লামায় মামলা করেও থামানো যায়নি পাহাড় কাটা

NewsDetails_01

বান্দরবানের লামা উপজেলার ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়নের কমিউনিটি সেন্টার এলাকায় আজগর আলী নামের এক ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে গত ডিসেম্বর মাসে জোর করে বুল ড্রোজার লাগিয়ে রহিমা বেগমের ভোগদখলীয় পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ শুরু করেন। শুধু তাই নয়, পাহাড়ের মাটি ফেলে পানি চলাচলের ঝিরির স্বাভাবিক গতিও ব্যহত হচ্ছে। এ ঘটনায় রহিমা বেগম বাদী হয়ে উপজেলা সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজগর আলী সহ বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা করলেও বন্ধ হয়নি পাহাড় কাটা।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বুলড্রোজার লাগিয়ে রাতভর পাহাড় কেটে চলেছেন আজগর আলীরা। অথচ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ২০১০ মতে পাহাড় বা পাহাড়ি টিলাভূমি যা প্রাকৃতিকভাবে সৃষ্ট তা কর্তন বা রূপ পরিবর্তন করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই অপরাধে জড়িতদের ২-১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড ও ২-১০ বছর কারাদন্ডের বিধান রয়েছে। দীর্ঘ দিন ধরে আজগর আলীরা পাহাড় কাটা অব্যাহত রাখলেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে অপরাদীদের খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা না নেওয়ায় জনমনে নানা প্রশ্নের সৃষ্টি হচ্ছে বলে জানান স্থানীয়রা।

জানা যায়, কমিউনিটি সেন্টার এলাকার শহীদুল আলমের স্ত্রী রহিমা বেগম ১৯৭৯-৮০ সালের ৪২২৩নং বন্দোবস্তি মোকদ্দমা মুলে ২৮৬নং ফাঁসিয়াখালী মৌজায় আর/৭৪৯নং হোলিং মূলে ৫ একর তৃতীয় শ্রেণীর পাহাড়ি জায়গা বন্দোবস্তি পায়। বন্দোবস্তির পর রহিমাসহ পরিবারের লোকজন বহু অর্থ ও কায়িক পরিশ্রমের মাধ্যমে ওই জায়গাতে বিভিন্ন প্রজাতির বনজ ফলজ গাছের বাগানসহ বসতঘর নির্মাণ করে পরিবার পরিজন নিয়ে ভোগ করে আসছেন। বর্তমানে বাজার মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় ওই জায়গার ওপর মৃত ওয়াজ মিয়ার ছেলে আজগর আলী (৫০), তার স্ত্রী আমেনা বেগম (৪৫), ছেলে ফজল করিম (৩০), জহুর আলী (২৫) ও আল আমিনের (২২) লোলুপ দৃষ্টি পড়ে। তারা রহিমা বেগমের জায়গা দখলে নিতে শুরু করেন অপচেষ্টা।

এর অংশ হিসেবে গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে আজগর আলী সহ অন্যরা সংঘবদ্ধ হয়ে বুল ড্রোজার লাগিয়ে পাহাড় কাটা শুরু করেন। পরে এ ঘটনায় রহিমা বেগম বাদী হয়ে-আদালতে একটি মামলা করেন। কিন্তু মামলাতেও আজগর আলীরা বন্ধ করেনি পাহাড় কাটা।

NewsDetails_03

বুল ড্রোজার চালক আয়ুব নুর রুবেল জানান, প্রতি ঘন্টা চুক্তিতে পাহাড় কাটার জন্য ফোন করে ডেকে এনেছেন আজগর আলী।

ভুক্তভোগী রহিমা বেগম জানায়, আজগর আলীরা আমার পাহাড়ে রোপিত ২০টি গর্জন গাছ কেটে নিয়ে ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা ও পাহাড় কেটে মাটি বিক্রি করে আরো ২০ হাজার টাকা টাকা আত্মসাত করেছেন। এসব নিয়ে যাওয়ার সময় বাঁধা দিলে আমাকে ও আমার পারিবারের সদস্যকে হত্যা করবে বলে হুমকি অব্যাহত রেখেছেন।

এদিকে স্থানীয় বাসিন্দা মো. মঞ্জুর আলম, হাবিবুর রহমান ও এরশাদুর রহমান বলেন, এতদিন জানতাম বিরোধীয় জায়গা রহিমা বেগমের। সম্প্রতি ওই জায়গা দাবী করে পাহাড় কাটা অব্যাহত রেখেছেন আজগর আলীরা। তারা আরো বলেন, পাহাড় যারই হউক না কেন, পাহাড় তো কেউ কাটতে পারেনা। জায়গা ও পাহাড় কাটাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।

অভিযুক্ত আজগর আলী ও তার ছেলেরা বলেন, কারো জায়গায় নয়; আমরা আমাদের জায়গার পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করছি। এ নিয়ে আমাদের সাথে কারো বিরোধ নেই।

এ বিষয়ে ফাঁসিয়াখালী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. জাকের হোসেন মজুমদার বলেন, বিরোধীয় পাহাড়টি রহিমা বেগমের নামীয়। কিন্তু আজগর আলীরা দখল করে সেখানে পাহাড় কেটে ঘর নির্মাণ করছেন। এ বিষয়ে রহিমা বেগম কর্তৃক আদালতে দায়েরকৃত মামলাটি তদন্তাধীন আছে।

আরও পড়ুন