নাইক্ষ্যংছড়িতে কিস্তির জন্য চাপ : চিন্তায় ঋণগ্রস্ত মানুষেরা
দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বান্দরবান জেলার নাইক্ষ্যংছড়ির ৫টি ইউনিয়নেও। নাইক্ষ্যংছড়ি সদর, বাইশারী, সোনাইছড়ি ঘুমঘুম ও দৌছড়ি ইউনিয়নের ঋণগ্রস্ত অসহায় ঘরবন্ধি মানুষের কাছে গিয়ে কিস্তি আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এই সময়ে বিপাকে পড়েছেন গ্রামীন ব্যাংক রামুর গর্জনিয়া শাখা এবং ইপসা ও আশা এনজিও নাইক্ষ্যংছড়ি শাখা থেকে ঋণ নেয়া মানুষেরা।
তবে ব্রাক এনজিওতে কিস্তির প্রোগ্রাম থাকলেও তাদের উর্ধ্বতন কতৃপক্ষে নির্দেশনা রয়েছে এই ক্রান্তিকালে কিস্তি আদায় না করার কথা। তাদের বিষয়ে আদায়ের কোন অভিযোগও পাওয়া যায়নি। মন্দা পরিস্থিতিতে প্রতি সপ্তাহে কিস্তির টাকা তারা এখন কিভাবে পরিশোধ করবেন তা নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় দিন কাটাচ্ছেন। যেখানে চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে মাত্রাতিরিক্ত। ফলে জীবনযাত্রার ব্যয়ও বেড়েছে।
আর এদিকে, করোনা পরিস্থিতি যতদিন না স্বাভাবিক হচ্ছে বেসরকারি সংস্থাগুলো (এনজিও) ঋণগ্রহীতাদের কাছ থেকে কিস্তি আদায় বন্ধ রাখার দাবিও জানিয়েছেন ঋণগ্রস্ত মানুষেরা। অনেক শ্রমজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তাদের কষ্টের সংসারে আরেক বিপদ হলো ঋণের কিস্তি।
সরজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ৩১ মে থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলা হয়েছে অফিস-আদালত। কিছু কিছু ঘরবন্দি লোকজনও নেমেছেন কাজে। কিন্তু বেশীর ভাগ মানুষ এখনো ঘরে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে এনজিওগুলোও প্রস্তুতি নিচ্ছে কিস্তি আদায়ের। কোথাও কোথাও কিস্তি আদায়ে ঋণগ্রহীতাদের চাপ দেয়ারও অভিযোগের কথা বলছে অনেকে। এদের মতে এই পরিস্থিতিতে সরকারের উচিত কিস্তি সাময়িক বন্ধ রাখা। আর তা না হলে এই মানুষগুলো চরম দুর্ভোগে পড়বে।
সূত্র জানা যায়, আগামী সোমবার সদর ইউনিয়নের গিলাতলী এলাকায় গ্রামীণ ব্যাংকের কিস্তি আদায়কারীরা আসবে বলে খবর পৌছেঁ দিয়েছে ঋণগ্রস্ত মানুষের কাছে। এই পরিস্থিতে কিস্তি কি ভাবে আদায় করবে তা নিয়ে চিন্তায় পড়েছে অনেকেই।
মসজিদ ঘোণার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মো,আয়ুব জানান, নাইক্ষ্যংছড়ি পাহাড়ী জনপদের অধিকাংশ মানুষ নিন্ম আয়ের। তাই টানাপোড়নের সংসারের চাকা সচল রাখলে এই শ্রেণির মানুষকে ঋণ নিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করতে হয়। তাই এসব ব্যাংক ও এনজিও থেকে ২০ হাজার থেকে শুরু করে ১লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ নিয়ে থাকেন এ নিন্মআয়ের মানুষেরা। প্রতি সপ্তাহ কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে হয় তাদের। কিন্তু করোনা মহামারিকে কেন্দ্র করে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তা নিয়ে এখন শঙ্কায় আছেন ঋণগ্রস্ত মানুষেরা।
রেষ্ট হাউজ এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী মো,বাদশা মিয়া জানান,মহামারি আতঙ্কে কাজ কামে গেছে শ্রমজীবী মানুষের। তবে মানুষের এই পরিস্থিতি স্বিকার হওয়ার পরও ব্যাংক এবং বিভিন্ন এনজিওরা ঋণগ্রস্ত গ্রাহকদের উপর কিস্তি আদায়ের চাপ সৃষ্টির করা হচ্ছে বলে তা সত্যি।
আশা এনজিও ম্যানেজার লিটন চৌধুরী জানান,সরকার সীমিত আকারে অফিস আদালত খোলে দেওয়াতে আমাদেরও কার্যক্রম চলু করা হয়েছে। এখনো কিস্তি বন্ধের মতো উর্ধতনের কোন নির্দেশনা আমরা পাইনি। আমাদের কাজ হলো উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন তা বাস্তবায়ন করতে হবে। তবে নির্দেশনা রয়েছে কিস্তি আদায়ে কারো চাপ সৃষ্টি যেন না করা হয়।
এই বিষয়ে শনিবার (০৬ জুন) সকালে উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা সাদিয়া আফরিন কচি বলেন, আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত ক্ষুদ্রঋণের কিস্তি আদায় করা যাবে না। এ নিয়ে রেগুলেটরি অথরিটির নির্দেশনা রয়েছে। নির্দেশনা অমান্য করে কিস্তি আদায়ের প্রমাণ পেলে আইন ব্যবস্থা নেয়া হবে।