ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে আলীকদম-লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়কের বেইলী সেতু

NewsDetails_01

সেতুর দু’পাশে ‘ঝুঁকিপূর্ণ সেতু’, সর্বোচ্চ ৫ টন মালামাল গাড়িতে পরিবহন করা যাবে’-সড়ক ও জনপথ বিভাগের এমন লেখা বিজ্ঞপ্তি সংবলিত সাইনবোর্ড লাগানো। কিন্তু প্রতিনিয়ত এ নির্দেশনা অমান্য করে-এ দুই বেইলী সেতুর উপর দিয়ে পাঁচ গুনেরও বেশি পণ্যবাহী যান চলাচল করছে। ফলে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া, বান্দরবানের লামা ও আলীকদম উপজেলার সাথে সংযোগ স্থাপনকারী সড়কের ওপর ইয়াংছা সেতুটি খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বর্তমানে সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতাধীন জরাজীর্ণ এ সেতুতে স্বাভাবিক খুঁটির পাশাপাশি আলাদাভাবে লোহার পাইপ বেঁধে সচল রাখা হয়েছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে লামা-আলীকদম সড়কের মাতামুহুরী নদীর কানামাঝির ঘাট এলাকার বেইলী সেতুটিও।

চলতি মৌসুমে তামাক ও পাথর বোঝাই যান চলাচলের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ এ সেতু দুটি যে কোনো সময় ভেঙে পড়ে বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সড়কে চলাচলকারী যাত্রী, গাড়িচালক ও স্থানীয়রা।

জানা গেছে, বান্দরবান জেলার দুর্গম লামা ও আলীকদম উপজেলার সাধারণ মানুষের সড়কপথে যোগাযোগের একমাত্র সড়ক আলীকদম-লামা-ফাঁসিয়াখালী সড়ক। চকরিয়া উপজেলার বমু বিলছড়ি ইউনিয়নের মানুষও ওই দুই উপজেলা সদরে যোগাযোগের জন্য এই সড়কটিকে ব্যবহার করেন। কিন্তু সেই সড়কের ইয়াংছা বাজার সংলগ্ন সেতুটির উপরের পাটাতনের বিভিন্ন অংশ ক্ষয়ে গেছে। এতে সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় পাশে লাল পতাকা টাঙ্গিয়ে সামান্য মেরামতের কাজ করা হয়; কিন্তু এতে বিপদের ঝুঁকিটা রয়েই গেছে। কারণ ৫ টনের সেতুর উপর দিয়ে পাথর, ইট, তামাক ও কাঠ বোঝাই ২৫-৩০ টন ওজনের ভারী গাড়িও চলাচল করছে প্রতিনিয়ত।

সরেজমিন ইয়াংছা গিয়ে দেখা যায়, বেইলি সেতুটি জরাজীর্ণ হওয়ায় সড়ক বিভাগ জোড়াতালি দিয়ে, মাঝে মধ্যে সংস্কার করে যান চলাচলের জন্য সচল রেখেছে। কিন্তু সেতুটি এতটাই জরাজীর্ণ যে, বেইলি সেতুকে টিকিয়ে রাখতে আলাদা লোহার পাইপের সাহায্যে ঠেস দিয়ে সেতুটি কোনো মতে চলছে। একই অবস্থা কানামাঝির ঘাট সেতুটিরও।

NewsDetails_03

ইয়াংছা বাজার ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম জানায়, বর্তমানে ইয়াংছা এলাকার বেইলি সেতুটি অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এ সেতুটি চালু রাখতে সেতুর স্বাভাবিক খুঁটির পাশাপাশি নিচের অংশে আলাদা ভাবে পাইপ দিয়ে বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এরপরও প্রতিনিয়ত ২০-৩০ টনের বেশি যান চলাচলের কারণে যেকোনো সময় সেতুটি ভেঙে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। তাই এলাকার জনসাধারণের স্বার্থে সেতুটি জরুরি ভিত্তিতে পুনঃনির্মাণের জরুরী।

এদিকে বান্দরবান সড়ক বিভাগের লামা উপজেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী প্রকৌশলী পুর্ণেন্দ্র বিকাশ চাকমা জানায়, লামার যেসব বেইলি সেতু রয়েছে, এর মধ্যে ইয়াংছা সেতুটি ৫০ মিটার দীর্ঘ। সেতুটি বর্তমানে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুটি সচল রাখতে আলাদা ভাবে পাইপ দিয়ে ঠেস দিয়ে রাখা হয়। এ বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

সূত্রে জানা গেছে, ১৯৭০-৮০ সালের দিকে জেলার সড়ক চালু হওয়ার পর থেকে ইস্পাত দিয়ে বেইলি সেতুগুলো নির্মাণ করা হয়। তবে দীর্ঘ বছরেও পাকা গার্ডার সেতু না হওয়ায় বেইলি সেতুগুলো জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে। ৭৬টি সেতুর ইতিমধ্যে ২টি পাকা সেতু নতুন করে নির্মাণ করা হয়েছে। বাকি আরও কয়েকটি পাকা সেতু নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

তবে বান্দরবান সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ মোসলেহ উদ্দিন চৌধুরী জানান, প্রথম দফায় ইয়াংছা সেতুসহ ১২টি সেতু পাকা গার্ডার করার প্রাক্কলন করে সড়ক মন্ত্রণালয়ে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়। এসব সেতুর মধ্যে লামা উপজেলার কুমারী এলাকার ৪১ মিটার একটি পাকা গার্ডার সেতুর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। অনুমোদনের প্রেক্ষিতে ইয়াংছা বাজার এলাকায় সেতু নির্মাণ দ্রুত শুরু হচ্ছে।

তিনি আরো জানান, ৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই সেতুটি যানবাহন ও পথচারীদের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় আরেকটি প্রকল্পের মাধ্যমে আলীকদম কানামাঝির ঘাট সেতু নির্মাণ করা হবে বলেও জানান এ কর্মকর্তা।

আরও পড়ুন