গত দুই বছর ধরে বান্দরবানে উৎপাদিত রাবারের দাম কমে যাওয়ার কারনে রাবার ব্যবসা বন্ধের পথে। ফলে বেকার হওয়ায় আশংকায় রয়েছে জেলার অন্তত ১০ হাজার শ্রমিক।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলা সদর ও নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার আবহাওয়া, মাটি আর প্রাকৃতির অবস্থা ভালো থাকায় এখানে প্রচুর রাবার গাছ জন্মে। আর সেই গাছ থেকে রাবার উৎপাদন করে চলে প্রায় দশ হাজার পরিবারের জীবনযাপন। ১৯৮৪ সাল থেকে জেলায় রাবার উৎপাদন শুরু হয়। আর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে ওঠা রাবার বাগান থেকে রাবার কষ আহরণ করে পক্রিয়াজাত করে বিদেশে রপ্তানি করে ব্যবসায়িকভাবে লাভের মুখ দেখলেও বর্তমানে রাবারের দর পতনের ফলে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়ছে এই শিল্পের সাথে জড়িত শ্রমিকরা।
এই ব্যাপারে বাইশারীর নাজমা খাতুন রাবার বাগান এর মো.জাফর আলম বলেন, বিগত দিনে প্রচুর রাবার উৎপাদন হতো এবং এই রাবার দেশের পাশাপাশি বিদেশে ও রপ্তানি হতো কিন্তু বর্তমানে রাবারের দাম কমে যাওয়ায় অনেক শ্রমিক বেকার হয়ে যাচ্ছে।
আরো জানা যায়, জেলার আবহাওয়া ভালো থাকায় শুধু নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশারী ইউনিয়নে প্রায় ২শত রাবার বাগান গড়ে ওঠেছে আর এতে যুক্ত আছে প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক। রাবারের ব্যবসা ভালো হওয়ায় এখানে গড়ে ওঠেছে পিএইপি ফ্যামিলি,আলম কোম্পানী রাবার, নাজমা রাবার,স্টার রাবার,আরিফ এন্টারপ্রাইজ, ফোর এইচ গ্রুপসহ স্বনামধন্য বহু প্রতিষ্ঠান, আর এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে হাজার হাজার শ্রমিক।
বাইশারী রাবার বাগান এর শ্রমীক নুর মোহাম্মদ বলেন, রাবারের দাম পড়ে যাওয়ার কারনে আমাদের মতো অনেক শ্রমিক দিন দিন চাকরী হারাচ্ছে, সরকারের এই ব্যাপারে সুদৃষ্টি দেওয়া উচিত।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিগত কয়েক বছর ধরে প্রতি কেজি রাবার বিক্রি হয়েছে ২৫০ থেকে ৩৮০ টাকা পর্যন্ত, কিন্তু বর্তমানে বাজার দর পতনে প্রতি কেজি রাবার বিক্রি হচ্ছে মাত্র ১৩৫ থেকে ১৪০ টাকা দরে। এই রাবার বিক্রি করে বিগত বছরে ব্যবসায়ীরা প্রচুর অর্থ আয় করলেও এখন ভারত, মিয়ানমারসহ বিভিন্ন দেশ হতে দেশে রাবার আমদানি হওয়ায় দেশে উৎপাদিত রাবারের দাম কমে লোকসান গুনছে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা,আর এতে ব্যবসা বন্ধের উপক্রম দেখা দিয়েছে ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
নাইক্ষ্যংছড়ির নাজমা খাতুন রাবার বাগান এর ব্যবস্থাপক মো.আল আমিন বলেন, বিগত ২ বছর ধরে রাবারের দাম নেই, হঠাৎ দর পতনে মালিকসহ শ্রমিকরাও হতাশ হয়ে পড়েছে, এই অবস্থায় রাবার বিক্রি করে শ্রমিকদের মাসিক বেতন-ভাতা পরিশোধ করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।
এই ব্যাপারে বান্দরবান জেলা রাবার বাগান কল্যাণ মালিক সমিতির যুগ্ন সাধারণ সম্পাদক শাহ সিরাজুল ইসলাম বলেন, রাবার শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য সরকারের জরুরী ভিত্তিতে নজর দেয়া প্রয়োজন।
এদিকে বিদেশ থেকে রাবার আমদানি করছে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী, অথচ বাজারে রাবারের দাম কম হলেও রাবার থেকে উৎপাদিত কোনো পণ্য সামগ্রীর দাম কমেনি। বর্তমানে রাবার থেকে উৎপাদিত পণ্যের দামও চড়া। বিদেশ থেকের রাবার আমদানী করার কারনে দেশের রাবার এর দাম কমছে বলে মনে করছে ব্যবসায়িরা। বিদেশি রাবার আমদানি বন্ধ করে দেশিয় রাবারের ব্যবহার বাড়ানোর জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে রাবার ব্যবসায়ীদের নেতৃবৃন্দরা।
এই ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচি বলেন, বিষয়টি সুরাহা করার জন্য উদ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।