সীমান্ত চোরাচালানীদের রোষানলেই বদলি আলীকদমের ইউএনওর

গরু চোরাচালান বন্ধ করতে পারবে প্রশাসন ?

NewsDetails_01

বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহরুবা ইসলামকে ঢাকা বিভাগে বদলি করা হয়েছে। গত সোমবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে তাঁকে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে ন্যস্ত করা হয়েছে। তবে বদলীকে স্বাভাবিক বদলী বলছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।

পাশাপাশি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও স্থানীয়রা মনে করছেন ইউএনও’র সততা, কর্মদক্ষতা ও নিষ্ঠা নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলছেন না। জনসম্মুখে ট্রফি ভাঙ্গাকে একটি পরীক্ষায় সাময়িক হেরে গেছেন। তাই জনমতকে শ্রদ্ধ জানিয়ে সরকার তাকে বদলীর আদেশ দিয়েছেন, আর এই বদলির পর প্রশাসন মিয়ানমারের গরু চোরাচালান বন্ধ করতে পারবে তো? এমন প্রশ্ন স্থানীয়দের মুখে মুখে।

এ ব্যাপারে ইউএনও মেহরুবা ইসলাম বলেন, সীমান্ত চোরাচালান বন্ধে বিভিন্ন সময় ট্রাস্কফোর্স গঠন করে অভিযান পরিচালনা করায় একটি মহল ক্ষিপ্ত ছিলেন। তাছাড়া বঙ্গবন্ধু চত্বর করায় উপজেলা চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় বিএনপি নেতাদের ক্ষোভ ছিল। তারা ট্রফিকান্ডের ঘটনাকে পুঁজি হিসেবে ব্যবহার করে আন্দোলন করেছে।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি সমররঞ্জন বড়ুয়া বলেন, ‘আলীকদম-মিয়ানমার সীমান্তে চোরাই পথে সরকারকে শুল্ক ফাঁকি দিয়ে অবৈধভাবে গরু, মহিষ এবং মাদক প্রবেশ করছে এগুলোর বন্ধে অভিযানের নেতৃত্ব দেন ইউএনও। হুন্ডির মাধ্যমে দেশের টাকা পাচার হচ্ছিল মিয়ানমারে। এসব রাষ্ট্রবিরোধী কাজের বিরুদ্ধে অভিযানে তার উপস্থিতি এবং চোরাচালান বিরোধী অনড় সিদ্ধান্ত একটি মহল অনেক দিন ধরেই মেনে নিতে পারছিলেন না। তারই বহিঃ প্রকাশ ইউএনওর বিরুদ্ধে কথিত আন্দোলন-সংগ্রাম।

আলীকদম প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এসএম জিয়াউদ্দিন জুয়েল ও রিপোর্টার্স ক্লাবের সভাপতি শুভ রঞ্জন বড়ুয়া জানান, ইউএনও মেহরুবা ইসলাম যোগদানের পর থেকে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা, যানজট নিরসন, তৃণমূলে সরকারি পরিসেবা বৃদ্ধি, পরিবেশ-পরিষ্কারের উন্নয়নের ডাক গিয়ে ‘অগ্রযাত্রায় আলীকদম’ কর্মসূচী বাস্তবায়ন করেছেন। বিশেষ করে সীমান্ত চোরাচালান বন্ধে রাত-দিন অভিযান করেছেন। এতে গরু ব্যবসায়ীদের রোষানলে পড়েন তিনি।

বান্দরবানের সাংবাদিক মাঈনুদ্দিন খালেদ তার ফেসবুক আইডিতে লিখেন, আপনি চোরাই পশু জব্দ ও মন্দ কাজ বন্ধে ছিলেন অকুতোভয় বীরঙ্গনা সখিনার প্রধান উত্তরসূরি।

