পার্বত্য রাঙামাটি জেলা জাতীয় সংসদের ২৯৯নং আসন। আয়তনের দিক দিয়ে এটি সংসদের বৃহত্তম নির্বাচনী এলাকা, কেননা রাঙামাটি দেশের বৃহত্তম জেলা। ১০ টি উপজেলা নিয়ে এর সংসদীয় আসন বিস্তৃত। দেশে এত গুলো উপজেলা নিয়ে একটি সংসদীয় আসনের নির্বাচন আর কোন নজির নেই। তাই রাঙামাটি জেলাকে ২ থেকে ৩ টি সংসদীয় আসনে ভাগ করার জন্য ইতিমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে, আলাপ আলোচনা এবং বিভিন্ন সভায় সাধারণ মানুষ হতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ দাবি তুলেছেন। তাঁরা সকলেই আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাঙামাটি আসনকে অন্ততপক্ষে দুই থেকে তিনটি আসনে ভাগ করার দাবি জানান। বিশেষ করে কাপ্তাই, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি এবং কাউখালী উপজেলাকে একটি সংসদীয় আসনে আনার জন্য দাবি জানান এই উপজেলায় বসবাসরত সাধারণ নাগরিক এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। কারণ ভৌগোলিকগত কারণে এই ৪ টি উপজেলা পাশাপাশি অবস্থান করছে।
গত কয়েকদিন ধরে এই প্রতিবেদক বিভিন্ন নেটিজনদের ফেইসবুক স্ট্যাটাস এবং ঐ ৪ টি উপজেলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও গণমাধ্যমকর্মীদের সাথে কথা বলে এই দাবির স্ব-পক্ষে কিছু মন্তব্য পান, যা পাঠকদেরকে তুলে ধরা হলো।
মিজানুর রহমান মিজান নামে কাপ্তাই উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সাংগঠনিক সম্পাদক গত শুক্রবার এক পোস্টে কাপ্তাই, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি ও কাউখালী উপজেলা নিয়ে একটি সংসদীয় আসন এর দাবি জানান। তাঁর এই পোস্টে মংচসিং মারমা, মো: নোমান, মো: মাইনুল ইসলাম সুমন, উলাচিং মারমা সহ অনেকে এই দাবির পক্ষে জোড়ালো মন্তব্য করেন।
কাপ্তাইয়ের রাইখালী ইউনিয়ন এর ভালুকিয়ার বাসিন্দা বিশু তনচংগ্যা গত শুক্রবার তাঁর ফেইসবুক পোস্টে রাঙামাটি জেলায় সংসদীয় আসন বৃদ্ধির জন্য দাবি জানালে এতে অনেকে সহমত পোষণ করে মন্তব্য করেন।
যোগাযোগ করা হলে কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ এর সাবেক চেয়ারম্যান ও রাঙামাটি জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক দিলদার হোসেন বলেন, ভৌগোলিকগত কারনে রাঙামাটি আসনটি অনেক বড়। একটি মাত্র আসন দিয়ে একজন এমপি ১০ টি উপজেলায় জনগণকে সেবা প্রদান করা অনেক দুরুহ বিষয়। তাই কমপক্ষে রাঙামাটি সংসদীয় আসনে ৩ টি জাতীয় সংসদের ্ আসন হওয়া প্রয়োজন। বিশেষ করে কাপ্তাই, রাজস্থলী, বিলাইছড়ি ও কাউখালী উপজেলা নিয়ে একটি সংসদীয় আসন করা যায়।
কাপ্তাই উপজেলা বিএনপির সভাপতি লোকমান আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের মধ্যে এখন সবচেয়ে বড় আসন হচ্ছে ২৯৯ নং রাঙামাটি আসন। আমিও চাই, এ আসনকে ভাগ করে আরো ২ টা আসন হউক। কাপ্তাই, কাউখালী, রাজস্থলী ও বিলাইছড়ি উপজেলা নিয়ে আর একটি আসন হলে এলাকার উন্নয়ন আরো দৃশ্য মান হবে এবং লোকজন আরো উপকৃত হবে, তাঁর সাথে সাথে কাপ্তাই কে মৌজা করার দাবিও জানাচ্ছি, এটা ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়নবাসীর প্রাণের দাবি।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কাপ্তাই উপজেলার আমীর হারুনর রশিদ বলেন, রাঙামাটিতে কমপক্ষে ৩ টি সংসদীয় আসন দরকার। কিছু দিন আগে খাদ্য উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার কাপ্তাই সফরে আসলে এক মতবিনিময় সভায় আমি সেই দাবি জানিয়েছিলাম।
বিলাইছড়ি উপজেলা পরিষদ এর সাবেক চেয়ারম্যান বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যা এবং বিলাইছড়ি উপজেলা বিএনপির সভাপতি সালাম ফকির বলেন, এই ৪ টি উপজেলা নিয়ে একটি সংসদীয় আসন সহ রাঙামাটিতে কমপক্ষে তিনটি সংসদীয় আসন বৃদ্ধি এখন সময়ের দাবি।
জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) কাউখালি উপজেলার সভাপতি হ্লাচিং মারমা বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসন বাড়ানোর ক্ষমতা রাখে না, পরবর্তীতে নির্বাচিত সরকার আসলে গন্যমান্যব্যক্তিদের নিয়ে রাঙামাটিতে আসন বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে।
রাজস্থলী উপজেলা বিএনপির সভাপতি মাস্টার খলিলুর রহমান শেখ এবং কাউখালী উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, যেহেতু রাঙামাটিতে ১০ টি উপজেলায় একজন এমপি, তাই তাঁর পক্ষে জনগণের চাহিদা মেটানো অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। তাই জনসংখ্যার অনুপাতে রাজস্থলী, কাউখালী, কাপ্তাই এবং বিলাইছড়ি উপজেলা পৃথক সংসদীয় আসন সহ রাঙামাটিতে আরোও তিনটি সংসদীয় আসন দরকার।
কাপ্তাই উপজেলার হরিনছড়া ১১৯ নং ভাইয্যাতলী মৌজার হেডম্যান থোয়াই অং মারমা, কাপ্তাই প্রেসক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কবির হোসেন এবং রাজস্থলী উপজেলা প্রেসক্লাবের সভাপতি আজগর আলী খান বলেন, এই সব অঞ্চলের প্রান্তিক জনগণ যাতে আরোও বেশী সুযোগ সুবিধা পাই তাই আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাঙামাটি জেলার ১০ টি আসনকে ভাগ করে কমপক্ষে তিনটি সংসদীয় আসন করা যায়।
এই বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রাঙামাটি জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, কোন জেলা বা উপজেলায় সংসদীয় আসন বাড়ানো সিদ্ধান্ত একমাত্র নির্বাচন কমিশনের দপ্তর নিতে পারে।