যেন আকাশ, পাহাড় আর মেঘের মিতালী

NewsDetails_01

মিরিঞ্জা ভ্যালি, যেখানে গেলে দেখা মিলে পাহাড়, আকাশ আর মেঘের মিতালি। নীলাকাশে সাদা বকের উড়াউড়ি। চারদিক থেকে ধেয়ে আসা বিশুদ্ধ হাওয়া। সমতল ভূমি থেকে প্রায় ১৫শ ফুট উচ্চতায় মেঘের ওপর থেকে দিগন্ত জোড়া পাহাড় সবুজের সমারোহ দেখার অনুভূতি। এথানে গেলে মনে হবে যেন মেঘ ভেলার ওপর আপনি। শীতল এই মেঘ পরশে জুড়িয়ে যাবে হৃদয় ও মন। মেঘ আর কুয়াশার লুকোচুরি খেলার দেখা মিলবে একদম ভোর বা সন্ধ্যায়। বর্ষাকাল হলে সারা দিনই দেখা মিলবে মেঘের আসা-যাওয়া খেলা। আর এসব দেখতে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে সকাল বিকাল ভিড় জমায় ভ্রমণ পিপাসুরা। বান্দরবান জেলার লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের পাশেই অবস্থিত এই মনোহারিণী ‘মিরিঞ্জা ভ্যালি’।

পাহাড়ের চূড়া ও সবুজের মাঝ দিয়ে দুই পাশের দিগন্ত দেখতে দেখতে কখন যে মিরিঞ্জা ভ্যালিতে পৌঁছে যাবেন বুঝতেই পারবেন না। তবে পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরতে গেলে সন্ধ্যার আগে ফেরাই ভালো। মিরিঞ্জা ভ্যালির সবচেয়ে সুন্দর সময় সকালের সূর্যোদয় ও বিকালের সূর্যাস্তের দৃশ্য। সকালটা এত সুন্দর, আপনি পৌঁছামাত্র কয়েক মিনিটের জন্য স্তব্ধ হয়ে যাবেন। তবে এখানে প্রবেশে বা সৌন্দর্য অবলোকনে কোনো টাকা খরচ হয় না।

খোঁজ নিয়ে যানা যায়, মিরিঞ্জা ভ্যালির মালিক মো. জিয়াউর রহমান নতুন করে দুটি মাচাং ঘর ও খাবারের দোকান করেছেন। রয়েছে অর্ধশতাধিক তাঁবু ক্যাম্পিংয়ের সুবিধা। প্রতিদিনই দেশের দূর-দূরান্তের ভ্রমণপিপাসু মানুষ খোলা আকাশের নিচে তাঁবু ক্যাম্পিং করে মিরিঞ্জা ভ্যালির সৌন্দর্য ও জোছনামাখা রাতের রূপ দেখতে যান মিরিঞ্জা ভ্যালিতে।

ভ্যালির মালিক মো. জিয়াউর রহমান জানান, এখানে একটি মাচাং ঘরে পরিবার নিয়ে রাতযাপনের সুবিধা রয়েছে। চাইলে ৬-৭ জন বন্ধু মিলেও মাচাং ঘরটিতে থাকতে পারেন। প্রতি রাতের জন্য আপনাকে গুনতে হবে ১ হাজার টাকা। পর্যটকরা চাইলে নিজেরা রান্না করে খেতে পারেন অথবা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক রান্না করে খাওয়ানোর ব্যবস্থা আছে। খুবই কম খরচে অনুভব করবেন দার্জিলিং বা নেপাল ভ্রমণের সাধ। মিরিঞ্জা পাহাড়ে নামার পরই শুরু হয় কোলাহলমুক্ত, দূষিত বাতাসমুক্ত ও যান্ত্রিকতামুক্ত স্নিগ্ধ-সুশোভিত এক নতুন রাজ্য।

NewsDetails_03

সম্প্রতি ঢাকার মিরপুর থেকে মিরিঞ্জা ভ্যালিতে ঘুরতে আসেন আরমান মাহমুদ, আনোয়ার মৃধা ও শরিফুল ইসলাম। তারা বলেন, এই জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্য উদয় ও অস্ত্র দেখতে এত সুন্দর, তা বর্ণনা করার মতো না। আমরা তিন বন্ধু মিলে এখানে তাঁবু ক্যাম্পিং করে থাকতে এসেছি। রাতের জোছনামাখা সৌন্দর্য দেখে সত্যি আমরা বিমোহিত।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মোস্তফা জাবেদ কায়সার বলেন, আমি নিজেও কয়েকবার মিরিঞ্জা ভ্যালিতে গিয়েছি। জায়গাটি সব সময়ই সুন্দর। লামা পর্যটন শিল্পে মিরিঞ্জা ভ্যালি অবদান রাখবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

যেভাবে যাবেন :
দেশের যেকোনো জায়গা থেকে কক্সবাজার যাওয়ার পথে চকরিয়া বাস টার্মিনালে নামতে হবে। সেখান থেকে লামা-আলীকদম পথে জিপ, বাস বা সিএনজি করে মিরিঞ্জা ভ্যালিতে যাওয়া যায়। লামা-আলীকদম সড়কে মিরিঞ্জা পাহাড়ের পাশে গাড়ি থেকে নেমে ১০ মিনিট হাঁটলেই মিরিঞ্জা ভ্যালি। চাইলে মোটরসাইকেল নিয়ে স্পটে যেতে পারেন। চকরিয়া থেকে মিরিঞ্জা পাহাড়ের দূরত্ব ২৪ কিলোমিটার। বাস বা জিপের ভাড়া লাগবে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। চাইলে সিএনজি বা প্রাইভেটকার নিয়েও যেতে পারেন। যাওয়ার রাস্তাও খুব সহজ, তেমন একটা কষ্টের পথ না। কারণ সবটা পথ গাড়িতে গিয়ে শুধু ১০ মিনিট হেঁটেই যাওয়া যায়। এখন জায়গাটি খুবই পরিচিত। আর মিরিঞ্জা পাহাড় থেকে লামা শহরের দূরত্ব মাত্র ৬ কিলোমিটার। মিরিঞ্জা ভ্যালিতে দাঁড়িয়ে লামা শহরটি দেখা যায়। একই সঙ্গে দিগন্তজোড়া আলীকদম ও থানচি উপজেলা দেখতে পাবেন ভিউ পয়েন্টে দাঁড়িয়ে।

খাবার :
সারা দিন থাকতে চাইলে দুপুরের খাবার, পানি, হালকা নাশতা সঙ্গে নেওয়া ভালো। তবে চাইলে ওখানে অর্ডার দিয়েও খেতে পারেন।

সাবধানতা :
মিরিঞ্জা ভ্যালি পাহাড়ের চূড়ায় বিধায় দল বেঁধে চলা ভালো। দুই পাশে খাড়া গভীর গিরিখাদ। অসতর্ক থাকলে পিছলে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

আরও পড়ুন