হারিয়ে যাচ্ছে শাপলা

NewsDetails_01

shaplaবাংলাদেশের জাতীয় ফুল শাপলা। এটি দেখতে খুব সুন্দর। শাপলা ফল (শালুক) ছোট ছোট ছেলে মেয়েদের প্রিয় খাবার। শাপলা ডাটা তরকারী হিসাবে খেতে রসালো ও সুস্বাদু। পাহাড়ী ও বাঙ্গালী উভয়ে শাপলা ডাটা রান্না করে খায়। পাহাড়ীরা খায় নাপ্পি দিয়ে আর বাঙ্গালীরা শুটকি দিয়ে। আবার কেউ কেউ মাছ দিয়েও রান্না করে খায়। এ শাপলা দেশের অন্যান্য অঞ্চলের ন্যায় পার্বত্যাঞ্চলের ডোবা, নালা, জলাশয় ও পুকুরে জন্মে। কালের বিবর্তনে ডোবা নালা জলাশয় ক্রমশঃ ভরাট হয়ে যাওয়ায় এ গুলো এখন আগের মত চোখে পড়েনা। ধারনা করা হয় শাপলা জন্মাবার উৎস গুলো অনেকাংশে নষ্ট হয়ে গেছে। তবে সৌখিনরা সখ করে তাদের পুকুরে বিভিন্ন জাতের শাপলা চাষ করেন। রাজবাড়ী, দরদরী ও সাবেক বিলছড়ি বৌদ্ধ বিহার, ইয়াংছা, ক্যাজুপড়া, গজালিয়া এলাকার লোক জন মাঝে মধ্যে শাপলা ডাটা বাজারে এনে বিক্রি করতে দেখা যায়। ৫-৭ফিট লম্বা এ ডাটা গুলো ২০-২৫ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। শাপলা ফলের (শালুক) শুকনো বীচি দিয়ে খই ও মজাদার পিন্নি তৈরী করা যায়। শাপলা ডাটা থেকে নির্গত শ্যাওলা খেয়ে মাছ তাড়া তাড়ি বাড়ে। বিশেষ করে টাঁকি মাছ। এ জাতীয় ফুল ও মজার তরকারী শাপলা সংরক্ষনে কৃষি বিভাগ কিংবা সরকারের কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা পার্বত্যাঞ্চলে।
লামা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামূল হক জানান, পার্বত্যাঞ্চল থেকে শাপলা যাতে হারিয়ে না যায় সে জন্য চাষীদের শাপলা চাষে উদ্ব্দ্ধু করতে হবে। অন্যান্য ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে চাষীদের যে ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় শাপলা উৎপাদনেও তা দিতে হবে।
লামা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার মামুন চৌধুরী জানান, শাপলা ডাটায় সব্জি গুন আছে। আয়রন এবং ক্যালসিয়াম রয়েছে প্রচুর পরিমানে। তিনি বলেন, শাপলা ডাটা মানুষের শরীরে রক্ত শূন্যতা দুর ও হাড় গঠনে সাহয্য করে। তিনি বলেন, এটা কাঁচা ও রান্না করে খাওয়া যায়।
ইয়াংছার সেলিম চৌধুরী জানান, প্রতি বর্ষায় আমার মৎস প্রকল্পে প্রচুর শাপলা ফুল এমনিতেই ফুটে। এগুলো এলাকার মানুষ রান্না করে খায়। আমরাও খাই। আবার অনেকে টাকা দিয়ে কিনে নেয়। সরকারী সুযোগ-সুবিধা পেলে বানিজ্যিক ভাবে শাপলা ফুল চাষ করবেন বলে তিনি জানান।
সাবেকবিলছড়ি বৌদ্ধ বিহারের অধ্যক্ষ উপাইন্দা ওয়েঞ্চা মহাথেরো জানান, শাপলা ফুলগুলো বিহারের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। এ ফুল দিয়ে আমরা বুদ্ধ পূঁজা করি। নাপ্পি দিয়ে এ ফুলের ডাটা আমরা ভর্তা ও তরকারী রান্না করে খাই।
লামা উপজেলা পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সেতারা আহমেদ বলেন, উপজেলা পরিষদের অর্থায়নে পতিত জলাশয় ও ডোবায় মৎস্য চাষের পাশাপাশি পরীক্ষা মূলক শাপলা চাষ দেয়া হবে। যে সমস্ত ডোবায় ও জলাশয়ে শাপলা ফুল আছে সেগুলোকে নষ্ট না করার জন্য তিনি মৎস্য চাষীদের প্রতি আহবান জানান।

আরও পড়ুন