এডিপি’র প্রকল্পের সব কাজ দুই নাম্বারি : রুমা উপজেলা পরিষদের সিএ উসাইমং

পার্সেন্টেজ ভাগ হয় !

NewsDetails_01

এডিপি’র প্রকল্পের সব কাজ দুই নাম্বারি। এতে ভাগাভাগি করে নিলে দোষের কি ! সব পার্সেন্টেজ টাকাতো আমার হাতেই জমা হয়। উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও এবং ইঞ্জিনিয়ার সবার কাছে তো আমার হাত থেকে পার্সেন্টেজ ভাগ হয়, কোথায় কি হয় আমিই জানি। আপনার যা করবেন, করেন। আমার কিছু যাই-আসেনা। গত বুধবার (৩০ জুন) বিকেল সাড়ে চারটায় বান্দরবানের রুমা উপজেলা পরিষদ এলাকায় আলমগীর খাবার হোটেলে বসে এসব কথা বলেন, রুমা উপজেলা পরিষদের সাঁট মূদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত উসাইমং মারমা।

বান্দরবানের রুমায় এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী)’র একটি প্রকল্পের টাকা উপজেলা চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অভিযোগটি উপজেলা পরিষদের সাঁট মূদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত উসাইমং মারমার বিরুদ্ধে।

স্থানীয় সাংবাদিক প্রশ্নের জবাবে এমন দম্ভোক্তি প্রকাশ করেন উসাইমং মারমা। তিনি বান্দরবানের রুমা উপজেলা পরিষদের সাঁট মূদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত তৃতীয় কর্মচারী। উপজেলা চেয়ারম্যানের গোপনীয় দাপ্তরিক কাজে সহকারি বিশেষ দায়িত্ব প্রাপ্ত কর্মচারী হিসেবে তাঁকে সিএ (কনফিডেন্টসিয়াল এ্যাসিস্টেন্টস্) বলে ডাকা হয়। তাই উসাইমং মারমাকে সবাই সিএ বলে ডাকে ও চিনে।

সিএ উসাইমং মারমার এহেন দম্ভোক্তি আচরণ ও পরিষদের উচ্চ পদস্থ কর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার সাহসের পিছনে তাঁর খুঁটি জোর কোথায় তা নিয়েও চা দোকান থেকে অফিস পাড়া পর্যন্ত আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠেছে। এ ঘটনায় সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকেও সুশীল সমাজে অসন্তোষ ও ক্ষোভ বিরাজ করছে।

জানা গেছে, ২০২০-২০২১ অর্থসালে উপজেলা পরিষদের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির( পিআইসি)র মাধ্যমে বাস্তবায়নযোগ্য ২০টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তার মধ্যে মেনরন পাড়া স্কুলে যাওয়ার রাস্তায় ছোট ঝিরিতে গেট ওয়ালের অসমাপ্ত কাজ সমাপ্তি করণ একটি প্রকল্প। এর বিপরীতে মোট বরাদ্ধ এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা। এ প্রকল্পে বাস্তবায়ন কমিটি সভাপতি করা হয়, রেমাক্রীপ্রাংসা ইউনিয়নের দুর্গম এলাকার ৭নং ওয়ার্ডের সদস্য সাকসিম ম্রোকে। এ সদস্য সহজ সরল মনকে পুঁজি করে ফন্দি আঁটে উপজেলা পরিষদের সিএ উসাইমং মারমা।

তিনি মিথ্যা আশ্রয় নিয়ে ওই ইউপি সদস্যকে জানিয়ে বলেছেন, গৃহিত প্রকল্পটি উপজেলা চেয়ারম্যানের। সব কাজ উপজেলা চেয়ারম্যান করবেন। এ প্রকল্পের সভাপতি হিসেবে বিলে স্বাক্ষর মূল্য বাবদ তিন হাজার টাকা দেবে উপজেলা চেয়ারম্যান। এতে মৌনতা সম্মতি দেন ইউপি সদস্য সাকসিম ম্রো।

পাহাড়বার্তাকে সাকসিম ম্রো বলেন,উপজেলা চেয়ারম্যান আমাকে সভাপতি করে প্রকল্প দিয়ে কাজ করতে বলে দেয়ার পর চেয়ারম্যানের সাথে আর কথা বলার সুযোগ হয়নি। শুধু উপজেলা সিএ উচাইমং সাথে কথা কইছে (অর্থাৎ- উপজেলা সিএ উসাইমং মারমার সাথে কথা হয়েছে)। সব বিল নেয়ার পর সভাপতি হিসেবে আমাকে মোট ৭ হাজার টাকা দিয়েছেন। বাদবাকি সিএ উসাইমং মারমা হাতে তুলে দিতে বিভিন্ন ভাবে কায়দা করে হাতিয়ে নিয়ে ফেলে।

পাহাড়বার্তাকে’কে ইউপি সদস্য সাকসিম ম্রো আরো বলেন, সিএ উসাইমং গাড়ি রিজার্ভ করে ১৫ব্যাগ সিমেন্ট ও ৬০০টির মতো ইট নিয়ে কাজের স্থানে এসেছিল। তবে তখন বালু দেখি নাই, পরে কিভাবে করছে আমি আর কিছু জানিনা, সব উসাইমং জানেন বলে জানিয়েছেন সাক্সিম ম্রো।

NewsDetails_03

বিষয়টি জানতে চাওয়া হলে পাহাড়বার্তা’কে সিএ উসাইমং মারমা বলেন, মেম্বারের সাথে স্থানীয় লোকজনের মন মালিন্য থাকায় প্রকল্পটির কাজ করতে সমস্যা আছে। উসাইমং মারমার ভাষ্য মতে, মেম্বার দ্বারা কাজ করা যাবে না, একথা জানার পর সিএ উসাইমং মেম্বারকে এ পরামর্শ দেন, কাজটি উপজেলা চেয়ারম্যানের বলতে বলছি।

এ কাজে প্রতারণা করে চেয়ারম্যানের নাম ভাঙ্গিয়ে প্রকল্প টাকা ভাগিয়ে নেয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিরক্তবোধ হয়ে ওঠেন। পরে আবার স্বীকার করে সিএ উসাইমং বলেন,কাজ করতে ৫০ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়েছে। তারমধ্যে ১৭%টাকা উপজেলা পরিষদের দিতে হয়েছে। বাকী টাকায় কাজ করে লাভাংশ সাকসিম মেম্বার ও আমি( উসাইমং) ১৫ হাজার করে ভাগ করে নিয়েছি।

তবে সভাপতি হিসেবে স্বাক্ষরের মূল্য সাত হাজার টাকা দেয়ার পর আর কোনো টাকা দেয়নি বলে জানিয়েছেন ইউপি সদস্য সাকসিম ম্রো।

উপজেলা চেয়ারম্যান উহ্লাচিং মারমা পাহাড়বার্তা’কে বলেন, আমার সিএ উসাইমং মারমাকে এ কাজে কোনো দায়িত্ব দেয়া হয়নি। মেম্বার সাকসিম ম্রোকে কাজটি করতে বলেছি, লাভ হলে তার হবে। এব্যাপারে সাকসিমের কথা বলে সত্যতা যাচাই করে দেখা হবে।

শুধু এ অভিযোগ নয়। সিএ উসাইমং এর বিরুদ্ধে জেলা ও উপজেলার সাংবাদিকদের হয়রানি করার অভিযোগ রয়েছে। উপজেলা পরিষদের এডিপি ও জাইকা প্রকল্পের ছোট-বড় দরপত্রের বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার পর সাংবাদিকরা এসব বিজ্ঞাপনের বিল রুমার এই সিএ উসাই মং এর কাছে জামা দিলেও তিনি ঘুষের জন্য সরকারী বিলগুলো হারিয়ে ফেলে, বছরের পর বছর দৈনিক পত্রিকাগুলোর বিল আটকিয়ে দেন।

এই ব্যাপারে ঢাকা ট্রিবিউন ও দৈনিক জনকন্ঠের বান্দরবান প্রতিনিধি এস বাসু দাশ বলেন, আমি কয়েকটি বিজ্ঞাপনের বিল একাধিকবার প্রেরণ করলেও গত ৫ বছরেও একটি বিজ্ঞাপনের বিল পায়নি। উসাই মং এর সাথে যতবার যোগাযোগ করেছি ততবার শুনতে হয়েছে, বিল হারিয়ে গেছে, বা বিল পাচ্ছিনা।

উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ তোফায়েল আহমেদ পাহাড়বার্তা”কে বলেন, সিএ উসাইমং সবাইকে জড়িয়ে পার্সেন্টেসের কথার কোনো ভিত্তি নেই। কাজ করলে ওই দুর্গম এলাকার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা করবেন, সরকারি কর্মচারী সিএ কেন উপজেলা চেয়ারম্যান নাম ভাঙ্গিয়ে কাজ করবে (?) প্রশ্ন তুলেন এবং

তিনি আরো বলেন, সেইত (সিএ উসাইমং মারমা) অফিসের কাজও তেমন করেনা।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন পাহাড়বার্তা’কে বলেন, প্রকল্প সভাপতি জন প্রতিনিধিদেরকে করা হয়ে থাকে। কোনো কাজ না হলে প্রথমে সভাপতিদের তলব করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিএ অন্যায় কিছু করলে প্রথমে উপজেলা চেয়ারম্যান দেখবে। তবে কোনো সরকারি কর্মচারী এসব কাজে জড়িত হবার কোনো সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন