছেন?
কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা: ভালো আছি।
পাহাড়বার্তা: পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়নে আপনি কি কি উদ্দ্যেগ গ্রহন করবেন?
কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা: আপনারা সকলে জানেন যে, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে বেশ আন্তরিক। তিনি ৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর ৯৭ সালের ২রা ডিসেম্বর পার্বত্য শান্তিচুক্তি সম্পাদন করেন। সেই অবধি পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি শৃংখলা ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা সবকিছু বজায় রেখেছে। শান্তিচুক্তির অনেক ধারা উপধারা রয়েছে, অনেকগুলো বাস্তবায়ন হয়েছে, অনেকগুলো চলমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতার কারনেই আমাকে বৃহত্তর পরিসরে কাজ করার সুযোগ করে দিয়েছেন। আমি অবশ্যয় চেষ্টা করবো, সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রামের জনগন, পাহাড়ের সকলকে নিয়ে শান্তিচুক্তির যা অবশিষ্ট রয়েছে, তা পুরোপুরি যাতে বাস্তবায়ন করতে পারি, এটাই প্রথমে থাকবে।
পাহাড়বার্তা: পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনের অভিযোগ পার্বত্য শান্তিচুক্তি যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছেনা।
কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা: যথাযথ বাস্তবায়ন হচ্ছেনা বলেই তো, আমরা যথাযথ বাস্তবায়নের জন্যই কাজ করবো। আমার বিশ্বাস যে, আমাদের প্রধানমন্ত্রী পার্বত্য অঞ্চলের জন্য খুবই আন্তরিক। সেখানে (পার্বত্য জেলায়) বসবাস করা মানুষের প্রতি, তাদের জন্য তিনি খুব আন্তরিক, হৃদয়বান, সহানুভূতিশীল। সুতরাং পার্বত্য শান্তিচুক্তি তিনি করেছেন, তিনিই সহানুভূতির সাথে পার্বত্যবাসীর আশাআখাংকা পূরণে কাজ করতে তিনি সহযোগীতা করবেন।
পাহাড়বার্তা: পাহাড়ে সংঘাত কমাতে কোন ধরণের উদ্যোগ গ্রহন করবেন?
কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা: দেখবেন আপনারা, কিভাবে সংঘাত কমানো যায়। পাহাড়ে সংঘাত, পাহাড়ে অশান্তি থাকুক কেউ চাই না। পাহাড়ের উন্নয়নের ধারা বাধাগ্রস্থ হোক, কেউ চাইনা। আমরা সকলে মিলে সংঘাত বন্ধ করার চেষ্টা করবো।
পাহাড়বার্তা: তিন পার্বত্য জেলার উন্নয়নে সুষম বন্টন নিশ্চিত করবেন কিনা?
কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা: অবশ্যই করবো। এখানে পাহাড়ীসহ বিভিন্ন ধর্ম ও বিভিন্ন বর্ণ, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে। অবশ্যই সেটা আগে দেখার বিষয়। সকলের অধিকার রয়েছে, বেঁচে থাকার। সকলের উন্নয়নের ভাগিদার ও অংশিদার হওয়ার অধিকার রয়েছে। সেজন্য আমি সকল জাতিগোষ্ঠী ও সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে, সুষম বন্টনের ক্ষেত্রে, আমি খুবই সতর্ক থাকবো।
পাহাড়বার্তা: পাহাড়ের মানুষের জন্য আপনার বার্তা কি ?
কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা: পাহাড়ের মানুষ সব জনগোষ্ঠীকেও সবার প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানায়, ধন্যবাদ জানায়। আমার এতদূর আসার পেছনে তাদের ভূমিকা রয়েছে। তাদের আশা আকাংখা পূরনের জন্য আমি কাজ করবো, আমি দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে বলছি, বাংলাদেশের অপরাপর অঞ্চলের যে উন্নয়নের ধারা, সেই উন্নয়নের ধারার সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামবাসীকে সম্পৃক্ত রাখতে ভূমিকা রাখবো।
পাহাড়বার্তা: আপনাকে ধন্যবাদ।
কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা: আপনাকেও ধন্যবাদ।
কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বর্তমানে খাগড়াছড়ি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। ২০১৪ সাল থেকে টানা তিনবার এ আসনে বিপুল ভোটে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া গত ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ইং তাকে ভারত প্রত্যাগত শরনার্থী বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান করা হয়। এর আগে তিনি খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসাবে ২০১০ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা ১৯৬৩ সালের ৪ নভেম্বর খাগড়াছড়ির দীঘিনালা উপজেলায় জন্ম গ্রহন করেন।