রাঙামাটিতে চোরাকারবারীদের কাছে আগাম সইয়ের কাগজ দিয়েছেন রেঞ্জ কর্মকর্তা

বন উজাড়ের গোপন সমঝোতা

NewsDetails_01

ভৈাগলিক কারণে রাঙামাটি জেলার বেশ কয়েকটি রেঞ্জের বনজ সম্পদ বৈধ এবং অবৈধ দুই ভাবেই দীঘিনালা হয়ে খাগড়াছড়ির ওপর দিয়েই সারাদেশে সরবরাহ হয়ে থাকে। সে কারণে দীঘিনালা উপজেলার জামতলীতেই সংশ্লিষ্ট রেঞ্জ অফিসগুলোর অবস্থান।
পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ, রাঙ্গামাটি ১ এর আওতায় বাঘাইহাট ও নারাইছড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম রসুল সেই সুবাদে গত ১১ মাস ধরে দায়িত্ব পালন করছেন জামতলীতেই।

কিন্তু তিনি যোগদান করার পর থেকেই কাঠ চোরাকারবারীদেও দৌরাত্ম বেড়ে চলেছে মারাত্মক ভাবে। আর এই অপকর্ম নির্বিঘ্নে করতে বন উজাড়ের গোপন সমঝোতায় চোরাকারবারীদের কাছে আগাম সই করা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সরবরাহের অভিযোগ উঠেছে রেঞ্জার গোলাম রসুলের বিরুদ্ধে।

রেঞ্জ কর্মকর্তার ক্ষমতার অব্যবহারে অফিসের অন্যান্য কর্মকর্তারাও অসহায়ত্ব প্রকাশ করছেন। আর আগাম সইসহ সিলমোহরকৃত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পৌঁছেছে এই প্রতিনিধির কাছে। অভিযুক্ত রেঞ্জ কর্মকর্তার বৈষয়িক লোভে অগ্রিম সই সিল মেরে সরকারি ফরম বন চোরাকারবারীদের দেওয়ার ফলে রাঙ্গামাটির বাঘাইহাট ও নাড়াইছড়ি রেঞ্জের সংরক্ষিত বন উজাড়ের পথ অনেকটাই অবারিত হয়েছে। এতে প্রাকৃতিক পরিবেশ ও জীববৈচিত্যের ওপর বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টির আশঙ্কা পরিবেশবিদদের। সরকারও বঞ্চিত হচ্ছে বিপুল অংকের রাজস্ব থেকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ফরেস্টার বলেন, রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম রসুলের অনিয়মের বিষয়ে কেউ কোন কথা বললেই তাকে নানাভাবে ভয়ভীতি দেখিয়ে অন্যত্র বদলি করে দেওয়ার হুমকি প্রদর্শন করেন।

NewsDetails_03

অনুসন্ধানে, এই রেঞ্জ কর্মকর্তা নিয়মিত কর্মস্থলে না থেকে চোরাকারবারীদের ভূয়া জোত পারমিট করতে, সরকারি ফরম ১, মালিকানা হাতুরী তৈয়ার করার অনুমতি পত্র, ফ্রি পারমিট মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন, উলু ফুলের চলাচলের মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন, আন্তঃজেলা চলাচল পাশের আবেদন, জামানতের টাকা ছাড়মুক্ত করার আবেদন এবং খাড়া মার্কাকৃত/কর্তন ও খন্ডনকৃত গাছগুলি সরেজমিন তদন্ত কারার প্রতিবেদনের অগ্রিম সই ও সিল মেরে রেঞ্জ কর্মকর্তার পছন্দের লোকজনকে আগাম সরবরাহের প্রমাণ মিলেছে। এবং তাঁর (রেঞ্জার গোলাম রসুল) সিলসহ সইকরা সরকারি ফরম স্মারক নম্বরসহ এই প্রতিনিধির সংগ্রহে রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঘাইহাট রেঞ্জে বেশ কয়েকটি সংরক্ষিত বনাঞ্চল রয়েছে। কিন্তু সেই বনাঞ্চলে খুব বেশি গাছ নেই। যেটুকু গাছ রয়েছে তাও এই বন কর্মকর্তা যোগদান করার পরই অবেধপথে সাবাড়ের পথে। বন চোরাকারবারীদের সাথে আতাঁতের মাধ্যমে এই রেঞ্জ কর্মকর্তা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ বনে গেছেন।

নাম প্রকাশে অন্ছিুক বেশ কয়েকজন বৈধ কাঠ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, রেঞ্জ কর্মকর্তার এই অবৈধ পথ অবলম্বনে বৈধ কাঠ ব্যবসায়ীরা জোত পারমিট করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শুধুমাত্র রেঞ্জ কর্মকর্তার পছন্দনীয় লোকজনকে অগ্রিম সই ও সিল মেরে যাবতীয় কাগজ পত্র দেওয়ায় এই রেঞ্জের বন উজাড়র মরিয়া হয়ে উঠেছে চোরাকারবারীরা। তিন পার্বত্য জেলার সব রেঞ্জ থেকে প্রতি মাসে বৈধ পারমিট যতগুলো ইস্যু হয় তার চেয়ে গড়ে বেশি জোত পারমিট ইস্যু হবারও রেওয়াজ চালু হয়েছে এই কর্মকর্তা যোগদান দেওয়ার পর থেকেই।

এ বিষয়ে রেঞ্জ কর্মকর্তা গোলাম রসুল সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আপনি আমার বিরুদ্ধে রির্পোট করলেও আমার কিছু হবে না। আমাকে ফাঁসানোর জন্য কিছু সহকর্মী আমার বিভাগীয় সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে স্বাক্ষর জাল করে এসব কাগজ সরবরাহ করেছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম উত্তর বন বিভাগ, রাঙ্গামাটি-১ এর বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আব্দুস সালেক প্রধান বলেন, কোন রেঞ্জ কর্মকর্তা কোন কাগজে অগ্রিম সই ও সিল মেরে কাঠ ব্যবসায়ীদের দেওয়ার বিধান নেই। উনি যদি সেটা করে থাকে সেটা অন্যায়,সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখব।

আরও পড়ুন