রুমায় খননযন্ত্রে অবাধে বালু উত্তোলন

NewsDetails_01

বান্দরবানের রুমা উপজেলার সাংগু নদীতে চলছে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন । এতে হুমকির মুখে পড়েছে নদীর তীরবর্তী পরিবেশ । অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের কারণে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব ।

গত সোমবার(২২অক্টোবর) বিকালে সরেজমিনে গিয়ে ঘুরে দেখা গেছে রুমা সদর ইউনিয়নের মুনলাই পাড়া ঘাটে কয়েকজন শ্রমিক সাংগু নদীর পাড়ে স্তুপকৃত বালু দুইটি ট্র্যাকে ভেলসা দিয়ে তুলছে । একই সাথে সাঙ্গু নদীর বিভিন্ন পয়েন্টে ড্রেজার মিশন দিয়ে বালু উত্তোলন করছে । বালু উত্তোলনের ছবি তুলতে গেলে এই প্রতিবেদককে বাঁধা দেয় শ্রমিকরা ।

এক প্রশ্নে কর্মরত শ্রমিকরা জানিয়েছেন, বালু ভর্তি করে দুই-তিনটি ট্র্যাক দিনে ১৫ থেকে ২০বার বিভিন্ন জায়গায় বালু নিয়ে যায়। প্রতি ট্র্যাকে ওভারলোড হলে ২০০ফুট পর্যন্ত বালু নিতে পারে।

আরো জানা যায়, এ হিসেবে দুইটি ট্র্যাকে করে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আট হাজার ঘনফুট উত্তোলন হয়। যা মাসে চার শুক্রবার বাদে ২৬ দিনে বালু উত্তোলন হয়- দুই লক্ষ আট হাজার ঘনফুট বালু। তবে বালু উত্তোলনে কোন অনুমোদন নেই প্রশাসনের।
এদিকে, ওই স্থান থেকে ৫শত গজ দূরে রুমাাখাল মুখের ওপারে রুমা পাড়া ঘাটে চড় খননের মাধ্যমে বালু উত্তোলনের আরেকটি পয়েন্ট। এখানে শ্রমিক লাগিয়ে বালু উত্তোলন করছে- রুমা বাজারে ব্যবসায়ী ফোহ্লাচিং মারমার কনিষ্ঠ সন্তান মংশৈসিং মারমা ওরফে মিলটন(৩৫) ও থানা পাড়ার বাসিন্দা বাথোয়াইচিং মারমা। সাংগু নদী থেকে বড় আকারে ড্রেজিং মেশিন দিয়ে বালু উত্তোলন চলছে।
জানতে চাইলে ব্যবসায়ী মিলটন মারমা বলেন, জমিটি ক্রয়সূত্রে মালিক আমি। সাংগু নদীর পাড়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর চড়, যার পরিমাণ দেড় একরের মত।

আরেক ব্যবসায়ী বাথোয়াইচিং(৪৫) বলেন, একই লাইনে আলাদা আলাদা সীমানায় দখলে তারা তিনটি দলে বালু ব্যবসা করছেন।

তাদের পাশে অন্য একটি পয়েন্ট থেকে বালু উত্তোলন করছে বান্দরবানের মো. হারুন নেতৃত্বে শ্রমিকেরা। সাইট মাঝি মোহাম্মদ হারুন জানান তাদের সীমানার পাশে বালু স্পটটি ঠিকাদার বিপ্লব মারমা।

জানতে চাইলে মুঠোফোনে ঠিকাদার বিপ্লব বলেন ওই জায়গাটি আমার নয়। জায়গাটি চিংসামং মারমা। সে জেলা সদর বান্দরবানে সোনালী ব্যাংকের ব্যাংকার। তবে নদীর পাড়ে এ জায়গা থেকেও বালু উত্তোলনের ব্যাপক প্রস্তুতি লক্ষ্য করা গেছে।

