বান্দরবানে পাহাড় ধসের আশঙ্কা

NewsDetails_01

প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসে ব্যাপক হতাহতের ঘটনায় গত ২ দিনের টানা বৃষ্টির কারনে পাহাড় ধসে ক্ষয় ক্ষতি এড়াতে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় বসবাসকারীদের নিরাপদে আশ্রয় নিতে বান্দরবানের বিভিন্ন উপজেলায় মাইকিংসহ স্থানীয়দের সতর্ক করা হচ্ছে।

বান্দরবান আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার এর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ এমদাদুল হক জানান, গত ২৪ঘন্টায় বান্দরবানে ৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের রেকর্ড করা হয়েছে, ভারী বৃষ্টিপাতের কারনে চট্টগ্রাম বিভাগের কোথাও কোথাও পাহাড় ধসের সম্ভাবনা রয়েছে।

বান্দরবানের মৃত্তিকা ও পানি সংরক্ষণ কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. মাহাবুবুল ইসলাম জানান, অতিরিক্ত পরিমানে পাহাড় কাটার ফলে পাহাড়ে মাটির ওপরের রক্ষাস্তর সরে গিয়ে ভেতরের নরম অংশ বেরিয়ে আসে। এর ফলে ভূমিক্ষয়ের মাধ্যমে পাহাড়ে ফাটল তৈরি হয়। এ অবস্থায় বর্ষার ভারী বর্ষণে পাহাড়ের ফাটলে পানি ঢুকে পাহাড় ধস হয়।

সরকারী তথ্য মতে, বান্দরবান শহরে পাহাড়ে বসবাস করা ঝুঁকিপূর্ন পরিবারের সংখ্যা ১৪৪টি। এর মধ্যে বান্দরবান-কেরানীহাট সড়কে বান্দরবান অংশে ৬৫টি, মেঘলা পর্যটনের পুরনো সড়কের অংশে ৬০টি, রোয়াংছড়ি সড়কে ৭টি এবং আশপাশে অন্যান্য জায়গায় ১২টি।

জানা য়ায়, বান্দরবান সদর উপজেলার কালাঘাটা, কাসেমপাড়া, ইসলামপুর, বনরূপা পাড়া, হাফেজঘোনা, বাসস্টেশন এলাকা, স্টেডিয়াম এলাকা, নোয়াপাড়া, কসাইপাড়া, রুমা উপজেলার হোস্টেলপাড়া, রনিনপাড়া, লামা উপজেলার হরিনমারা, তেলুমিয়া পাড়া, ইসলামপুর, গজালিয়া, মুসলিম পাড়া, চেয়ারম্যানপাড়া, হরিণঝিড়ি, টিঅ্যান্ডটি এলাকা, সরই, রুপসীপাড়া, নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার উত্তরপাড়া, বাইশফাঁড়ি, আমতলী, রেজু, তুমব্রু, হেডম্যানপাড়া, মনজয় পাড়া, দৌছড়ি, বাইশারীসহ সাতটি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকি নিয়ে অপরিকল্পিতভাবে বসতি গড়ে তুলেছে প্রায় ৩০ হাজারেরও অধিক পরিবার।

NewsDetails_03

বান্দরবান পৌরসভা বালাঘাটা এজাহার মিয়া ঘোনা এলাকায় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী মোঃ আব্দুর রশিদ জানান,আমরা ঝুঁকি আছে জেনেও পাহাড়ের নিচে একটু জায়গা সমান করে পরিবার নিয়ে কোন রকমে বসবাস করছি।

সরকারি তথ্যমতে, বান্দরবানসহ তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড় ধসে ২০১৭সালে ১৬৮ জনের প্রাণহানি ঘটে আর আহত হয় ২২৭ জন। পাহাড় ধসে ১৭সালে ৩ হাজার ৭৫টি বাড়ি সম্পূর্ণ ও ৩৬ হাজার ৬৩৭টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

জেলা তথ্য অফিস সুত্রে জানা য়ায়, গত ৫ বছরে বান্দরবানে পাহাড় ধসে ২১ জন নিহত হন। তৎমধ্যে ২০১৭ সালের ১৩ জুন সদরের কালাঘাটায় ৭, রুমা সড়কে ২৩ জুলাই ৫, ২০১৮ সালের ৩ জুলাই কালাঘাটায় ১ ও লামায় ৩, ২০১৯ সালের ১৪ জুলাই লামাতে ১, ২০২০ সালের ১ সেপ্টেম্বর আলীকদমের মিরিঞ্জা এলাকায় ১ ও ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর সাইঙ্গ্যা ঝিরিতে একই পরিবারের ৩ জন।

শহরের ইসলাম পুর এলাকার পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারী ফাহমিদা বলেন, জমি কিনে বসত করার মতো সমতল জায়গা পায়নি, এঘর ছাড়া আমাদের অন্য কোন অবলম্বন নেই, তাই আমরা বাধ্য হয়েই এখানে বসবাস করছি।

এই ব্যাপারে বান্দরবান জেলা প্রশাসনের নেজারত ডিপুটি কালেক্টর (এনডিসি) শেখ আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, দুর্যোগ মোকাবেলায় প্রস্তুতি গ্রহন করা হয়েছে, পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে থাকা বসবাসকারীদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে ইতোমধ্যে প্রতিটি উপজেলার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও ইউএনওকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন