বান্দরবানে উচ্ছেদ করে ১১ হাজার ম্রো’র স্বপ্ন কেড়ে নিচ্ছে সিকদার গ্রুপ !

NewsDetails_01

বান্দরবানের চিম্বুকের আশেপাশের এলাকায় সিকদার গ্রুপ কর্তৃক ম্রো পাড়া উচ্ছেদ করে পাঁচ তারকা হোটেল ম্যারিয়ট হোটেল এন্ড এমিউজমেন্ট পার্ক নির্মাণের উদ্দ্যোগ ম্রো সম্প্রদায়ের মাথা গোঁজার ঠাঁই কেড়ে নেওয়া হচ্ছে অভিযোগ করা হয়েছে। আর তা রুখে দিতে বান্দরবানে ব্যাপক গন আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন ম্রো আদিবাসী নেতারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বান্দরবান-চিম্বুক-থানচি সড়কের ৪৮ কিলোমিটারে অবস্থিত কাপ্রু ম্রো পাড়া হয়ে জীবন নগর পর্যন্ত ম্রোদের প্রথাগত প্রায় ১ হাজার একর ভূমি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে দখল করার অপচেষ্টা করছে সিকদার গ্রুপ (আর অ্যান্ড আর হোল্ডিংস)। এরই মধ্যে ওই এলাকার বিভিন্ন স্থানে সাইনবোর্ড ও খুঁটি স্থাপন করেছে গ্রুপটি। বছরের পর বছর ধরে উক্ত এলাকাগুলোতে অনগ্রসর ম্রো জাতিসত্তার মানুষ বাস করে আসছে। এতে উচ্ছেদের মুখে কাপ্রু পাড়া, দোলাপাড়া, এরাপাড়া এবং উচ্ছেদ ঝুঁকিতে আছে মারকিন, লংবাইতং, মেনসিং, রিয়ামানাই ও মিনরিং ম্রো পাড়া। এই হোটেল নাইতং পাহাড়ে নির্মাণ হলে প্রত্যক্ষভাবে ম্রোদের চারটি পাড়া এবং পরোক্ষভাবে ৭০-১১৬টি পাড়ার ১১ হাজার ম্রো উচ্ছেদ এবং ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ম্রো জনগোষ্ঠি।

এই ব্যাপারে চিম্বুকের দোলা পাড়ার কার্বারী লঙনং ম্রো বলেন, আমাদের পাড়ার শ্মশান ভূমি ও পানির উৎস দখল করে হোটেলের জন্য বাঁধ নির্মানের উদ্দ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

আরো জানা গেছে, পাঁচ তারকা এই হোটেল নির্মাণ হলে প্রায় ১১ হাজার জুমচাষি উদ্বাস্তু হওয়ার ঝুঁকিতে পরবে। ক্ষতিগ্রস্ত ম্রো সম্প্রদায় অবিলম্বে পাঁচ তারকা হোটেলসহ নাইতং পাহাড়ে পর্যটন কেন্দ্র নির্মাণের উদ্যোগ স্থগিত রাখার আহ্বান জানিয়েছে।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্ত্রী ম্রো ছাত্রনেতা রেংয়ং ম্রো বলেন,এই ভূমি, এই মাটির প্রত্যেকটা ইঞ্চি আমাদের বাপ-দাদাদের সম্পত্তি, ভূমি দখল করে পর্যটন কোন ভাবেই ম্রোদের উন্নয়ন নয়, এসব বন্ধ করা উচিত।

NewsDetails_03

পাড়াবাসীর শত শত বছরের সংরক্ষিত প্রকৃতিক পাড়া বন, শশ্মানভূমি, জুম ভূমিসহ সৃজিত ফলজ বনজ বাগানের বেশিরভাগ ইতিমধ্যে দখল করা হয়েছে। এসব ভূমি বেদখল হলে আটটি পাড়ার প্রায় দেড়শ পরিবার নিজেদের ভূমি ও পাড়া হারিয়ে অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। দখল করা ভূমি নিয়ে কোনো কথা না বলতে গ্রুপটির লোকজন কারবারিদের (পাড়া প্রধান) ও পাড়াবাসীদের নানাভাবে হুমকি দিচ্ছে, এমন অভিযোগ তাদের।

গত রোববার সকালে কাপ্রু পাড়া বাজার এলাকায় ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন পাড়ায় বসবাসরত প্রায় এক হাজার ম্রো জনগোষ্ঠী সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীর মাধ্যমে এই উচ্ছেদের প্রতিবাদ জানায়। এর আগে গত ৭ অক্টোবর ম্রো জাতিসত্তার জুম ভূমিসহ শত শত বছরের সংরক্ষিত পাড়া বন, শ্মশান, সৃজিত ফলজ বনজ বাগান রক্ষার দাবিতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে নয়টি পাড়ার ম্রো নেতারা।

এই ব্যাপারে সিকদার গ্রুপের চিফ কো-অর্ডিনেটর ফরিদ উদ্দিন খানের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে ফোনের সংযোগ কেটে দেন।

এদিকে গত ২ নভেম্বর এই হোটেল নির্মাণের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক সিএইচটি কমিশন। নির্মিতব্য হোটেল সংলগ্ন ৩টি ম্রো গ্রামের অধিবাসীরা বাস্তুচ্যুত হবে এবং আশপাশের আরো পাঁচটি গ্রামের অধিবাসীরা বাস্তুচ্যুত হবার ঝুঁকিতে পড়বে বলে মনে করে কমিশন।

কমিশনের সহ-সভাপতি সুলতানা কামাল, এলসা স্টামাটোপোলো ও মিরনা কানিংহাম কেইন বিবৃতিতে বলেন, এই হোটেল নির্মাণ অবিলম্বে বন্ধ করা উচিত এবং স্থানীয় অংশীজন এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও বান্দরবান পার্বত্য জেলা পরিষদের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে অধিকতর উপযুক্ত জায়গা নির্বাচন করেই তা করা উচিত।

আরও পড়ুন