লামায় জমজমাট ইউপি নির্বাচন : বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় অস্বস্তিতে নৌকার প্রার্থীরা

NewsDetails_01

ছোট বড় পাহাড়, মাতামুহুরী নদী বেষ্টিত ও বান্দরবানের সবচেয়ে জনবহুল উপজেলা লামা। চলতি মাসের ১১ নভেম্বর এ উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে একযোগে অনুষ্ঠিত হবে নির্বাচন। নির্বাচনে বিএনপি প্রার্থী ছাড়াই জমে উঠেছে নির্বাচনী প্রচারণা। প্রতিদিন কাকডাকা ভোর থেকে শুরু করে গভীর রাত পর্যন্ত গণসংযোগ করে যাচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থীরা।

এবারে চেয়ারম্যান পদে ১৮ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৬৫ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২২১ জন প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। এখন প্রার্থীদের চোখে ঘুম নেই বললেই চলে। চলছে ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা, উঠান বৈঠক, জনবহুল স্থানে ও হাট-বাজারে নিবার্চনী সভা-সমাবেশ। পাশাপাশি ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতিও। প্রতিক বরাদ্দের পর পর পুরো উপজেলায় গাছের ডালে, রাস্তার উপর, চায়ের দোকানের দেয়ালে টাঙ্গানো হয়েছে প্রতীক, পরিচিতি ও বাণী সম্বলিত বাহারি ধরনের সাদা-কালো পোষ্টার-ব্যানার। বেলা দু’টার পর প্রত্যেক পাড়া-মহল্লা, বাজার ও বিভিন্ন সড়কে নিজ নিজ প্রার্থীদের পক্ষে চলছে মাইকিং। পাশাপাশি প্রচারণা চলছে মোবাইল ফোনে এসএমস এবং সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে নিজেদের পোস্টার শেয়ার করার মধ্য দিয়ে। কে ইউনিয়নে কে কে হবেন চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য ও সাধারণ সদস্য তা নিয়ে ভোটারদের মধ্যে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। ভোটারদের কাছে গিয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা বিগত দিনের এলাকার উন্নয়নের ফিরিস্থি তুলে ধরছেন। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা চেয়ারম্যানদের অতীত ভুল ভ্রান্তি তুলে ধরে নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রত্যাশা করছেন।

এদিকে, উপজেলার ৭ ইউনিয়নের মধ্যে লামা সদর, ফাঁসিয়াখালী এবং আজিজনগর ইউনিয়নে নিজ দলের বিরোধী প্রার্থীর সাথে প্রতিদন্ধিতা করতে হচ্ছে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীকে। লামা সদর ইউনিয়নে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সহ সভাপতি আক্তার কামাল এবং ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মোঃ ওমর ফারুক দলের গঠনতন্ত্র লংঘন করে দলীয় প্রার্থীর বিপরীতে নির্বাচন করায় ইতিমধ্যে দল থেকে বহিস্কার করা হলেও আজিজনগরে স্বতন্ত্র প্রার্থী রশিদ আহমদ দলীয় কোন পদে না থাকায় তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি আওয়ামী লীগ। আজিজনগরে আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতা-কর্মী প্রকাশ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীর নির্বাচন করছেন। এ কারণে ৩ ইউনিয়নের নৌকা প্রতিকের প্রার্থীরা কিছুটা অস্বস্তিতে রয়েছেন বলে জানান ভোটাররা।

সূত্র জানায়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপে উপজেলার ৭টি ইউনিয়নে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ইউনিয়ন গুলো হচ্ছে,গজালিয়া, লামা, ফাঁসিয়াখালী, আজিজনগর, সরই, রুপসী পাড়া ও ফাইতং। আসন্ন এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ১৮ জন, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য পদে ৬৫ জন এবং সাধারণ সদস্য পদে ২২১ জন প্রার্থী প্রতিদন্ধিতা করছেন। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদন্ধিতাকারী প্রার্থীরা হলেন, গজালিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বাথোয়াইচিং মার্মা (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ বাবুল হোসেন (মোটর সাইকেল)। লামা সদর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মিন্টু কুমার সেন (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী আক্তার কামাল (মোটর সাইকেল)। ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ নুরুল হোসাইন (নৌকা), স্বতন্ত্র প্রার্থী জাকের হোসেন মজুমদার (আনারস), মোঃ ওমর ফারুক (মোটর সাইকেল) এবং জাতীয় পার্টি মনোনীত প্রার্থী মোঃ খোরশেদ আলম (লাঙ্গল)। আজিজনগর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোঃ জসিম উদ্দিন (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ রশিদ আহমেদ (আনারস)। সরই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মোহাম্মদ ইদ্রিছ (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ আবু হানিফ (আনারস)। রুপসীপাড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ছাচিং প্রু মার্মা (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম (আনারস)। ফাইতং ইউনিয়নে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী মো. ওমর ফারুক (নৌকা),স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.আবু তাহের (আনারস), আবদুল জলিল (চশমা) ও মো. শহিদ উল্লাহ্ (মোটর সাইকেল)।

