করোনা ভাইরাস এর সংক্রমণ আর মৃত্যুর মিছিলে যুক্ত হচ্ছে নতুন নতুন সংখ্যা। সহজে মুক্তি পাওয়ার সম্ভাবনাও কম। করোনা ভাইরাস নিয়ে বিশ্ব জুঁড়ে উদ্বেগ কমছেই না, একই অবস্থা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও। বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে করোনার প্রথম ঢেউ সামাল দিলেও দ্বিতীয় ঢেউ যেন থামছেই না, দিনে দিনে মৃত্যুর সংখ্যাও বেড়েই চলেছে।
প্রতিদিন বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সেই সাথে পাহাড়ী জেলা বান্দরবানেও বাদ পড়েনি করোনার ছোবল থেকে। গত ১৪ এপ্রিল থেকে সারাদেশের সাথে তাল মিলিয়ে বান্দরবান জেলাতেও চলছে আরো ১৪ দিনের লকডাউন। আর এই লকডাউনের কারনে কর্মহীন হয়ে পড়ে অনেক শ্রমজীবী মানুষ। যার ফলে মানবেতর জীবন যাপন করছে জেলার বিভিন্ন স্থরের মানুষ।
প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাসের প্রভাব পড়েছে বান্দরবানে দিন মজুর মানুষের জীবনে। এতে সংকটে পড়ে শ্রমজীবি মানুষ। মানবিক বিপর্যয়ে কাটাতে এসব দিন মজুররা চান আর্থিক/মানবিক সহযোগিতা।
লকডাউনের সময় কর্মহীন হয়ে বান্দরবানে মানবেতর দিন কাটে রিক্সা চালক, দিন মজুর, ছোট দোকানদার, বিভিন্ন হোটেল মোটেলের কর্মচারী, রং মিস্ত্রী, মুচি (ঋষি সম্প্রদায়), বিভিন্ন ছোট বড় পরিবহণের সাথে জড়িত শ্রমজীবী শ্রেণির মানুষেরা। করোনার এই মহামারীতে বিপাকে পড়া দিনমজুররা বলছেন, করোনা আমাদের জীবন জীবিকা থমকে দিয়েছে।
বান্দরবান শহরের ট্রাফিক মোড়ে অবস্থান করছিলেন রিক্সা চালক করিম উল্লাহ (৩৬)। বাড়ি পৌরসভার ওয়াপ্দা ব্রিজ এলাকায়, বাড়িতে ছেলে মেয়ে স্ত্রী আর বৃদ্ধা মা,কে নিয়ে সংসার। পরিবারে একমাত্র আয় রোজগারের মানুষ করিম উল্লাহ করোনা সংক্রমনের ভয় নিয়েই লকডাউনের মধ্যেও রিক্সা নিয়ে বেড়িয়েছেন আজ-রোজগাড়ের আশায়। দৈনিক আয় রোজগার করতে না পারলে অন্যের নিকট ধার দেনা করেই পার করতে হবে দিন।
শহরের দুধ বিক্রেতা মোহাম্মদ হামিদের বলেন, বাসায় মাস ভিত্তিতে দুধ বিক্রি করি আমি। রেইছা বাজার থেকে অনেক কষ্ট করে, ডাবল ভাড়া দিয়ে বান্দরবান শহরে আসতে হয়, কিন্তু এখন দুধও কিনতে চায়না অনেকে।
এদিকে দোকান ও শপিংমল খুললেও এখন বন্ধ রয়েছে রেস্টুরেন্ট। এতে রেস্টুরেন্টে কাজ করা শ্রমিকরা পড়েছেন সবচেয়ে কষ্টের মধ্যে। অনেক শ্রমিক ইতোমধ্যে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। এতে তাদের জীবন-জীবিকায় নেমে এসেছে নিদারুণ কষ্ট।
‘এক মাসের ওপর হয়েছে কোনো বেতন পাই না, বেতন না পাইলে চলাও সম্ভব নয়। এখন হাত পাতবো, সে মানুষও নেই। সবারই এক অবস্থা; হাত খালি। তারাই টেনেটুনে সংসার চালাইতাছে।‘ বলছিলেন হোটেল-শ্রমিক জলিল মিয়া।
তিনি আরো জানান, অনেক সময় ধারদেনাও করেছেন। পরে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে আবারও হোটেলে কাজ করে পরিবারের হাল ধরেন। কিছু ঋণ পরিশোধও করেছিলেন। কিন্তু দ্বিতীয় দফার লকডাউনে হোটেল-রেস্টুরেন্ট বন্ধ হওয়ায় পরিবার নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি।
জলিল মিয়া বলেন, হোটেলে সামান্য বেতনে এমনিতেই পোষায় না,ওয়েটারের কাজ করি। সার্ভিসে খুশি হয়ে মানুষ বকশিস দেয়। এই টাকায় পরিবার কোনো রকম চলে যায়। দ্বিতীয় দফায় লকডাউনের সময় অনেক দিন না খেয়ে ছিলাম। তিনি আরো বলেন, সরকারী কিছু ত্রাণ বিতরণ করলেও এসব আমাদের কাছে আসেনা।
এদিকে দিনের পর দিন কর্মহীন হয়ে পড়েছে অনেকে। তার সাথে আর্থিক কষ্টে রয়েছেন দিনমজুরা, যারা দিন আনে দিন খাওয়া মানুষদের ৷ তার উপর রয়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষেরা ৷ করোনায় শুধু তারাই নন, যারা চাকরিজীবী নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং মধ্যবিত্ত সবাই সংকটে আছেন, শুধু ভালো আছে সরকারী চাকুরিজীবিরা, অফিস বন্ধ থাকলেও মাস শেষে বেতন পাওয়া যায়।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তথ্যে মতে, এই পর্যন্ত বান্দরবানে ৯৭০ জনের শরীরে করোনার পজেটিভ পাওয়া যায়। সুস্থ হয়েছেন ৯৪১ জন,করোনায় আক্রান্ত হয়ে ৪ জন মারা যান।