NewsDetails_03

স্থানীয় শিক্ষক মংচাথুই মার্মা বলেন, দেশীয় ও আন্তর্জাতিক মাদক ও গরু চোরাকারবারীদের কঠোর হস্তে দমন করেন। কিন্তু যিনি সরকার ও জনগণের উপকার করেছেন তার বিরুদ্ধে কাহিনী তৈরী করা হলো।’ এটি কোন বিষয় না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৩ সেপ্টেম্বর বিকেলে চৈক্ষ্যং ইউনিয়নের মাংতাই হেডম্যান পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে আবাসিক যুব স্বাধীন সমাজের উদ্যোগে ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। খেলা শেষে খেলোয়াড়দের দুইপক্ষের ঝগড়াকে শান্ত করতে ও বুঝাতে উদাহরণ দেখাতে খেলোয়াড়দের সম্মতিতে ট্রফি টেবিলে ছুড়ে মারেন ইউএনও। কিন্তু দীর্ঘ সময়ের ভিডিও-কে কাটপিস করে পুরো ঘটনার আংশিক ভিডিও প্রকাশ করে আলীকদম এর একটি মহল ইউএনও’র বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যায়। এরপর ইউএনওর বিরুদ্ধে ট্রফি ভাঙ্গার কাটপিস ভিডিও ভাইলার ও আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মিয়ানমারের গরু পাচারে জড়িত থাকার ফোন কথোপকথন ভাইরাল হলে জেলা জুঁড়ে তোলপাড় শুরু হয়।

ফুটবল টুর্নামেন্ট পরিচালনা কমিটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন বলেন,খেলায় আবাসিক দলকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। মঞ্চে অন্যান্য অতিথিরা বক্তব্য দেওয়ার পরে প্রধান অতিথির বক্তব্য শুরুর আগে হট্টগোল বাধে দুই টিমের মধ্যে। এতে খেলোয়াড়রা ইউএনওকে ট্রফি কাউকে না দিয়ে ভেঙে ফেলার আহবান জানায়। পরে ট্রফি ছুড়ে ফেলেন ইউএনও। এ ঘটনায় আমাদের কোনো অভিযোগ ছিল না।

চৈক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জয়নাল আবেদীন বলেন, খেলোয়াড়রা ট্রফি নিতে চাচ্ছেনা। পরে খেলোয়াড়দের অনুমতিতে ইউএনও ট্রফি ছুঁড়ে ফেলার পরও কোন সমস্যা হয়নি। তরে রাতে প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন একটি মহল।

উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দুংড়িমং মার্মা বলেন, চোরাচালান বন্ধে এবং তামাক চাষ নিরূৎসাহিত করতে ইউএনও পদক্ষেপ নেন। তিনি ‘বঙ্গবন্ধু চত্বর’ করে মুক্তিযোদ্ধের অগ্রনায়কের নামকে সমুন্বত করেছেন। তৃণমূলে সরকারি পরিসেবা, গরু চোরাচালান বন্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখায় ক্ষুব্ধ ছিলেন সংশ্লিষ্টরা। তারা ট্রফি ভাঙাকে ইস্যু করে আন্দোলন করেছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানের আলীকদম ইউনিয়নে একটি ফুটবল টুর্ণামেন্টের ফাইনাল খেলায় বিজয়ীদের জন্য আনা ট্রফি (কাপ) ইউএনও কর্তৃক ভেঙে ফেলার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে আলোচনায় আসেন ইউএনও। মূলত গত ২০ সেপ্টেম্বর সকালে ৪১টি মিয়ানমার থেকে আনা চোরাই গরু ট্রাকসহ ইউএনও মেহরুবা ইসলাম গরুগুলো আটক করেন, এর আগেও অনেক গরু আটক করেন তিনি। আর এই ঘটনা ক্ষুদ্ধ হলে উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম ট্রফি ভাঙ্গার আংশিক ভিডিও প্রচার করে ইউএনওকে বেকায়দায় ফেলার জন্য।

প্রসঙ্গত, গত ২৪ এপ্রিল মেহরুবা ইসলাম বান্দরবানের আলীকদম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসাবে যোগদান করেন।

আরও পড়ুন