NewsDetails_03

এদিকে, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই প্রচারনায় ব্যস্ত হয়ে পড়ছেন প্রার্থীরা। ভোঁর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত হাউজ ক্যাম্পেইন, উঠান বৈঠক এবং পাড়ায় পাড়ায় জনসভাসহ নানাবিধ কর্মসূচীর মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছেন নির্বাচনী প্রচারনা। আওয়ামী লীগ প্রার্থীদের সাথে দলীয় নেতা-কর্মীরাও প্রচার প্রচারণায় সমান ভাবে অংশ গ্রহন করছেন। দলীয় প্রার্থীদের জয়ী করার জন্য আওয়ামী লীগ ও তার অংগ সংগঠন গুলো দিন রাত প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত রয়েছেন। বিগত দিনে এলাকায় উন্নয়নের কারনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা তাদের জয়ের ব্যাপরে শতভাগ আশাবাদী। অপর দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জানিয়েছেন, ভোটারদের ইচ্ছায় ও দাবীর প্রেক্ষিতে তারা নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেছেন। অবাধ, সুষ্ঠ এবং শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হলে তারা জয়ের ব্যপারে আশাবাদী। আসন্ন এই ভোট যুদ্ধে প্রচার-প্রচারনায় পিছিয়ে নেই সংরক্ষিত মহিলা সদস্য প্রার্থী ও সাধারন সদস্য প্রার্থীরা। মহিলা প্রার্থীদের সাথে তাদের স্বামী-সন্তান এবং পুরুষ সদস্যদের সাথে তাদের স্ত্রী ও সন্তানেরা সমান ভাবে রাত দিন প্রচার প্রচারনা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের সবারই প্রত্যাশা ভোট যুদ্ধে জয়ী হওয়া।

আগামি ৫ বছরের জন্য জনপ্রতিনিধি হিসেবে কাকে নির্বাচন করবেন, সে বিষয়ে শেষ মুহুর্তের হিসেব কষছেন সাধারণ ভোটাররা। তবে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইতিমধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ্আওয়ামী লীগ মনোনিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে বহিরাগত লোকজনের প্রভাব বিস্তার, ভোট কারচুপি, জালভোট, কেন্দ্র দখল, কেন্দ্রে ভোট না গণনা, ভোটের ফলাফল ছিনিয়ে নেয়ার জন্য প্রশাসন মেকানিজম সহ নানান অভিযোগ তুলে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন, জেলার লামা উপজেলার ৪নং আজিজনগর ইউনিয়ন পরিষদের স্বতন্ত্র প্রার্থী রশিদ আহমদ। তিনি সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে কেন্দ্রে বিচারিক ক্ষমতা সহ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, সেনাবাহিনী, বিজিবি সহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েনের অনুরোধ জানান।

একই অভিযোগ ও দাবী তুলে ধরেন লামা সদর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী আক্তার কামাল, ফাইতং ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল জলিল ও ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান প্রার্থী ওমর ফারুক সহ অন্য ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থীরাও। তবে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের অভিযোগ সম্পুর্ণ মিথ্যা ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে জানান, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা। শেষ পর্যন্ত ৭টি ইউনিয়নে কে কে চেয়ারম্যান, সংরক্ষিত মহিলা সদস্য এবং সাধারণ সদস্য পদে নির্বাচিত হবেন; এজন্য অপেক্ষা করতে হবে নির্বাচনের দিন পর্যন্ত।

এ বিষয়ে লামা উপজেলা নির্বাচন অফিসার মো. আলমগীর হোসাইন জানান, দ্বিতীয় ধাপে উপজেলার ৭ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা অনুযায়ী ১১ নভেম্বর ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আশা রাখি ৭ ইউনিয়নবাসীকে অবাদ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারবো। এ জন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এ কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন