পাহাড়ে কোমর তাঁত দিয়ে তৈরি হচ্ছে শীতবস্ত্র

NewsDetails_01

পার্বত্য জেলা বান্দরবানের পাহাড়ি পল্লীগুলোয় কোমর তাঁতে শীতের কাপড় তৈরি চলছে। শহরের লাইমি পাড়া, ফারুক পাড়া, শ্যারন পাড়াসহ বম অধ্যুষিত এলাকায় চলে এসব শীতের কাপড় তৈরির কাজ।

মেশিনের সাহায্য ছাড়াই কোমড়ে রশি জড়িয়ে ছোট-ছোট বাঁশের সাহায্যে তৈরি করা হয় কাপড়। যাকে বলা হয় কোমড় তাঁত। সুপ্রাচীন কাল থেকে ঐতিহ্যগত ভাবে তুলা থেকে সুতা তৈরি নিজেদের পোশাক থামি পিনন তৈরি করে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা।

পার্বত্য এলাকার বম সম্প্রদায়ের নারীরা বর্তমানেও কোমড় তাঁতের ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। তবে বর্তমানে বাজার থেকে সুতা কিনে তাতে রঙ করে বম নারীরা তৈরি করছে বিভিন্ন ডিজাইন ও বাহারি রঙের মাফলার, চাদর, কম্বল ও থামি।

শীত মৌসুমে যার ব্যাপক চাহিদা থাকে স্থানীয় ও পর্যটকদের কাছে। হাতে বোনা এসব পণ্যের মধ্যে মাফলার ১৫০ থেকে ২৮০ টাকা, চাদর ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা এবং কম্বল বিক্রি হয় ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকায়।

বম সম্প্রদায়ের নারীরা বলেন,’নিজস্ব তাঁতকে তুলে ধরার জন্য আমরা বানিয়ে থাকি। এগুলো আমাদের নিজেদের তৈরি শাল। আমরা কোমড়ে বেধে বানাই। অনেক পর্যটকরা এখানে আসেন। তারা এসব কিনে নিয়ে যান। কম্বল, চাদর বানিয়ে সংসার চালাই।

ফারুক পাড়ার কোমর তাঁত শিল্পী লিমা বম বলেন, দশকের পর দশক ধরেই পাহাড়ি নারীরা এ পেশায় যুক্ত। একটি থামির কাজ শেষ হতে ৪ থেকে ৭ দিন সময় লাগে। ভালো মানের একটি থামি বিক্রি করে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা আয় করা যায় বলেও জানান এ নারী।

NewsDetails_03

বম জনগোষ্ঠীর তরুণী মুমু বম জানান, শিমুল তুলা থেকে চরকার মাধ্যমে সুতা তৈরি করা হয়। সে সুতায় রং লাগিয়ে কোমর তাঁতের মাধ্যমে কাপড় তৈরি করা হয়।

কোমর তাঁত শিল্পী নু মার্মা বলেন, একটি থামি বুনতে সময় লাগে সাতদিন। খরচ হয় ৩০০ থেকে ৩৫০০ টাকা। থামি বিক্রি করেন ৪০০০ থেকে ৫০০০ টাকায়। প্রতিমাসে এভাবে তাদের আয় দাঁড়ায় ৭ থেকে ১০ হাজার টাকা।

বান্দরবানে বার্মিজ মার্কেটের দোকানিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, স্থানীয়দের পাশাপাশি পাহাড়ে বেড়াতে আসা পর্যটকদের কাছে কোমর তাঁতে তৈরিকৃত পণ্য বেশ জনপ্রিয় হওয়ায় দিন দিন এর চাহিদা বাড়ছে। এ ছাড়াও শহরের মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স, মাস্টার মার্কেট, পূরবী মাকের্ট, কেএস প্রু মার্কেটসহ স্থানীয় বাজারগুলোতে পাহাড়ি নারীদের তৈরি কোমরতাঁতের বিভিন্ন রকমের কাপড় বিক্রি হচ্ছে।

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে আধুনিক ডিজাইন ও মান উন্নয়ন করা গেলে এ পণ্যের প্রসার আরও বাড়বে। পাশাপাশি এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে প্রয়োজনীয় সহায়তার আশ্বাস কর্তৃপক্ষের।

জেলা মহিলা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আতিয়া চৌধুরী বলেন, ‘শীতবস্ত্র শাল, মাফলার, কম্বল চমৎকারভাবে তারা তৈরি করেন। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে এগুলোকে যুগোপযোগী করা গেলে বাজার আরও সম্প্রসারিত হবে।’

ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের জেলা প্রধান শামীম আলম বলেন, ‘বেশিরভাগ লোকজনকে আমরা প্রশিক্ষণ দেয়ার পর তাদের প্রতিষ্ঠার জন্য ঋণ দিয়েছি। প্রতিবছর আমরা দুই-তিনটা কোর্সের মাধ্যমে নতুনদের প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।’

পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের ১১টি ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর মধ্যে বর্তমানে বম ও খেয়াং সম্প্রদায় ঐতিহ্যবাহী কোমড় তাঁতের শিল্প এখনো টিকিয়ে রেখেছেন। শুধুমাত্র বান্দরবানেই ৫ হাজারের বেশি নারী জড়িত রয়েছেন এই শিল্পের সাথে।

আরও পড়ুন