সীমান্তের ৩০০ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা করছে প্রশাসন

purabi burmese market

মিয়ানমারে আরকান আর্মি (এএ) ও সেই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে তুমুল সংঘর্ষে হতাহত ও এপাড়ে মর্টার শেল, গুলি এসে পড়ার ঘটনায় স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করায় সীমান্ত এলাকা থেকে অন্তত ৩০০ বাংলাদেশী পরিবারকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার চিন্তা ভাবনা করছে প্রশাসন। ঘুনধুম ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সীমান্তের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারনে গত রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টায় জেলার নাইক্ষ্যংছড়িতে উপজেলা প্রশাসনের এক জরুরী বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত বৈঠকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস, সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আবছার, ধুমধুম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ, ইউপি সদস্য, আইনশৃংখলা বাহিনীর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এসময় সীমান্ত এলাকা থেকে দ্রুত স্থানীয়দের সরিয়ে নিতে জনপ্রতিনিধিরা জোর দাবী জানান।

বৈঠকের কথা স্বীকার করে নাইক্ষ্যংছড়ির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সালমা ফেরদৌস বলেন, স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়াসহ বিভিন্ন ধরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, এই বিষয়ে চিন্তাভাবনা চলছে, আমরা বিষয়গুলো উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।

আরো জানা গেছে, জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির ধুমধুম ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের মর্টার শেল, গুলি পড়া, ল্যান্ড মাইন বিস্ফোরণ এর কারনে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে। সেই প্রেক্ষিতে সীমান্তের কাঁটাতার বেড়া সংলগ্ন ঘুনধুম, তুমব্রু, হেডম্যান পাড়া, ফাত্রা ঝিড়ি, রেজু আমতলী এলাকায় বসবাসকারী ৩০০ পরিবারের প্রায় দেড় হাজার স্থানীয় মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া যায় কিনা উচ্চ পর্যায়ে পর্যালোচনা চলছে।

নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের ১ নং ওয়ার্ডের মেম্বার শফিকুল ইসলাম বলেন, রবিবার সকালে উপজেলা পরিষদে প্রশাসনের একটি বৈঠকে আমরা প্রাথমিক পর্যায়ে ৩০০ পরিবারকে সরিয়ে নিতে প্রস্তাব দেয়, প্রশাসন বিষয়টি বিবেচনা করবে বলে আমাদের জানান।

dhaka tribune ad2

বৈঠকে ঘুমধুম ইউনিয়নে কোন আশ্রয় কেন্দ্র না থাকায় সীমান্তবর্তী পরিবারগুলোকে সরিয়ে নেওয়ার বিষয়টি কঠিন হবে, স্থানীয় স্কুলগুলোতেও থাকার কোন পরিবেশ নেই। তবে সীমান্ত ঘেষা বসবাসকারী পরিবারগুলো এখন চরম আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছে বলে ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা জানিয়েছে।

ঘুমধুম ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি বোরহান আজিজ জানান, রবিবার সকালের দিকেও মিয়ানমার থেকে বেশ কিছু গুলির আওয়াজ ভেসে আসে, ফলে স্থানীয়দের মধ্যে আতংক কমেনি।

এদিকে গত শুক্রবারের ঘটনার পর থেকে এখন পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত থাকলেও সীমান্তের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট গুলোতে বিজিবির সদস্য সংখ্যা বাড়ানো হয়েছে, জোরদার করা হয়েছে বিজিবির টহল। সীমান্ত এলাকায় সাধারণ মানুষকে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না বিজিবি।

তুমব্রু জিরো লাইনে থাকা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি (সরদার) দিল মোহাম্মদ জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে মর্টার শেল এর আঘাতে ক্যাম্পের ইকবাল নামের রোহিঙ্গা যুবক মারা যাওয়া ও পাঁচ রোহিঙ্গা আহত হওয়ার পর নোম্যান্স ল্যান্ডে থাকা রোহিঙ্গা পরিবারগুলোও এখন আতঙ্ক উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে।

সীমান্ত থেকে স্থানীয়দের সরিয়ে নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, আমরা স্থানীয়দের (বাংলাদেশী) নিরাপত্তার বিষয়টি দেখছি, তাদের নিরাপদ রাখতে, যা যা করনীয় সব করা হবে।

গত ২৮ আগষ্ট মিয়ানমার থেকে নিক্ষেপ করা ২টি মর্টার শেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় ঘুমধুমের তমব্রু’র উত্তর মসজিদের কাছে পড়ে। গত ৩ সেপ্টেম্বর ঘুমধুম এলাকায় গোলা দুটি পড়ে এবং ৯ সেপ্টেম্বর একে ৪৭ এর গুলি এসে পড়ে, তবে গত শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) মাইন বিস্ফোরণ ও গুলি-মর্টার শেল নিক্ষেপে হতাহতের ঘটনায় নো ম্যান্স ল্যান্ডে বসবাসরত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম ভীতি ছড়িয়ে পড়ে, সামনের দিনগুলোতে আরকান আর্মি (এএ) ও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর মধ্যে সংঘাতের ঘটনা আরো বাড়বে বলে আভাস দিয়েছে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র।

আরও পড়ুন
আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।