অবাজি, আই তোয়ারার লায় দোয়া গরি

NewsDetails_01

মরিয়ম বেগম,বয়স ৭২ বছর। এই ভূবনে একমাত্র মেয়ে ছাড়া আর কেউ নেই। স্বামী প্রয়াত হয়েছেন ১৫ বছর আগে। একমাত্র মেয়ে থাকেন ড্রাইভার স্বামীকে নিয়ে সূদুর চট্টগ্রামে। মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে থাকাটা অসন্মানের, তাই বান্দরবান শহরের নীলাচল সড়কের পাশে অণ্যের জায়গায় কুঁড়ে ঘর তৈরী করে দিন পার করেন। স্বজন আর মেয়ে কিছু অর্থ পাঠালে তা দিয়ে চলে একাকিত্বের সংসার।

কথা হয় বৃদ্ধা মরিয়ম বেগমের সাথে। তিনি প্রতিবেদককে বলেন, মানুষের দয়া নিয়ে খেয়ে পরে এই ঘরে বেঁচে আছি, বৃষ্টি আর বাতাস আসলে ঘুমানো যায়না। কখনও যদি জায়গার মালিক চলে যেতে বলে, তাহলে মাথা গোঁজার ঠাইও মিলবেনা।

তিনি বলেন, বর্তমান করোনা সংকটে আর্থিক সমস্যার কারনে কোন ভাবে খাচ্ছি। মরিয়মের এই দূরবস্থার খবর শুনে তার বাসায় চাল, ডাল, তেল, আটা, পেঁয়াজ ও আলু নিয়ে হাজির হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক নির্ভর গড়ে উঠা সেচ্ছাসেবী সংগঠন “মানবিক”। আর এই সংকটময় সময়ে খাদ্য পণ্য পেয়ে তিনি বলেন, “অবাজি, আই তোয়ারার লায় দোয়া গরি” (বাবা, আমি তোমাদের জন্য দোয়া করি)।

NewsDetails_03

আজ সোমবার (২০ এপ্রিল) বান্দরবানের সেচ্ছাসেবী সংগঠনটি জেলা শহরের আশেপাশের বিভিন্ন বিচ্ছিন্ন ভাবে বসবাসকারী ১শ জনকে ত্রাণ বিতরণ করে। তাদের এই ত্রাণ বিতরণ আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে জানান সংগঠনটির সদস্যরা।

এই ব্যাপারে সেচ্ছাসেবী সংগঠন এর সদস্য রিজভি রাহাত বলেন, আমরা ত্রাণ নয়, উপহার হিসাবে করোনা সংক্রামন শুরুর পর থেকে অসহায় মানুষদের খাদ্য সামগ্রী দিয়ে আসছি, এই ধরণের কষ্টে থাকা মানুষদের খবর দিলে আমরা তাদের কাছে ত্রাণ পৌছে দিবো।

মানবিক এর ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম

আরো জানা গেছে, ইমরান উদ্দীন, মবিনুল ইসলাম জিকু, ইমরান জিতু, জিয়া উদ্দীন বাবলু, মেহেদী হাসান, দোলোয়ার হোসেন, তারা ছয় বন্ধু। দেশে করোনা সংক্রামনের সংকট শুরু থেকে তারা জেলা শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিজস্ব অর্থায়নে ত্রাণ বিতরণ করেন। তাদের পাশাপাশি জেলা শহরে অনেক মানবিক সংগঠন গড়ে উঠেছে, তারাও অসহায় মানুষদের পাশে দাড়াচ্ছে প্রতিনিয়ত। শুধু মরিয়ম বেগম নয়, এই ধরণের শত মরিয়মদের দোয়া নিয়ে তারা রাত-বিরাতে মানবিক কাজ করে যাচ্ছে তারা। তবে মানবিক এই ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে সমস্যাও কম নয় তাদের।

তাদের ছয় বন্ধুদের একজন ইমরান উদ্দীন আক্ষেপ করে বলেন, মানুষের চলাচল বন্ধ, মানবিক সেবা দিতে গিয়ে আমরা পথে হয়রানির শিকারও কম হচ্ছিনা, যদি প্রশাসনের কাছ থেকে আমাদের সেচ্ছাসেবক কার্ড প্রদান করলে ত্রাণ বিতরনে সমস্যা ভোগ করতে হতোনা।

আরও পড়ুন