বান্দরবানকে জঙ্গী প্রশিক্ষণের নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করেন শামিন মাহফুজ !

NewsDetails_01

জঙ্গী শামিন মাহফুজ, জঙ্গী কর্মকান্ডের জন্য বান্দরবানের মানুষের কাছে বেশ পরিচিত নাম। ২০১১ সালের পর সম্প্রতিক সময়ে কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর সহযোগিতায় ফের বান্দরবানের রুমা উপজেলায় জঙ্গী প্রশিক্ষন কেন্দ্র করার খবর প্রকাশ হলে আলোচনায় আসেন এই জঙ্গী নেতা। আর এনিয়ে পড়ুন এস বাসু দাশ এর প্রতিবেদন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, একদিকে অরণ্য ঘেরা পাহাড় ও সড়ক যোগাযোগ গড়ে না উঠার কারনে নিরাপত্তা বাহিনী ও লোকচক্ষুর আড়ালে থেকে গেছে পাহাড়ের অনেক এলাকা। তাই জঙ্গী প্রশিক্ষনের জন্য বান্দরবানকে নিরাপদ আশ্রয়স্থল মনে করা শামিন। পাহাড়ে জঙ্গী প্রশিক্ষন কেন্দ্র করার বিষয় শামিনের জন্য নতুন কিছু নয়। ২০১১ সালের ২৮ মার্চ জেলার থানছির বলিপাড়ার কলাইপাড়া এলাকা থেকে তৎসময়ের জামায়াতুল মুজাহেদিন বাংলাদেশ ( জেএমবি) র দলনেতা শামিন মাহফুজ ও তার সহযোগী ইসমাইল হোসেন কে আটক করে পুলিশ। এসময় অস্ত্র’সহ বিপুল পরিমান বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় বান্দরবান জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়, জঙ্গী দমনে নড়েচড়ে বসে নিরাপত্তা বাহিনী এবং এরপর একের পর এক অভিযান চালায় পাহাড়ে।

আরো জানা গেছে, সেই সময় শামিন জেলার থানচি উপজেলার দূর্গম ঐ এলাকায় জঙ্গী আস্তানা তৈরি করে ট্রেনিং ক্যাম্প করার পরিকল্পনা করছিল। থানচির কমলাবাগান এলাকা থেকে খামার বাড়িতে ১২টি বস্তা নিয়ে যাবার সময় ২টি বস্তা পড়ে যায়, আর তা স্থানীয় গ্যান সুন্দর চাকমার দোকানে রেখে গেলে স্থানীয়রা খুলে দেখে এবং এ নিয়ে সন্দেহ হলে তারা পুলিকে খবর দেয়, এরপর আটক হয় এই জঙ্গী।

এই ব্যাপারে থানচি উপজেলার সংবাদকর্মী অনুপম মারমা বলেন, ২০১১ সালে শামিন মাহফুজ এলাকায় জমি লিজ নিয়ে ভুট্টা চাষ করতো, বিপুল পরিমান বিস্ফোরক সহ আটকের পর তৎসময়ে স্থানীয়দের মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

২০১১ সালের ২৮ মার্চ বান্দরবানের থানচিতে জঙ্গী শামিন মাহাফুজ এর আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরক দ্রব্য। ফাইল ছবি- এস বাসু দাশ।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, এসময় জিহাদী বই, লিফলেট, আগ্নেয়াস্ত্র ও যুদ্ধে ব্যবহৃত বোমা বানানোর কৌশল সংক্রান্ত সচিত্র নথি, সফটওয়্যার, সিডি, ডাটা ক্যাবল, হেডফোন, ইলেট্রনিক সূইচ, মোবাইল এন্টেনা, গান পাউডার, পাথর ভাঙ্গার রড, পেরেক, ৮টি জ্যাকেট, ৮টি কম্বল, বিভিন্ন ইসলাম ধর্মীয় পুস্তকসহ ১৫০টি সামগ্রী উদ্ধার করে। উক্ত বইগুলোতে আধুনিক বোমা ও গ্রেনেড তৈরীর কলা কৌশল লেখা ছিল। সেই সময় এই দুই জঙ্গী স্থানীয়দের মাঝে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও নলকূপ স্থাপন করে আস্থা অর্জনের মধ্য দিয়ে গোপনে জঙ্গী আস্তানা তৈরি করছিল, আর এবার কেএনএফকে অর্থ সহযোগিতা দিয়ে বান্দরবানের রুমা ও রাঙামাটির বড়থলিতে জঙ্গী প্রশিক্ষন কেন্দ্র গড়ে তুলেছে।

