গীতিনাট্য পাংখুং পালা ও জাই পালা হারাতে বসেছে

NewsDetails_01

মারমা সম্প্রদায়ের শত শত বছরের পুরানো ঐতিহ্যবাহী গীতিনাট্য “পাংখুং পালা” ও হাজার বছরের পুরানো” জাই পালা। মূলত: পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ কক্সবাজার জেলায় বসবাসরত মারমা সম্প্রদায়ের যেকোন উৎসব পার্বনে রাতভর এই পালা মঞ্চস্থ হয়। যেখানে মঞ্চের পাশে ৪ থেকে ৫ জনের বাদকের দল মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র গুলো নির্দিষ্ট তাল মাত্রায় বাজায় এবং মঞ্চে নারী পুরুষ সম্বলিত ৫ থেকে ৬ জনের দল সুরে সুরে, বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গীর মাধ্যমে সেই পালা গেয়ে থাকেন।

পাংখুং পালা ও জাই পালার পার্থক্য হলো পাংখুং পালা পার্বত্য চট্টগ্রামের মারমাদের ভাষায় রচিত; পক্ষান্তরে জাই পালা বর্মী ভাষায় লেখা। উভয় পালায় গৌতম বুদ্ধের পূর্বজন্মের কাহিনী বর্ণিত হয়। তবে নব রচিত কাহিনীগুলোতে সাধারণ মানুষের জীবনকাহিনী উপস্থাপন করা হয়।

গত ১৬ এপ্রিল মারমা সংস্কৃতি সংস্থা (মাসস) এর আয়োজনে রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সাংগ্রাঁই জল উৎসব অনুষ্ঠিত হয়। সেদিন রাজস্থলী উপজেলার চুশাক পাড়ার একটি মারমা দল মঞ্চে জাই পালা মঞ্চস্থ করেন।

NewsDetails_03

সেই দলের দলনেতা মিসিং কার্বারী এবং অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক রাজস্থলী উপজেলার মাসস এর সদস্য অংছানু মারমা জানান, জাই পালা মূলত তথাগত গৌতম বুদ্ধের পূর্ব জন্মের কথা তালে সুরে বর্ণনা করা হয়। তবে ইদানীংকালে মানুষের জীবনবোধের উপর রচিত কাহিনী নিয়ে পালা মঞ্চস্থ হয়। রাতভর এই পালা হয়ে থাকে। তাঁরা আক্ষেপ করে বলেন, ইদানীংকালে আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের প্রভাবে এই পালা হারাতে বসেছে।

মাসস এর কেন্দ্রীয় কমিটির সাংস্কৃতিক সম্পাদক ও কাপ্তাই উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির যুগ্ম সম্পাদক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব মংসুইপ্রু মারমা জানান, এই পালায় মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র বুম পাই, ক্রিং মং, চাই, হ্নি বাদ্য যন্ত্র গুলো বাজানো হয়।

তিনি আরোও জানান, প্রতিবছর চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার এর কঠিন চীবর দান উৎসব এর শেষে রাতে পাংখুং পালা মঞ্চস্থ হয়। তিনি আরোও জানান, গৌতম বুদ্ধ সর্বশেষ জাতক ওয়েসাইন্দ্রা মাং(রাজা) এর কাহিনী পাংখুং পালার জনপ্রিয় পালা সারা রাত মঞ্চস্থ হত, জাই ও এ ধরণের কাহিনী নিয়ে সারারাত পালা হত।

মাসস কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী জানান, আধুনিক সংস্কৃতির আগ্রাসনে শত শত বছরের ঐতিহ্যবাহী মারমা সম্প্রদায়ের গান, নাচ এবং পালা আমরা হারাতে বসেছি। তাই আমরা মাসস এর মাধ্যমে এই পুরানো ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও কৃষ্টিকে বাঁচিয়ে রাখতে সাংগ্রাঁই জল উৎসব এর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে এই গুলো মঞ্চস্থ করে আসছি। যাতে পরবর্তী প্রজন্ম আমাদের এই সংস্কৃতিকে ধারণ করতে পারে।