NewsDetails_03

আরেকটি বালুর পয়েন্ট। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, থানা পাড়াঘাট থেকে একটু উপরে ঠিকাদার মোহাম্মদ হারিছ ও রেমাক্রীপ্রাংসা ইনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইউজিন ত্রিপুরা ওরফে মেস্তরাম এর বেদখলীয় জমিতে বালুর স্তুপের ভান্ডার। জমির মালিক প্রশান্ত বাহাদুর ত্রিপুরা ও ফিলিপ ত্রিপুরাসহ আরো অনেকে অভিযোগ করে জানিয়েছেন প্রভাব খাটিয়ে জোর পূর্বক পাঁচজনের প্লটের জমি ক্ষতি সাধন করে দীর্ঘদিন যাবত বালু উত্তোলন করছেন ঠিকাদার হারিছ ও মেস্তরাম গং।

অতি সম্প্রতি এনিয়ে তর্ক-বিতর্কে জমি মালিকদের সাথে মেস্তরাম ত্রিপুরার হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে থানা পুলিশের আন্তরিক হস্তক্ষেপে কারণে ক্ষতিগ্রস্থ জমির মালিক পাঁচজনকে ২৫হাজার টাকা ক্ষতি পূরণ দিতে বাধ্য হয় মেস্তরাম পক্ষ। এসব কাগজ পত্র প্রতিবেদকের হাতে এসেছে।

ক্ষতিগ্রস্থ ফিলিপ ত্রিপুরা ও প্রশান্ত বাহাদুর ত্রিপুরা অভিযোগ করে জানান আমাদের জমি উপর দিয়ে বালু উত্তোলণ মাস খানেক বন্ধ ছিল। তবে গত কয়েকদিন আগে আবারও গভীরে নীচে ঢুকিয়ে বালু খনন করতে সক্ষম এমন মেশিন এ্যাসকেভ্যাটর এনে তাদের জমিতে রেখেছে ঠিকাদার মোহাম্মদ হারিছ। তাদের জমি ক্ষতিসাধন করে হারিছ গং জোর পূর্বক আবারও বালু উত্তোলনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে অভিযোগ করেন ফিলিপ ও প্রশান্ত। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ঠিকাদার হারিছ সাংবাদিকদের বলেন এটা দুই পক্ষ বসে ফয়সালা করা হয়েছে।

রুমাচড় পাড়ার বাসিন্দা মংশৈপ্র মারমা(৬০) বলেন চলতি বছরে গত বর্ষা সময়, গত তিন মাস বালু উত্তোলণ বন্ধ ছিল। তবে সেপ্টেম্বর মাস শেষ না হতেই আবারও শুরু হয়েছে-অবাধে বালু উত্তোলণ। বন্ধ করে দেয়ার উপায় না থাকায় তাঁর জমি চড় পানির মূল্যে বালু ব্যবসাীয়দের দিয়ে দিয়েছেন বলে জানালেন তিনি।

স্থানীয়রা জানায়, প্রভাবশালীদের ছত্র ছায়ায় দীর্ঘ দিন ধরে সাংগু নদীর বিভিন্ন স্থানে ছোট-বড় ছয়টি পয়েন্ট থেকে এ্যাসকেভ্যাটর ও ড্রেজার মেশিনসহ বিভিন্ন দেশীয় পদ্ধতিতে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে । অপরিকল্পিতভাবে বালু উত্তোলনের ফলে বর্ষা মৌসুমে নদীভাঙন তীব্র আকার ধারণ করায় হুমকির মুখে রয়েছে নদী তীরবর্তী ঘরবাড়ি ও আবাদি জমির মালিকেরা।

বালু উত্তোলনের বৈধতা সম্পর্কে জানতে চাইলে উপজেলা চেয়ারম্যান অংথোয়াইচিং মারমা বলেন জেলা প্রশাসনই অনুমোদন দিতে পারে- বালু মহাল । এ উপজেলায় কোনো বালু মহাল নেই। অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের বিষয়টি নিয়ে ইউএনও এর সাথে আলোচনা করা হবে ।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ শামসুল আলম সরকারি কাজে রুমা উপজেলার বাইরে কক্সবাজারে থাকার কথা উল্লেখ করে তিনি মুঠোফোনে বলেন বিভিন্ন অজুহাতে টাকা তোলা সেটা ঠিকাদারা তাদের নিজস্ব ব্যাপার। এটার সাথে উপজেলা প্রশাসন কোনো সম্পর্ক নেই।
সরকার অনুমোদিত বালু মহাল না থাকার কথা উল্লেখ করে ইউএনও বলেন অবৈধভাবে যারা বালু উত্তোলন করছে, তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

আরও পড়ুন