NewsDetails_03

বান্দরবানের রুমা উপজেলার বাসিন্দা শৈহ্লাচিং মার্মা বলেন, রুমার দূর্গম এলাকায় একাধিক জঙ্গী প্রশিক্ষন কেন্দ্র থাকার খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে।

স্থানীয় গোয়েন্দারা জানান, শামীম মাহফুজ ছাত্রজীবনে শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং জোট সরকারের সময়ে উন্মুক্ত বিশ্ব বিদ্যালয়ের অধ্যাপক হিসাবে নিয়োগ পেলেও তাকে দেশ বিরোধী ও জঙ্গী কর্মকান্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে বহিস্কার করা হয়। দলনেতা শামীনের বাড়ি গাইবান্ধা জেলার সাঘাটা থানার কচুয়া সর্দার পাড়ায় এবং তার অন্যতম সহযোগির ইসমাইল এর বাড়ি চাঁদপুর জেলার বাহরপুর বাংলা বাজার সংলগ্ন এলাকায়।

এই ব্যাপারে বান্দরবানের পুলিশ সুপার মো.তারিকুল ইসলাম এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এই বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

২০১১ সালের ২৮ মার্চ বান্দরবানের থানচিতে জঙ্গী শামিন মাহাফুজ এর আস্তানা থেকে উদ্ধার হওয়া বিস্ফোরকসহ বিভিন্ন সরাঞ্জাম দেখছেন তৎকালিন পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান। ফাইল ছবি- এস বাসু দাশ।

কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের একজন কর্মকর্তা জানান, এক সময়ের জেএমবি নেতা জামিনে বের হয়ে এসে নতুন সংগঠনের নামকরণ করে জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া। নতুন এই জঙ্গি সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক শামিন মাহফুজের সঙ্গে পাহাড়ের বম সম্প্রদায়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন কুকি চিন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (কেএনএফ) এর প্রধান নাথান বম এর সাথে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। নাথান বম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগে পড়ালেখা ও বম সম্প্রদায় থেকে প্রথমবারের মতো ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সতন্ত্র হিসাবে প্রার্থী হয়েছিলেন। শামিন মাহফুজ একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন। সেই সূত্র ধরে নাথান বম’কে অর্থ সহযোগিতা দিয়ে পাহাড়ি এলাকায় আস্তানা গড়ে তুলেছেন শামিন এবং ‘একে-৪৭’ সহ ভারী অস্ত্রও সংগ্রহ করেন।

এদিকে গত ১ সপ্তাহ ধরে জঙ্গী শামিন ও নাথান বম এর শসস্ত্র সংগঠন এর বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান শুরু করা হয়েছে। রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়নের ১ ও ২ নং ওয়ার্ডের সাইজাম পাড়া, বড়গিয় ছাড়া, ক্যাংড়া ছড়া, পুরানো টাইগার পাড়া ও বান্দরবানের রোয়াংছড়ির ররিনং পাড়ায় অভিযান চালাচ্ছে যৌথ বাহিনী। অভিযানের খবরে জেলার রুমা উপজেলা থেকে যোগ দেওয়া কেএনএফ এর বম সম্প্রদায়ের যুবকরা এখন আত্মগোপনে।

এই ব্যাপারে জেলার রুমা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মামুন শিবলী পাহাড়বার্তা’কে বলেন, অভিযানের বিষয়গুলো সেনাবাহিনী দেখছে, তারা জঙ্গী তৎপরতা ও চলমান অভিযান সম্পর্কে এখনও কিছু অবহিত করেনি, তাই এই বিষয়ে অবগত নয়।

আরও পড়ুন