বান্দরবান সীমান্তের নো ম্যান্স ল্যান্ডেও নিরাপদ নয় রোহিঙ্গারা

purabi burmese market

মিয়ানমারে আরকান আর্মি (এএ) ও সেই দেশের সেনাবাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুমের নো ম্যান্স ল্যান্ডে রোহিঙ্গারা আশ্রয় গ্রহন করলেও সেখানেও নিরাপদ নয় তারা। প্রায় প্রতিদিন মিয়ানমারের যুদ্ধ বিমান থেকে হামলা, গুলি ও মর্টারশেল নিক্ষেপের ঘটনায় নিহত ও আহত হওয়ার ঘটনায় তাদের মধ্যে চরম আতংক বিরাজ করছে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়নের একটি গ্রাম তুমব্রু, জনসংখ্যা প্রায় ১২ হাজার, যেখান থেকে মাত্র ৫০ গজ দূরত্বের নো ম্যান্স ল্যান্ডে বসবাস করে মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা। সরকারী আগের হিসাবে প্রায় ১১শ পরিবার সেখানে বসবাস করলেও বর্তমান হিসাবে ৬ থেকে ৭শ পরিবারের প্রায় ৫ হাজার মানুষ বসবাস করছে, আতংকে তারা বিভিন্ন এলাকায় পরিবার নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছে।

১নং উত্তর ঘুমধুম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক রুপলা ধর জানান, মিয়ানমারের সংঘাতের ঘটনায় শুধু নোম্যান্স ল্যান্ডে বসবাস করা রোহিঙ্গা নয়, সীমান্তবর্তী তুমব্রুর স্থানীয়রাও চরম আতংকে আছে এখন।

আরো জানা গেছে, রোহিঙ্গাদের জন্য খাদ্যের যোগান বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা দিয়ে থাকলে শিক্ষার ব্যবস্থা বলতে আছে মাদ্রাসা শিক্ষা। আয়ের উৎস বলতে ইয়াবা,স্বর্ণ, মদ, গরুসহ বিভিন্ন চোরাচালান। আর এই আয় দিয়ে তারা পরিবার নিয়ে কোন ভাবে নোম্যান্স ল্যান্ডে পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও গত ২৮ আগষ্ট থেকে মর্টার শেল নিক্ষেপ ও গুলির ঘটনায় সেখানেও তারা আর নিরাপদ মনে করছেনা।

এই ব্যাপারে গত শুক্রবার রাতে মর্টার শেল হামলায় নিহত ইকবালের চাচাত ভাই এরফানুল হক ফোনে বলেন, ঘুমধুম নোম্যান্স ল্যান্ড এর কোনাপাড়া ক্যাম্প এর পাশে মর্টার শেল বিস্ফোরণের পর থেকে সেখানে আমরা বসবাস করতে আর নিরাপদ মনে করছিনা।

dhaka tribune ad2

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার ভূখন্ডে মাইন বিস্ফোরণে গত শুক্রবার দুপুরে অথোয়াইং তংচঙ্গ্যা (২২) নামে এক বাংলাদেশী যুবকের পা উড়ে যায় এবং সন্ধ্যার পর নোম্যান্স ল্যান্ড এর কোনাপাড়া ক্যাম্প এর পাশে মর্টার শেল বিস্ফোরণে আহত রোহিঙ্গা মো : ইকবাল (১৭) মারা যায়। এসময় গুলি ও মর্টার সেল নিক্ষেপের ঘটনায় আহত হয় রোহিঙ্গা নাগরিক নবী হোসাইন (২২), ভুলু (৪০), সাবিকুন নাহার (৪৫), আনাস (১০), সাদিয়া (৯)।

ঘুমধুম ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি বোরহান আজিজ জানান, গত শুক্রবারের রাতের ঘটনার পর জীবন শংখায়, আতংকে অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করছে, আবার কেউ কেউ রাতেই নো ম্যান্স ল্যান্ড থেকে পালিয়ে গেছে, আর কেউ পালাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে।

এদিকে বিশেষ করে সন্ধ্যার পর রাতেই মিয়ানমারের চলমান হামলার একের পর এক ঘটনায় শুধু রোহিঙ্গা নয়, দেশের ঘুমধুমের সীমান্তবর্তী স্থানীয়রাও এখন নির্ঘুম রাত পার করছে। তারা সীমান্তের নিজেদের কৃষি জমিতে যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, ফলে ক্ষেত্রেই নষ্ট হচ্ছে ফসল।

এই ব্যাপারে শনিবার সকালে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভীন তিবরীজি বলেন, সরকার এখানে কঠোর অবস্থানে আছে এবং জনগনের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বাধিক গুরত্ব দিচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, আমরা চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ, আইনশৃংখলা বাহিনীদেরকে এলার্ট করেছি, তারা যেন জনগনকে নিরাপদে থাকার জন্য নির্দেশনা দেয়।

প্রসঙ্গত, গত ২৮ আগষ্ট মিয়ানমার থেকে নিক্ষেপ করা ২টি মর্টার শেল অবিস্ফোরিত অবস্থায় ঘুমধুমের তমব্রু’র উত্তর মসজিদের কাছে পড়ে। গত ৩ সেপ্টেম্বর ঘুমধুম এলাকায় গোলা দুটি পড়ে এবং ৯ সেপ্টেম্বর একে ৪৭ এর গুলি এসে পড়ে, তবে গত শুক্রবার (১৬ সেপ্টেম্বর) মাইন বিস্ফোরণ ও গুলি-মর্টার শেল নিক্ষেপে হতাহতের ঘটনায় নো ম্যান্স ল্যান্ডে বসবাসরত রোহিঙ্গা ও স্থানীয়দের মধ্যে চরম ভীতি ছড়িয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন
আপনার মন্তব্য লিখুন

আপনার ইমেইল ঠিকানা প্রকাশিত হবে না।