স্কুল বন্ধ, তাই ঝুঁড়ি তৈরিতে ব্যস্ত উসিংথোয়াই মারমা

NewsDetails_01

করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ সবখানে। এসময়ে পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা কেউ কেউ ক্ষেতে খামারে, বাগানে কিংবা পাহাড়ের জুম চাষাবাদের কাজে মা-বাবাকে সহযোগিতা করছে। আর অনেকে পাড়ার মাঠে খোলামেলা খেলাধুলায় ব্যস্ত। গত রোববার ও সোমবার দুইদিন বেথেল পাড়া, চাইরাগ্র পাড়া, ছাইপো পাড়া ও সেঙ্গুম পাড়া সরে জমিনে ঘুরতে গিয়ে এসব দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে।

বান্দরবানের রুমায় পাইন্দু ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের পাহাড়ে অবস্থিত সেঙ্গুম পাড়া। এ সেঙ্গুম পাড়া উসিংথোয়াই মারমা এ বছরে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ওঠেছে। পাহাড়ি জুমচাষির মা বাবার এক মেয়ে দুই ছেলের মধ্যে সবার বড় সে।

তার এসময়ে ব্যস্থ থাকার কথা পড়ালেখা নিয়ে। তবে তার হাতে এখন খাতা কলম নয়। খালে বা ঝরনায় মাছ ধরতে বাঁশের ঝুড়ি বানাতে ব্যস্ত উসিংথোয়াই। তখন বাঁশ বেত তৈরি করা শেষ। ওই বেত দিয়ে বাঁশের থ্রোং বা ঝুঁড়ি বানাতে গিয়ে তলার অংশ শেষ করে ফেলেছে। এদিক-ওদিক দেখবার সুযোগ নেই তার। দৃঢ় মনোযোগ ঝুঁড়ি তৈরির কাজে।
এপ্রতিবেদক সামনে এগোতেই দেখতে যায়, ঘাম ঝড়ানো গাল, শ্যামলা রঙের মসৃন চেহারা।

উসিংথোয়াই মারমা বলেন, জানুয়ারী মাস শুরুতে রুমা বাজার আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে নতুন বইও পেয়েছে। রুমা বাজারের পার্শ্ববর্তী মায়ের এক আম্মীয়ের ভাড়া বাসায় থেকে পড়াশোনা করতে বাজারে নেমেছিল কয়েকদিন আগে।

NewsDetails_03

উসিংথোয়াই বলেন, স্কুলে নিয়মিত ক্লাসও হয়না। আবার বন্ধ দিয়েছে। কবে নাগাদ ভাল করে ক্লাস হবে জানিনা। স্কুল বন্ধ বলে বাড়িতে চলে যেতে বলেছে শিক্ষকেরা। তাই চলে আসছি শুক্রবার (২১ জানুয়ারী)।

উসিংথোয়াইযের ভাষ্য মতে, সেঙ্গুম পাড়ায় ১০-১২জন ছেলে মেয়ে আছে। তারাও সবাই পাড়ার বাইরে দুরে বিভিন্ন জায়গায় পড়ালেখা করছে। সবাই চলে আসছে বাড়িতে। এখন তারাও জুমে কাজ করে, কেউ কেউ গুলটি দিয়ে পাখি মারে। সে বলে আমি পাখি মারব না। মাছ ধরব, এজন্য মাছ ধরার ফাঁদ দিতে বাঁশের থ্রোং বা ঝুঁড়ি বানাইছি।
বাড়িতে আসলে পড় কিনা এ প্রশ্নে তার সাফ জবাব- না।

সে বলেন, পাড়াতে অন্য ছেলেরাও কেউ ঘরে পড়ালেখা করেনা। অন্যদের মত সেও সকালে দা নিয়ে জঙ্গলে গিয়ে বাঁশ দুইটি কেটে এনে সেটি বাঁশ থেকে বেত বের করেছি।

জানতে চাইলে উসিংথোয়াই মারমা বলেন, পড়ালেখা করে ডাক্তার হতে চাই। গত বছর পরীক্ষা ছাড়া পঞ্চম শ্রেণি হতে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ওঠেছিল। স্কুল বন্ধ থাকায় তার মোটেই ভাল লাগছে না বলে জানিয়েছে ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ুয়া ছাত্র উসিংথোয়াই।

সেঙ্গুম পাড়ার বাসিন্দা সাবেক মেম্বার মংশিংথোয়াই মারমা বলেন, করোনা কারণে স্কুল বন্ধ। এখন সব ছেলেমেয়ে বাড়িতে আছে। পড়ুয়া ছেলেমেয়ে গত প্রায় ৩ বছরে অনেকের বিয়েও হয়ে গেছে। অভিভাবকরা এখন খুবই চিন্তিত বলে জানিয়েছেন সাবেক মেম্বার মংশিংথোয়াই।

আরও পড়ুন