প্রবারণার আনন্দে মাতোয়ারা পাহাড়ের মানুষ

NewsDetails_01

ড্রাগনের আদলে রথ টানা আর রাতের আকাশে শত শত রং বেরংয়ের ফানুস উত্তোলনে পাহাড়ের রাতের আকাশ বর্ণিল রুপ ধারণ করেছে। পাহাড়ের বৌদ্ধ অনুসারীরা তাদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব ‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ’ (প্রবারণা পূর্ণিমা) উৎযাপনে মেতে উঠে।

সোমবার সন্ধ্যা থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি, লামা, আলিকদম, রুমাসহ ৭টি উপজেলায় আদিবাসীরা এই উৎসবে মেতে উঠে তারা। বৌদ্ধ মন্দিরে মন্দিরে (ক্যায়াং) জ্বালানো হয় হাজারো প্রদীপ বাতি, ফানুস উত্তোলন আর রাতের আকাশে আতশবাজির ঝলকানি সত্যি নজর কেড়ে নেয়।

গত রবিবার ও সোমবার সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত নুতন নতুন পোশাকে শহরের খ্যংওয়া ক্যাং, খ্যংফিয়া ক্যাং, রাম জাদি, করুণাপুর বৌদ্ধ বিহার, বুদ্ধ ধাতু জাদি, রাম জাদি, সার্বজনীন বৌদ্ধ বিহার, আম্রকানন বিহারসহ অন্যান্য ধর্মীয় ক্যাং বা বিহারগুলোতে প্রার্থনা এবং ছোয়াইং দান করেন বৌদ্ধ অনুসারীরা। এ সময় হাজার হাজার আদিবাসী বিশেষ প্রার্থনায় অংশ গ্রহন করেন। মারমা তরুন তরুনীরা রাতে মারমা সঙ্গীতের মাধ্যমে আদিবাসী অধ্যুষিত পাড়ায় পাড়ায় একে অপরের আয়োজনে গিয়ে ফানুস উত্তোলনের মধ্যে দিয়ে তৈরি করেন বিভিন্ন ধরনের পিঠা-পুলি।

সোমবার সন্ধ্যায় শহরের পুরাতন রাজবাড়ির মাঠ থেকে ‘ছংরাসিহ্ ওয়াগ্যোয়াই লাহ্ রাথা পোয়েঃ লাগাইমে.. ’ (সবাই মিলে মিশে রথযাত্রায় যায়..) আদিবাসী মারমা’রা এই বিশেষ গানটি পরিবেশন করে মাহারথ যাত্রা শুরু করে। এ সময় পাংখো (এক ধরণের পুতুল) নৃত্য পরিবেশন আর রথ টানতে শত শত আদিবাসীরা রাস্তায় নেমে আসে। রথে জ্বালানো হয় হাজার হাজার মোমবাতি এবং দান করা হয় নগদ অর্থ।

NewsDetails_03

অন্যদিকে বর্নিল এ অনুষ্ঠানে স্থানীয় রাজার মাঠ থেকে হাজার হাজার ফানুস উত্তোলন করেন, পার্বত্য মন্ত্রী বীর বাহাদুর উশৈসিং এমপি। এসময় উপস্থিত ছিলেন পৌর মেয়র শামসুল ইসলাম, পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য লক্ষীপদ দাস সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের স্থানীয় নেতারা। দলমত নির্বিশেষে এসময় সবাই ফানুস উত্তোলনে মেতে উঠেন।

‘ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ’ উৎযাপন কমিটির সভাপতি হ্লাএমং থেওয়াং মারমা বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও নির্বিঘ্নে ওয়াগ্যোয়াই পালন করা হচ্ছে ।’

বৌদ্ধ অনুসারীরা তিন মাসব্যাপী বর্ষাবাস শেষ করে এবং শীল পালনকারীরা প্রবারণা পূর্ণিমার দিনে (ওয়াগ্যোয়াই পোয়েঃ) বৌদ্ধ বিহার থেকে নিজ সংসারে ফিরে যান আর এই কারণে আদিবাসীদের কাছে এই দিনটি বেশ তৎপর্যপূর্ণ।

সোমবার মধ্যরাতে রথ টানার মধ্যে দিয়ে এবং মধ্যরাতে শঙ্খ (সাঙ্গু) নদীতে রথ উৎসর্গ করার মধ্যে দিয়ে ইতি টানা হয় এই বর্নিল উৎসবের।

পাহাড়ের বর্ণিল এই উৎসবকে কেন্দ্র করে বান্দরবানে পর্যটকদের আগমন ঘটে।

আরও পড়ুন