পর্যটকে মুখরিত বান্দরবান

NewsDetails_01

টানা ৩ দিনের ছুটিতে দর্শনার্থীদের পদচারনায় মুখরিত বান্দরবানের বিনোদন কেন্দ্রগুলো। জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোতে ভিড় করছেন সৌন্দর্য পিপাসুরা। ফলে হোটেল-মোটেল রিসোর্টগুলোও কানায় কানায় পরিপূর্ণ। দীর্ঘদিন পর আশানুরুপ পর্যটক আসায় খুশি পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

বান্দরবানে পাহাড়-পর্বত ছাড়াও রয়েছে অসংখ্য ঝিরি-ঝর্ণা, মেঘলার লেক, স্বর্ণমন্দির, নীলাচল, নীলগিরি, শৈলপ্রপাত, নাফাকুম, রেমাক্রি, চিম্বুক, নীলদিগন্তসহ সরকারী-বেসরকারী অনেক পর্যটন স্পট। সবকিছু মিলিয়ে টানা ছুটিতে ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকের পদভারে এখন মুখর হয়ে উঠছে বান্দরবান। ফলে পুরো শহর জুড়েই পরিণত হয়েছে মিলন মেলায়। পর্যটকের বাড়তি চাপ সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে হোটেল-মোটেল, গেস্ট হাউজ, রেস্ট হাউজ মালিকসহ পর্যটনশিল্পে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ঢাকা থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা সালমা আক্তার বলেন, পাহাড়ে বিভিন্ন ঘটনা ঘটার কারনে পর্যটকরা আসতে আসলেই ভয় পাই, তারপরও আমরা ঘুরতে এসেছি।

সাম্প্রতিক সময়ে পাহাড়ের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযান ও ভয়াবহ বন্যা, পাহাড়ী ঢলে সড়ক যোগাযোগ বন্ধের কারণে দিনদিন কমতে থাকে পর্যটক। বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বৃদ্ধিসহ সড়ক যোগাযোগ কিছুটা স্বাভাবিক হওয়ায় ফের আগের সেই চেনা রূপে ফিরেছে পর্যটন স্পটগুলো। জেলা শহর থেকে বান্দরবান-থানচি সড়কের শৈলপ্রপাত, চিম্বুক, নীলগীরি, নীল দিগন্ত এবং শহর থেকে কাছে পর্যটন স্পট নীলাচল ও মেঘলা সহ কয়েকটি স্থানে ঘুরে অসংখ্য পর্যটকের ভিড় দেখা গেছে।

শহরের আবাসিক হোটেল প্যারাডাইসের ম্যানেজার মো. নেছার বলেন, এবার বন্ধে আমাদের হোটেলে পর্যটকের বুকিং ভালো ছিলো, দীর্ঘদিন আমাদের ব্যবসা বন্ধ ছিল, তবে আগামী কয়েকদিন বান্দরবানে পর্যটক আসতে পারে।

অরণ্যে ঘেরা পাহাড়ের সঙ্গে মারমা, ম্রো, ত্রিপুরা, বম, তংচঙ্গ্যা, চাকমা, চাক, খেয়াং, খুমী, লুসাই, কুকি, পাংখোসহ মোট ১১টি আদিবাসী জনগোষ্ঠীর সরল জীবনযাপনের এ আবাসস্থল ধীরে ধীরে হয়ে উঠছে পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র বিন্দু। তাই পর্যটকদের আনাগোনা লক্ষনীয় পর্যটনস্পটগুলোতে। জেলার পর্যটন কেন্দ্র নীলাচল, মেঘলা, প্রান্তিক লেক, শৈলপ্রপাত, নীলগীরি, চিম্বুক পাহাড়সহ প্রতিটি পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকদের ভীড় বেড়েই চলেছে।

NewsDetails_03

ট্যুরিস্ট গাড়িচালক মো. কামাল বলেন, গত কয়েকমাস ধরে পর্যটক কম আসার কারনে ঠিকমতো গাড়ি চালাতে না পেরে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে ছিলাম, তবে পর্যটকদের ভ্রমণে আসাটা আমাদের জন্য ভালো সংবাদ।

বান্দরবান মাইক্রোবাস, জিপ ও পিকআপভ্যান মালিক সমবায় সমিতির সভাপতি মো. নাছির উদ্দিন বলেন, ২৮ সেপ্টেম্বর ঈদে মিলাদুন্নবী আর ২৯ ও ৩০ সেপ্টেম্বর (শুক্র-শনি) সাপ্তাহিক বন্ধ মিলে টানা ছুটিতে আমাদের অনেক যানবাহন বুকিং হয়েছে, আশা করছি সামনেও পর্যটক বাড়বে।

পর্যটন সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, জেলার হোটেল-মোটেল মালিকদের পক্ষ থেকে বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে সকল হোটেলে ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত রুম ভাড়া ২০-৪০ শতাংশ ছাড় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জেলায় এ তিনদিনে ৩ থেকে ৫ কোটি টাকার ব্যবসা হয়েছে।

বান্দরবান হোটেল-মোটেল-রিসোর্ট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলাম জানান, দীর্ঘ সময় ধরে ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও বন্যার কারণে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীরা। দীর্ঘ ৬ মাস পর পর্যটকদের পদচারণায় আবারও মুখরিত হচ্ছে বান্দরবান।

বান্দরবান জোন ট্যুরিস্ট পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহাঙ্গীর আলম জানান, ট্যুরিস্ট পুলিশ নিয়মিত টহল ও সাদা পোশাকে পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় নিয়োজিত আছে, পর্যটকরা নির্বিঘ্নে ভ্রমণ করতে পারবেন।

প্রসঙ্গত, বান্দরবান শহরে হোটেল মোটেল মালিক সমিতির আওতাভুক্ত ৫৫টি হোটেলসহ শতাধিক হোটেল, মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউস রয়েছে। এছাড়াও পর্যটক পরিবহনে রয়েছে ৪ শতাধিক চাঁদের গাড়ি, ৩ শতাধিক নৌ যান এবং প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ২০ হাজার মানুষ পর্যটন ব্যবসার সাথে জড়িত।

আরও পড়ুন