লামায় কার দেয়া আগুনে পুড়লো ১৭ পরিবারের ৮৮ একর ফলদ বনজ বাগান ?

ক্ষতি ২৮ লাখ টাকা

NewsDetails_01

বান্দরবানের লামা উপজেলার সরই ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে পৃথক আগুনের ঘটনায় প্রায় ৮৮ একর ফলদ ও বনজ বাগান পুড়ে গেছে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে প্রাথমিকভাবে ২৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবী করেছেন ক্ষতিগ্রস্ত ১৭ পরিবার। শুধু তাই নয়, অল্পের জন্য এ আগুন থেকে রক্ষা পেয়েছে কোয়ান্টাম স্কুল এন্ড কলেজের একাডেমিক ভবন।

বাগান মালিক ও এলাকাবাসীর ধারণা নাশকতামূলক উদ্দেশ্যে এ অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ ঘটনায় নাশকতাকারীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানান বাগান মালিক আতাউর রহমান ও কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষসহ ক্ষতিগ্রস্ত ১৭ পরিবার।

অভিযোগে প্রকাশ, লামা রাবার প্লান্টেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠানের লাগানো আগুনে ১০৪৪ দাগের ওপর স্থিত পার্শ্ববর্তী কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ও আতাউর রহমানসহ বিভিন্ন অংশে বাগান মালিকের ৩০-৩৫ বছর ধরে তিলে তিলে সৃষ্ট ৮ একর বনজ বাগান পুড়ে যায়। এতে বাগান মালিকদের প্রায় ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। বাগান দুটি উপজেলার সরই ইউনিয়নের দুর্গম পাহাড়ি বোধিছড়া এলাকায় অবস্থিত। এর আগে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নেও অবৈধ পাথর ও গাছ পাচারকারীর আগুনে আরো ১৫ জন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠি সম্প্রদায়ের সৃজিত ৮০ একর ফলদ ও বনজ বাগান পুড়ে ২০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

সরই ইউনিয়নের বোধিছড়া আতাউর রহমানের বাগান কেয়ারটেকার সুরুজ মিয়া বলেন, দীর্ঘ ৩০-৩৫ ধরে আমার মালিক পক্ষ ৩৫ একর পাহাড়ি জায়গায় বনজ বাগান গড়ে তুলেন। গত সোমবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পার্শ্ববর্তী লামা রাবার কোম্পানী নামের একটি প্রতিষ্ঠান তাদের পাহাড়ের জঙ্গল পরিস্কার করে আগুন দিলে সেই আগুন আমার মালিকের বাগানে ছড়িয়ে পড়ে। পাহাড়ে আগুন দেয়ার বিষয়ে পার্শ্ববর্তী কোন বাগান মালিক ও আমাদের অবহিত করেনি এবং দুই বাগানের মাঝে আগুন না ছড়িয়ে পড়তে যে ফায়ার রোড় (ফাইল) করতে হয় তাও করেনি তারা। ফলে মুহুর্তে আগুন ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। পরে পাশের কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের ছাত্র ছাত্রী ও কর্তৃপক্ষকে খবর দিলে তারা প্রায় আড়াই শতাধিক লোকজন নিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে রাত সাড়ে ১১টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনেন। ততক্ষণে আগুনে বিভিন্ন প্লটের ৮ একর বাগানের অধিকাংশ অংশ পুড়ে যায়। এতে ৮ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।

আরো জানা গেছে, এ সময় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের দূরদর্শীতার কারণে আগুনের হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পায় কোয়ান্টাম স্কুল এন্ড কলেজের একাডেমিক ভবন।

NewsDetails_03

অভিযোগ অস্বীকার করে লামা রাবার প্লান্টেশনের ম্যানেজার মো. আরিফ বলেন, আগুনের কারণে কোন বাগানের ক্ষতি হয়নি। কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন ও আতাউর রহমানের অভিযোগ মিথ্যা।

সরই বোধিছড়ার বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম, মোহাম্মদ বাবুল ও মোমিনুল ইসলামসহ অনেকে জানান, আগুনে আতাউর রহামানের সৃজিত গাছগুলো ঝলসে গেছে। এসব গাছে আর পাতা গজাবে না, নিশ্চিত মারা যাবে। যারা আগুন দিয়েছে তাদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।

এই ব্যাপারে সরই ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য মো. জামাল উদ্দিন বলেন, বাগানে আগুন লাগার খবর শুনে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। পাশের বাগানের মালিকদেরকে কোন ধরণের অবগত না করে হঠাৎ রাবার বাগানে আগুন দেয়াটা মোটেও ঠিক হয়নি। ওই সসয় কোয়ান্টামের লোকজন যদি আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ না করতেন তাহলে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ পুরো এলাকা পুড়ে ছাঁই হয়ে যেত।

এদিকে ১৬ মার্চ আগুনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্থরা হলেন, ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কাঁঠাল ছড়া ত্রিপুরা পাড়ার বাসিন্দা অসিচন্দ্র ত্রিপুরা, মহেন্দ্র ত্রিপুরা, নয়া ত্রিপুরা, সতিশ চন্দ্র ত্রিপুরা, যোষেব ত্রিপুরা, সাধন ত্রিপুরা, গুনন্দ ত্রিপুরা, যোওয়াকিং ত্রিপুরা, ভাগ্যরাম ত্রিপুরা, দানিয়ের ত্রিপুরা, আলফা ত্রিপুরা, পিতর ত্রিপুরা, দিল্লচন্দ্র ত্রিপুরা ও মনিয়া ত্রিপুরা।

তারা জানান, কিছু বহিরাতগত অবৈধ পাথর ও গাছ পাচারকারী গত তিনমাস আগে একটি কলা বাগানে টংঘর বানিয়ে অবস্থান করে পাথর উত্তোলন ও গাছ কেটে আসছে। সেখানে আগুন জ্বালিয়ে রান্নাসহ ধুমপানের কারণে আগুনের সূত্রপাত হয়। বাগান পুড়ে যাওয়ায় পরিবারের ভরণ পোষন চালানোর মত আর কোন উৎস রইল না বিধায় আগুনের সূত্রপাত উদঘাটন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বুধবার সকালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেন বলে জানান পাড়া কারবারী শিমন জালাই ত্রিপুরাসহ ক্ষতিগ্রস্ত ১৫ পরিবার।

এই ব্যাপারে লামা থানা পুলিশের অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, দুর্গম এলাকা হওয়ায় এবং সড়ক যোগাযাগ ব্যবস্থা না থাকায় ফায়ার সার্ভিসের ইউনিট কোন সহায়তা করতে পারেনি। ক্ষয়ক্ষতি উল্লেখ করে কেউ এখনো কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও পড়ুন